ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাক চাপায় নিহত মায়ের কোলে শিশু অক্ষত

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৮ জুলাই ২০১৮

ট্রাক চাপায় নিহত মায়ের কোলে শিশু অক্ষত

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বুকে আগলে রেখে সন্তানকে বাঁচিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মা। তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। কোমলমতি শিশুদের মায়ের যতেœ অক্ষরজ্ঞান শিখিয়েছেন। সেই শিশুদের ন্যায় এক শিশু মিথিলাকে বাঁচিয়ে রেখে তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ওসময় তার কাছে নিজের জীবনের চেয়ে সন্তানের জীবনের স্বার্থটাই মুখ্য। সোমবার বাঁশভর্তি ট্রাকের নিচ থেকে এক এক করে বের করা হয়েছে ৪টি মৃতদেহ। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, একজন মৃত মহিলার বুকে জড়ানো তিন বছর বয়সের এক শিশুকে অক্ষত অবস্থায় বের করে আনা হয়েছে। জানা যায়, রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া বাঁশবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে অপর তিনজনের সঙ্গে নিহত হয়েছে এনজিও কর্মী রোজিনা আক্তার (২৫)। গর্ভধারিনী মা রোজিনা মারা গেলেও বুকে আগলে রেখে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখেছেন তার শিশুকন্যা মিথিলাকে। প্রায় নয় হাজারের বেশি বাঁশের নিচে পড়ে রোজিনা তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে সন্তানের গায়ে বিন্দু পরিমাণও আঁচড় লাগতে দেননি। মৃতদেহ উদ্ধারের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা ভেবেছিলেন, নিহত মহিলার বুকে আগলে রাখা শিশুটিও মৃত। কিন্তু না। মায়ের বুক থেকে বের করে দেখা যায় ওই শিশু সম্পূর্ণ অক্ষত। প্রবাদ আছে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’। এ ঘটনাটি প্রত্যক্ষদর্শীদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। উখিয়ার বালুখালী পানবাজার এলাকা পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা মনজুর আলমের স্ত্রী রোজিনা আক্তার। তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান অলৌকিকভাবে ঁেবচে যাওয়া নিষ্পাপ শিশু এই মিথিলা (৩)। নিহত শিক্ষিকা রোজিনার স্বামী মনজুর আলম জানান, প্রতিদিনের ন্যায় রোজিনা কর্ম এলাকা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাচ্ছিল। কন্যা শিশুকে বাড়িতে দেখাশোনা করার কেউ না থাকায় মিথিলাকেও কর্মস্থলে নিয়ে যেত। সন্তানকে রোহিঙ্গা শিবিরে স্থাপিত ফ্রেন্ডলি সেন্টারে রেখে নিজের কাজ করত রোজিনা। নিহত রোজিনার মেয়ে মিথিলা মাকে যে আর কখনও দেখবে না, মায়ের আদর পাবে না ও মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দেবে না ইত্যাদি বুঝে উঠতে পারছে না। তবে ঘটনার পর থেকেই বারবার ভয়ে কেঁপে উঠছে শিশুটি। রোজিনার মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। উল্লেখ্য উখিয়ার বালুখালীতে বাঁশ বোঝাই ট্রাক উল্টে সোমবার সকালে রোহিঙ্গাসহ চারজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে চালকসহ অন্তত ১০ যাত্রী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহের জন্য বাঁশ নিয়ে যাবার সময় উখিয়ারঘাট বালুখালী কাস্টম এলাকায় পৌঁছে উল্টে যায় বাঁশভর্তি ট্রাকটি। এ সময় ২টি সিএনজি ও ৩টি টমটম বাঁশের নিচে চাপা পড়ে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছে স্থানীয় পশ্চিমপাড়ার মঞ্জুর আলমের স্ত্রী এনজিও কর্মী রোজিনা আক্তার (২৫), বালুখালী ব্লক নং ৮এর রোহিঙ্গা মাহামদুর রহমান প্রকাশ সহিদুর রহমানের স্ত্রী নুর কায়াস (২৫) টেকনাফের আলীখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত আব্দুল হামিদের স্ত্রী তসরিম আক্তার (২০) ও তার ২৭দিন বয়সের শিশু মোশারফা আক্তার। গুরুতর আহত হয়েছে হলদিয়া পালং এলাকার হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ নাইট্যংপাড়ার ফাতেমা বেগম, বালুখালী গ্রামের হামিদুর রহমান ও একই গ্রামের আনোয়ারা বেগম। এ ঘটনায় মা মারা গেলেও মায়ের বুকে আগলে রাখা তিন বছরের শিশু কন্যা অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায়। এনজিও মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, রোজিনা মুক্তির মাঠ পর্যায়ে দক্ষ কর্মী ছিলেন। তার কাছ থেকে কোন সময় কাজে ফাঁকি দেয়ার অভ্যাস দেখা যায়নি। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, রেখে গেছেন তিন বছরের ছোট শিশু কন্যা। ওই শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এনজিও মুক্তি কর্তৃপক্ষ আর্থিক সহায়তা স্বরূপ একটি ফান্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ওই অনুদান শিশুটির পড়ালেখা থেকে শুরু করে ভবিষ্যত গড়ে উঠার পক্ষে সহায়ক হবে।
×