ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

কেউ গুম হচ্ছে না, প্রেমের টানে বা ব্যর্থ হয়ে পালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৮ জুলাই ২০১৮

কেউ গুম হচ্ছে না, প্রেমের টানে বা ব্যর্থ হয়ে পালাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুম সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এদুটো বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেছেন, দেশে কোন বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটছে না। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা দুটি মনের মিলনে উড়াল দিচ্ছে, আর বলা হচ্ছে গুম। এমন গুম হওয়াদের বের করবেন কী করে? অধিকাংশ গুমই এ রকম। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাম্প্রতিক বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, মাদক অভিযানে একরামুল হত্যা, রোহিঙ্গা সংকট, খালেদার অসুস্থতা, বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ফিরিয়ে আনা, চলমান কোটা আন্দোলন, ডিআইজি মিজান ও অন্যান্য ইস্যুতে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের টার্গেট হবার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের সহজ টার্গেট হবে এই রোহিঙ্গারা, এটা আমি সবসময় বলে আসছি। আমি জাতিসংঘে বলে এসেছি। সেখানে আমি বলে এসেছি যে টেররিস্টদের সহজ আস্তানা হতে পারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, আপনারা ব্যবস্থা নিন। এরা আমাদের নজরদারিতে আছে, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব এনজিও এদের (জঙ্গীদের) সহযোগিতা করছে তাদের আমরা ব্ল্যাকলিস্টেড করে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা) এর অভিবাসন বিষয়ক প্রধান যখন এসেছিলেন, তখন বলেছিলাম আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী যেই শিকারটি খুঁজছে তারা হয়তো এখানে পেয়ে যাবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করছে। তারপরও এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হবে। এজন্য আমি মিয়ানমারে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে সবকিছুই আলোচনা হয়েছে। তখনই আমার সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে যে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছিলেনÑ সেগুলোর আলোকে তাদের যদি পুনর্বাসন না করা যায় তাহলে হয়তো তারা ফেরত যাবে না। তাদের দুর্বিষহ জীবনে যদি গ্যারান্টি না থাকে- তাহলে তারা কীভাবে যাবে? মিয়ানমারের শীর্ষ নেতারা সবসময় বলে যাচ্ছেন তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নেয়ার কোন চিহ্ন আমরা দেখলাম না। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হয়েছে। এমন কোন নতুন রোগে আক্রান্ত হননি যে জন্য তিনি গুরুতর অবস্থায় আছেন। জেলকোড অনুযায়ী যদি আরও কোন ব্যবস্থা নেয়ার থাকে তা গ্রহণ করা হবে। সরকারী ব্যবস্থাপনার বাইরে তিনি অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে চাইলে সে ব্যবস্থা করা কঠিন। সুতরাং তিনি গুরুতর অসুস্থ পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সে অভিযোগ সঠিক নয়। তাকে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তিনি আর সেখানে যাবেন না। পরে আমরা সিএমএইচে নেয়ার কথা বলেছি, তিনি সেখানেও যাবেন না। যেখানে প্রধানমন্ত্রীও অসুস্থবোধ করলে সিএমএইচে যান, সেখানেও (সিএমএইচ) যদি তিনি না যান, তবে অন্য কোথাও চিকিৎসার জন্য নেয়াটা কঠিন। সরকারীভাবে তার জন্য যা যা করার আমরা তা গ্রহণ করেছি। তার যেসব ডাক্তার সেবা দিয়ে থাকেন তারা সার্বক্ষণিক দেখছেন। প্রয়োজন হলে তারা আবার দেখবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা বা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় দুই শতাধিক মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে পুলিশের যেসব সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হছে। প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। প্রমাণের ভিত্তিতে সাসপে- হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২/৩ জনকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যও অপরাধ করলে পার পাচ্ছেন না। দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরাও বাদ যাবেন না। তবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পান সে জন্য সময় লাগছে। বিভাগীয় তদন্তও চলছে। তদন্তে মাদকে জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণ মিললে ছাড় দেয়া হবে না। পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা কমন পড়ছে তাদের ধরা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এ যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে। সে জন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একরামের পরিবারের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। ঘটনার তদšত চলছে। আর র‌্যাব সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্তের অংশ। তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয় তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট করে বিদেশ চলে যাচ্ছেÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ পুরান। তবে নজরদারি রাখা হচেছ। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কারো কাছে পাসপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীর শিকার না হয় সে জন্য চেষ্টা চলছে। ভারতসহ সবাই এ ব্যাপারে সোচ্চার। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনীরা পালিয়ে আছে খবর আসে। তাদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। আইনমন্ত্রীর অধীনে একটি কমিটি কাজ করছে। সেখানে আমি ও পররাষ্ট্রমেন্ত্রী সদস্য। কে কোথায় সেসব দেশের আইন ও দেশীয় আইন মিলে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও হামলায় জড়িতদের ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ডাক না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ যায় না। ভুলে যান কেন? কারা কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বাসভবনে হামলা করেছে। ভাঙচুর হয়েছে। ফুটেজ দেখে ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরা হচ্ছে। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, যে অন্যায় করবে তার বিচার হতেই হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। অভিযোগ ওঠার পর তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত যাতে নির্ভুল হয় সেজন্য সময়ক্ষেপণ হচেছ। এ কথা বলতে পারি, তদšেতর রুট অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে যদি বিচারিক ব্যবস্থারও প্রয়োজন হয় খুব শিগগিরি তা নেয়া হবে। এখানে জোর গলায় বলতে পারি, কোউকে ছাড় দিচ্ছি না।
×