ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপজয়ী বীরদের লালগালিচা সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৮ জুলাই ২০১৮

বিশ্বকাপজয়ী বীরদের লালগালিচা সংবর্ধনা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপজয়ী বীরদের বরণ করে নিল ফ্রান্স। এ্যান্টনি গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপে, পল পগবাদের লাল গালিচা সংবর্ধনা দিল প্যারিসবাসী। রবিবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর পর বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধার করে ফ্রান্স। রবিবার ট্রফিজয়ের পর সোমবার বিকেলেই বিশেষ বিমানে করে রাশিয়া থেকে প্যারিসে পৌঁছায় চ্যাম্পিয়নরা। এ সময় গ্রিজম্যানদের সঙ্গে ছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশম এবং কর্মকর্তারা। আর ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফেরেন অন্য একটি বিমানে। বিশ্বজয়ী ফুটবলারদের অভ্যর্থনা জানাতে প্যারিসে যে উন্মাদনা তৈরি হয় তা সত্যিই অসাধারণ। অধিনায়ক হুগো লরিস বিশ্বকাপ ট্রফিটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসেন বিমানের দরজা দিয়ে। বেরিয়েই বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরেন দেশবাসীর প্রতি। গোটা বিশ্বকেই যেন জানিয়ে দেন, ‘দেখো আমরাই চ্যাম্পিয়ন।’ রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই ফ্রান্সের সমর্থকদের উল্লাস-উচ্ছ্বাস থামায় কে? এরপর তারা অপেক্ষা করেন জাতীয় বীরদের দেশে ফেরার জন্য। প্রিয় দল এবং ফুটবলারদের বরণ করে নিতে বিমানবন্দরে ভিড় করেন ভক্তরা। উড়োজাহাজ থেকে নামার পর এমবাপে-গ্রিজম্যানরা লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে আসেন। এর আগে বিশ্বকাপ জয়ী নায়কদের দেশে ফেরার উপলক্ষে ফ্রান্স তাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাস স্টপেজ এবং স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে। ফ্রান্স দলের কোচ এবং ফুটবলারের নামে নামকরণ করেছে সেগুলোর। ফ্রান্স দলের ডাকনাম ‘দ্য ব্লুজ’ নামেও দেয়া হয়েছে স্টেশনের নাম। ফ্রান্স দল প্লেন থেকে নামলে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে খেলোয়াড়দের নাম ধরে স্লোগান দেন ভক্তরা। ফুটবলারদের বিশ্বকাপ জয় করে দেশে ফেরার এই মুহূর্ত ভিডিও ধারণ করে নেন সমর্থকরা। এর আগে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জয় করার পরপরই প্যারিসের রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। তার সঙ্গে যোগ হয় বিভিন্ন রংয়ের চোখ ধাঁধানো আলো। আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস করেন তারা। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। পগবা-গ্রিজম্যান-এমবাপেদের অভ্যর্থনা জানাতে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার এবং এলিসি প্রাসাদের সামনে জড়ো হয় ৫ লাখেরও বেশি সমর্থক। তারা প্রথমে জড়ো হয়েছিল বিমানবন্দরের সামনে। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে পরে তারা অবস্থান নেয় এলিসি প্রাসাদ এবং আইফেল টাওয়ারের সামনে। চ্যাম্পস এলিসি এভিনিউয়ে লাখ লাখ মানুষের বিশাল এ জনসমাবেশের সামনে দিয়েই ছাদ খোলা বাসে করে ট্রফি নিয়ে উল্লাসে ভক্তদের সমর্থনের জবাব দিতে থাকেন বিশ্বজয়ী ফুটবলাররা। দেশবাসীর বীরোচিত সংবর্ধনার জবাব এরচেয়ে ভাল আর কি হতে পারে। নীল-সাদা এবং লাল। তিন রংয়ের জাতীয় পতাকা নিয়ে রাতভর প্যারিসের রাস্তায় উল্লাস করে ফ্রান্সের মানুষ। কেউ কেউ গাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়। হর্ন বাজিয়ে মুখোরিত করে তোলেন রাজপথ। আইফেল টাওয়ারের চারপাশ সমর্থকদের ভিড়ে গমগম করে। রাইন নদীর তীরে রাতভর চিৎকার চেঁচামেচি করেন ফরাসীরা। বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলে কথা। ষষ্ঠ দেশ হিসেবে কমপক্ষে দুটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের এলিট ক্লাবে উঠে গেছে জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরিরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে ছিল কয়েকটি নাম। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি এবং ফ্রান্স। গ্রুপপর্বের শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচেই বারুদ ছড়িয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপ। গ্রুপপর্বেই জার্মানির বিদায়, দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে স্পেন, আর্জেন্টিনা এবং কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলের বিদায় বিশ্বকাপকে অনেকটাই প্রাণহীন করে দিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে ফরাসী সৌরভ ছড়িয়ে যখন গ্রিজম্যান-এমবাপেরা বিশ্বকাপের ট্রফিটা হাতে তুলে নিলেন তখন আরও একবার প্রমাণ হলো, ট্যালেন্ট ইজ টেম্পোরারি এ্যান্ড ক্লাস ইজ পারমানেন্ট। বিশ্বকাপ ফাইনালের চাপ ধরে রেখে, স্নায়ু শক্ত রেখে ম্যাচটা বের করে আনার মতো ক্ষমতা এবং যোগ্যতা ছিল কেবল ফ্রান্সেরই। ক্রোয়েশিয়া হয়তো কিছু প্রতিভা দিয়ে আবেগ তৈরি করতে পেরেছিল। মাঠের খেলায়ও বেশ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিল; কিন্তু দিন শেষে বিশ্বজয়ীর নাম ফ্রান্স। ফেবারিটের মতোই জেতে ফরাসীরা। বিশ্বকাপে খেলতে রাশিয়ায় এসেছিল ৩২টি দল। সবার লক্ষ্য ছিল একটাই, সোনালী ট্রফি। আর শেষ পর্যন্ত সেই সেরার মুকুট উঠেছে এমবাপে-গ্রিজম্যানদের মাথায়। খেলার পরে লুঝনিকি স্টেডিয়ামেই হয়ে যায় একদফা উৎসব। প্যারিস হয়ে সেটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ফ্রান্সজুড়ে।
×