ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক

রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবলের চরম উত্তেজনা ও শিহরণের রেশ কাটতে না কাটতেই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে ট্রাম্প-পুতিনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকটি দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে বিশ্ববাসীর। উল্লেখ্য, স্থায়ুযুদ্ধের অবসানের পর আন্তর্জাতিক কয়েকটি অনুষ্ঠান ও সম্মেলনে দুই দেশের নেতাদের বেশ কয়েকবার দেখা-সাক্ষাত হলেও প্রায় এক দশক পর দুই পরাশক্তির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো এই প্রথম। তাও সেই সময়ে যখন দেড় বছরে দুই দেশের টানাপোড়েন চলেছে চরম মাত্রায়। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে রুশ গোয়েন্দা হস্তক্ষেপের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে মার্কিন মুল্লুকে। এই অভিযোগ ট্রাম্পের প্রধান প্রতিপক্ষ কেবল হিলারি ক্লিনটনের পক্ষ থেকেই উত্থাপিত হয়নি; বরং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, এফবিআইসহ নানা সংস্থা থেকেও উঠেছে। এ নিয়ে ব্যাপক তদন্তও চলেছে সে দেশে। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্্েরর একটি আদালতে রাশিয়ার ১২ জন সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অবশ্য ট্রাম্প বরাবরই তার নির্বাচনী প্রচারণায় কোন ধরনের রুশ হস্তক্ষেপ ও যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাই বলে ট্রাম্প কখনই রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনকে তার দেশের শত্রু বলতে দ্বিধাবোধ করেননি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত ট্রাম্প-পুতিনের দু’ঘণ্টাব্যাপী একান্ত বৈঠকে এর আদৌ কোন প্রতিফলন ঘটেনি। বরং পুতিন মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বরাবরের মতো এবারও অস্বীকার করেছেন এবং ট্রাম্প তাকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তার নির্বাচনী প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার কোন আঁতাতই হয়নি। বরং বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার যে তদন্ত করছেন তা হাস্যকর। এই তদন্ত রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্পের এহেন মন্তব্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্্েরর গোয়েন্দা দল, তদন্ত সংস্থাসহ রিপাবলিকান শিবিরও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ট্রাম্পকে সেদেশে এমনকি বিশ্বাসঘাতক ও দেশদ্রোহী বলে সমালোচনা করা হয়েছে। এর বাইরে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে পারমাণু নিরস্ত্রীকরণ, ইসরাইলের নিরাপত্তা ইস্যু, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ আলোচিত হয়, যা বিশ্বশান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হতে পারে যে, ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ করে ট্রাম্পের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এ বৈঠকের সাফল্য নিয়ে সংশয়-অবিশ্বাসও কিছু কম নেই। এর কারণ ট্রাম্পের ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তনসহ ওয়াশিংটন-মস্কো ব্যাপক মতপার্থক্য। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ‘পুতিন ভক্তি’ও কতদিন থাকে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইরান-ইরাক-সিরিয়া ইস্যুতে এই দুই প্রভাবশালী বিশ্বনেতা মতপার্থক্য কমিয়ে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে বিশ্ববাসী কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনসহ সুফল প্রত্যক্ষ করতেও পারে। বৈঠক শেষে দুই নেতাই বলেছেন, আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে এবং সবকিছুই ভালভাবেই এগিয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, স্থায়ুযুদ্ধ শেষ। এখন থেকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। দ্রষ্টব্য হলো, এ সময় পুতিন একটি ফুটবল উপহার দেন ট্রাম্পকে এবং তিনি সেটি হাসিমুখে ছুড়ে দেন ফার্স্টলেডি মেলানিয়াকে। এই সৌজন্য একটি সফল বৈঠকের উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বৈকি।
×