ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে আওয়ামী লীগের উন্নয়নে পিছিয়ে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৮ জুলাই ২০১৮

বরিশালে আওয়ামী লীগের উন্নয়নে পিছিয়ে বিএনপি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশনে গত তিনটি পরিষদে ভোটে নির্বাচিত তিন মেয়রের মধ্যে দুইজন ছিলেন বিএনপি আর একজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তারা প্রত্যেকেই একবার করে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বিএনপি সমর্থিত ওই দুই মেয়রকে পেছনে ফেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত দ্বিতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন বরিশাল মহানগরীর সর্বাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। হিরনের উন্নয়নে ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রথম নির্বাচিত ও আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এবং তৃতীয় পরিষদে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত (বর্তমান) মেয়র আহসান হাবিব কামাল। এরমধ্যে বিএনপির মেয়রের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। বর্তমান সিটি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলেও বরিশাল মহানগরীর ৩০ ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটাররা প্রতীক না দেখে উন্নয়নের পক্ষে নাকি দুর্নীতির পক্ষে ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে রায় দেবেন তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের দায়িত্বকালে নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পের নিজ ঘোষিত বাজেটের শতকরা ৪৩.০১% বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর নগরীর উন্নয়নে নিজ নিজ ঘোষিত বাজেটের মধ্যে সিটির প্রথম মেয়র (বর্তমানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী) মজিবর রহমান সরোয়ার শতকরা ২৪.২৬% এবং আহসান হাবিব কমাল শতকরা ৩৭.৭১% বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। চতুর্থ পরিষদের নির্বাচনে (বর্তমানে) বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার তার নিজ ঘোষিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তিন মেয়রের মধ্যে সর্বশেষে অবস্থান করছেন। আর নিজ ঘোষিত সর্বাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে প্রথমস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও দ্বিতীয় অবস্থানে আহসান হাবিব কামাল। তবে বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আহসান হবিব কামাল কাগজে কলমে সর্বোচ্চ বাজেট বাস্তবায়ন করলেও অব্যবস্থাপনার কারণে কাক্সিক্ষত নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গোটা নগরবাসী। প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলেনি প্রাপ্তি ॥ বিসিসির চতুর্থ পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করেছেন সচেতন নগরবাসী। সর্বশেষ তৃতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু ছিল আর কতখানি বা পূরণ হয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নগরবাসীর দুর্ভোগের নানান চিত্র। সনাকের সভাপতি গাজী জাহিদের মতে, প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল নগরী আজ ময়লার ভাগাড়ের পাশাপাশি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। সংস্কারের অভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এসব সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কোন ভূমিকা নেই। অথচ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি দলীয় মেয়রের কাছে নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশা ছিল। সে অনুযায়ী কোন প্রাপ্তি মেলেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান ও অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচনে প্রতীক না দেখে যে প্রার্থী উন্নয়ননে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে সেই সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই নগরবাসী বেছে নেবেন। নির্বাচিত তিন মেয়রের বাজেট ॥ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে সর্বমোট ১৫টি বাজেট ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে পৃথকভাবে চারটি করে আটটি বাজেট ঘোষণা করেন বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত দুই মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার ও আহসান হাবিব কামাল। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র শওকত হোসেন হিরন মাত্র চারটি বাজেট ঘোষণা করেন। বাকি তিনটির মধ্যে দুইটি বাজেট ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র বিএনপি নেতা আওলাদ হোসেন দিলু ও একটি আলতাফ মাহমুদ সিকদার। সাদিক আব্দুল্লাহর গণসংযোগ ॥ আষাঢ়ের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর কাঠফাটা রৌদ্র মাথায় উপেক্ষা করে বিরামহীনভাবে নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি পেরিয়ে ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করেছেন বরিশালে প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তরুণ নেতা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তিনি তার প্রচারে বিগতদিনের নির্বাচনের প্রার্থীদের ছাড়িয়ে নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বরিশালের মানুষ উন্নয়নের বিশ্বাসী। অতীতে সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মতো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নগরবাসী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে। বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে কেন্দ্রীয় নেতা ॥ শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সমর্থনে মঙ্গলবার লেবার পার্টির আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন বরিশালে যা বলে গেছেন আমরা তাদের বিশ্বাস করে বলছি, আমরাও চাই নির্বাচনে তাদের কথার বাস্তবায়ন হোক। বরিশালে সুষ্ঠু ভোট হলে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বিজয়ী হবেন। লেবার পার্টির মহানগর সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক রাজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বরিশাল হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। এখানে কোন ধরনের ডিজিটাল কারচুপির চেষ্টা করা হলে তাৎক্ষণিক তার প্রতিবাদ করা হবে। সভা শেষে নজরুল ইসলাম খান জোটের নেতাকর্মীদের নিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ারের সমর্থনে নগরীতে গণসংযোগ করেন। বরিশালে কোন কেন্দ্র বন্ধ করতে চাই না ॥ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, প্রার্থীদের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের আশ্বস্ত করবেন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ১৬ জুলাই বিকেলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ২৭ জুলাই নগরী ছাড়তে হবে বহিরাগতদের ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৭ জুলাই দিবাগত রাত ১২টার আগে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। ভোটার ব্যতিত অন্যকোন এলাকার বাসিন্দা কর্পোরেশনের সীমানার ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন না। বহিরাগতদের ভোট এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা ইতোমধ্যে প্রচার করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
×