ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মান্নার মতে বছরে ১ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৮ জুলাই ২০১৮

মান্নার মতে বছরে ১ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বগ্রাসী দুর্নীতি শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেই নয়, বেসরকারী সেক্টরেও ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশ থেকে এখন বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, মানুষকে দুর্নীতি নিয়ে যথেষ্ট তথ্য দিতে হবে এবং এর মাধ্যমে মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। মানুষের এই সচেতনতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রণোদনা যোগাবে উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত ‘ক্যাম্পেন এগেইনস্ট স্টেট করাপশন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ তোলেন। বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে চলে যাওয়া টাকা শেষ পর্যন্ত দেশে না থেকে পাচার হয়ে যায়। পাচারের অঙ্কটি এখন বছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রান্তিক দুর্নীতির সরাসরি ভুক্তভোগী। দেশে দুর্নীতি কতটা বীভৎস পর্যায়ে চলে গেছে সেটা তারা অনেকেই জানে না। এই রাষ্ট্রের কাছ থেকে শিক্ষা-স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ অন্য খাতে তাদের যা যা প্রাপ্য সেসব তারা পায় না সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণেই। তিনি বলেন, জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার দাবি করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান আমাদের ভিন্ন গল্প বলে। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্যমতে, ২০০৫ থেকে ২০১৪-এই দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে কমপক্ষে ৬ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০১৪ সালে হয়েছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে ২০১৪ সালকে ভিত্তি ধরে এটা যৌক্তিকভাবে অনুমান করাই যায়। তিনি বলেন, মানুষকে দুর্নীতি নিয়ে যথেষ্ট তথ্য দিতে হবে এবং এর মাধ্যমে মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। মানুষের এই সচেতনতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রণোদনা যোগাবে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। তাই ক্যাম্পেনের জন্য যতগুলো মাধ্যমে সম্ভব আমরা প্রচার চালিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের দুর্নীতি এতটাই সর্বগ্রাসী যে শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেই না, ছড়িয়ে পড়েছে বেসরকারী সেক্টরেও। তিনি তথ্য উল্লেখ করে বলেন, দেশে বর্তমানে সাধারণ একটি চাকরি পেতে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ঘুষ লাগে। মেগা প্রকল্প বাদেই দেশে প্রতি বছর দুর্নীতি হয় কমপক্ষে ৭৫ হাজার কোটি টাকার। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর বাজেট এখন ৪০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে। ভারতের ৯.১৫ কিলোমিটার ভুপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণে যেখানে নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, সেখানে ৯.১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সারাবিশ্বে প্রতি কিলোমিটার রেললাইনের খরচ ১২ থেকে ৩০ কোটি টাকা। অথচ ঢাকা পায়রা বন্দর রেললাইনে খরচ হচ্ছে কিলোমিটার প্রতি আড়াইশ’ কোটি টাকা। সেতু, রেললাইন, সড়ক, ফ্লাইওভার সব কিছুতে ব্যয় বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ, জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। ব্যাংককে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এর বিরুদ্ধে এখন সচেতনতা গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন-গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।
×