ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম

কোটা সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ ১৪ দলের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৮ জুলাই ২০১৮

কোটা সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ ১৪ দলের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কোটা পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দেয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোট ১৪ দলীয় জোট। কমিটিকে অনুরোধ জানিয়ে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, চৌদ্দ দলের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ দ্রুত আপনাদের কাজটি শেষ করে দ্রুততার সঙ্গে প্রতিবেদন দেন। যাতে কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে, কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে। বিষয়টি যত দেরি হবে, মতলববাজরা ততই পানি ঘোলা করার চক্রান্ত করবে। মঙ্গলবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রেস ব্রিফিংকালে এ অনুরোধ জানান। আগামী নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হবে। উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তির স্বার্থে দেশের জনগণ নৌকার বিজয়ী নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, দেশ সার্বিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই। দেশের অগ্রযাত্রা ধরে রাখার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত দেশ গড়তে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। বৈঠক থেকে আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের ১৪ দলের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা হয়। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে আগেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সমর্থন জানানো হয়েছে। তাদের নির্বাচনী প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে তিনটি পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে। সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপির নেতৃত্বে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ২১ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উন্নয়ন ও অর্জনের যে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে তাতে অংশ নেবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হবে। আমরা আশা করি, দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। এমনকি বিএনপি নির্বাচনে আসুক সেটাও আমরা চাই। কাউকে নির্বাচন থেকে সরানোর কোন চিন্তা আমাদের নেই। আমরা চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয় আসুক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারা এখনও চক্রান্ত করছে নির্বাচনকে ভ-ুল করার জন্য। তবে গত জাতীয় নির্বাচনে আমরা দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যেভাবে বিএনপি- জামায়াতের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করেছিলাম আগামী নির্বাচনেও সেভাবে তাদের যে কোন চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, সংবিধানেই আছে কীভাবে নির্বাচন হবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়, একইভাবে আমাদের দেশেও শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তাই আমরা বলব, কোন ধরনের চক্রান্ত না করে নির্বাচনে আসুন, জনগণের রায় গ্রহণ করুন। নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কোন রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, এটা তাদের বিষয়। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোন আলোচনা হয়নি। তাদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে ভবিষ্যতেও কোন আলোচনার প্রশ্নই আসে না। কারণ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশা করছি। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে একটি মহল একের পর এক চক্রান্ত করছে। কোন ইস্যু না পেয়ে কোটা সংস্কার ইস্যু নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারুণ্যকে উৎসাহিত করার জন্য কোটার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন, এটা আপনারা জানেন। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু একটি পর্যায়ে সংসদে বলেছিলেন কোটা রাখবেন না। তারপরও তিনি একটি কমিটি করে দিয়েছেন কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কাজ করছে। তিনি বলেন, কোটা সিস্টেম আমাদের সংবিধানে আছে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি অনগ্রসর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কেবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে, আপনারা ধৈর্য ধরুন। দীর্ঘদিনের একটা সিস্টেমকে বদল করে আনতে একটু সময় লাগে। তবে শেখ হাসিনার ওপর আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান চাই। আমরা আশা করি সমাধান পেয়ে যাব। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা হবে বলেও জানান তিনি। জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শুরুতেই অসুস্থ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডাঃ অসিত বরণ রায়, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সাত্তার, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
×