ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লব রেজা

তুরস্কে নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১৮ জুলাই ২০১৮

তুরস্কে নতুন যুগের সূচনা

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে সোমবার শপথ নিয়েছেন দেশটির জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির নেতা রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। জাতীয় সংসদে তার এ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিপূর্ণ প্রেসিডেনসিয়াল ব্যবস্থা চালু হলো। গত ২৪ জুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন এরদোগান। ২০১৪ সাল থেকেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তবে প্রথম মেয়াদের সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদের বিস্তর তফাত রয়েছে। নতুন মেয়াদে এরদোগান পেয়েছেন নিরঙ্কুশ নির্বাহী ক্ষমতা। গত বছর অনুষ্ঠিত এক গণভোটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দেয় দেশটির জনগণ। এর ফলে তুরস্কে আর প্রধানমন্ত্রীর পদ থাকছে না। প্রেসিডেন্ট নিজেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে সংসদেরও অনুমতি লাগবে না। তিনি চাইলেই যে কোন সময় যে কাউকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারবেন। এ ছাড়া আরও অনেক ক্ষমতা ভোগ করবেন তিনি। এর আগে যেসব ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের ছিল না। শনিবার এরদোগান জানান, শপথ নেয়ার পর রাতে মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করবেন তিনি। আগামী শুক্রবার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে বসবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন। এরদোগানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর তুরস্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করল। তবে তার এই নতুন যুগ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। তারা বলছে, নিরঙ্কুশ নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় এরদোগান ক্রমেই স্বৈরশাসকে পরিণত হতে পারেন। শপথ অনুষ্ঠানে পুলিশ, সেনা সদস্য, বিচারক, শিক্ষক ও অন্য সরকারী কর্মচারীরাসহ অন্তত ১৮ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রচারভিযানে অত্যন্ত শক্তিশালী এরদোগান সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ও বিভেদ সৃষ্টিকারী তুরস্কের নেতা। স্থানীয়, সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো ডজনখানেক নির্বাচনে জয়লাভের উজ্জ্বল অতীত রয়েছে তার। গত সপ্তাহের শেষে এরদোগান বলেন, ‘সোমবারের শপথ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তুরস্ক একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। নতুন প্রেসিডেনশিয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা দ্রুত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পারব।’ এরদোগান বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় একে পার্টির সদস্য ভিন্ন অন্যদের অন্তর্ভুক্তি বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করবে এবং এতে মন্ত্রীরা স্বজনপ্রীতি ছাড়াই স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারবেন। এর ফলে কেউ মন্ত্রীদের তাদের নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না, কিংবা সরাসরি তাদের কোন কিছু করার নির্দেশ দিতে সক্ষম হবে না। নতুন সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রীর সব ক্ষমতা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ওপর স্থানান্তরিত হবে, যিনি নির্বাহী শাখার নেতৃত্ব দেবেন। নতুন সিস্টেমে একে পার্টির নেতা হবেন সরকারের প্রধান।’ তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ১৮ হাজার ৬৩২ সরকারী কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। রবিবার ওই কর্মকর্তাদের বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ ছাড়া দেশটির তিনটি সংবাদপত্র, একটি টেলিভিশন চ্যানেল ও ১২টি সংগঠন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে এরদোগানের শপথ গ্রহণের একদিন আগে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। দু-একদিনের মধ্যে জরুরী অবস্থা তুলে নেয়া হতে পারে বলেও খবর বেরিয়েছে। এ কারণে এটি সর্বশেষ গণবহিষ্কারাদেশও হতে পারে। ২০১৬ সালে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে জরুরী অবস্থা জারি রয়েছে। গত দেড় দশকে ১৪টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এরদোগান। প্রতিটিতেই জয় পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ৬টি পার্লামেন্ট নির্বাচন, ৩টি গণভোট, ৩টি স্থানীয় নির্বাচন ও দুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তুরস্কসহ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে জনপ্রিয় নেতাদের একজন এরদোগান। ১৯৫৪ সালে ইস্তানবুলের কাশিমপাশায় জন্ম নেয়া এরদোগান ছোটবেলা থেকেই বাস্তবমুখী মানসিকতার। বাবা ছিলেন তুর্কী কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন। পরিবারে সচ্ছলতা থাকলেও তরুণ এরদোগান নিজের খরচ চালানোর জন্য লেবুর শরবত ও তিলের রুটি বিক্রি করেন। মারমারা ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসনে পড়ার সময় ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। যোগ দেন কমিউনিজম বিরোধী ন্যাশনাল টার্কিস স্টুডেন্ট ইউনিয়নে।
×