ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণ আত্মসাতের আশঙ্কায় দেশজুড়ে হৈচৈ

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের চাবি খোয়া

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৮ জুলাই ২০১৮

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের চাবি খোয়া

ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরীতে জগন্নাথ দেবের যে মন্দির আছে- তা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ভক্তদের মনে ভক্তি ও শ্রদ্ধার আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে প্রবল বিশ্বাস, পুরীর মন্দির দর্শনে যে কোন মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই এই মন্দিরে আগত ভক্তদের প্রদত্ত ধন সম্পদ যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হতে হতে বিশাল স্তূপে পরিণত হয়েছে। এসব সম্পদের মধ্যে স্বর্ণ-রৌপ্যের অলঙ্কার ছাড়াও অনেক অমূল্য প্রতœ সামগ্রীও রয়েছে। প্রাপ্ত এক তথ্যসূত্রে জানা গেছে যে, দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত পুরীর এই জগন্নাথ মন্দিরে কত রাজা, মহারাজা ও রাজ মহিষী যে তাদের ধনরতœ দান করে গেছেন তার কোন সঠিক হিসেব নেই। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল তাদের এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে যে, এই মন্দিরে কেবল স্বর্ণের মজুদই রয়েছে ৮৮ লাখ পাউন্ড বর্তমান বাজার দরে যার মূল্য আনুমানিক ১৬০ বিলিয়ন ডলার। তবে আশ্চর্যের বিষয়, মানুষের অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধার সুযোগ নিয়ে ভারতের অন্যান্য দেবালয় ও বিগ্রহের মতো জগন্নাথ মন্দিরের ধন রত্ন চুরি ও আত্মসাত করার জন্য দুষ্কৃতকারীরাও কম সক্রিয় নয়। তারা সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে এসব ধনরতœ হাতিয়ে নেয়ার কাজে সক্রিয় থাকে। এ ক্ষেত্রে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে যে, এসব তস্করদের সঙ্গে মন্দিরের পুরোহিত, সেবায়েত ও প্রশাসনের একটি অংশ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকে। এই চক্র মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন দুর্বলভাবে বিন্যস্ত করে যে, বিভিন্ন মন্দিরে অহরহ চৌর্য্যবৃত্তি ঘটলেও কখনই তার কোন সুরাহা হয় না। এ ধরনের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম হয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রতœ ভা-ারকে ঘিরে। গত এপ্রিলে মন্দিরে গচ্ছিত ধনরত্নের সর্বশেষ অবস্থা জানার জানার জন্য পুরোহিত সরকারী কর্মকর্তা ও প্রতœতত্ববিদসহ মোট ১৬ জনের একটি দল মেটাল ডিটেকটরের প্রবেশ পথ দিয়ে কৃষ্ণবর্ণের ভল্ট বা রতœ গুহায় প্রবেশ করে। প্রায় ত্রিশ বছর এই রতœ গহ্বরের দরজা খোলা হয়নি-তাই অবরুদ্ধ ভল্টের বিষাক্ত গ্যাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ষোল জন পরিদর্শকের প্রত্যেকেই অক্সিজেন মাস্ক ব্যবহার করেন। যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত প্রভূত ধনরতœ দেখার সুযোগ পেয়েও পরিদর্শনকারীরা খুব অল্প সময়ই রতœ ভা-ারে অবস্থান করেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা বাইরে এসে উৎসুক পুণ্যার্থীদের জানান যে, তারা রতœ ভা-ারের একেবারে ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি বরং বাইরে থেকে ধাতব গেটের ভেতর দিয়ে যা দেখতে পেয়েছেন-তাতে মনে হয়েছে যে ভেতরে রক্ষিত ধনসম্পদ সুরক্ষিতই আছে। তাদের কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণ আশ্বস্ত হলেও দুই মাস পরে আসল ঘটনার কথা প্রকাশ পেলে সর্বত্র হৈ চৈ পড়ে যায়। স্থানীয় এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, পরিদর্শক দলের ১৬ জনের কেউই রতœ ভা-ারের কাছেও যেতে পারে নি- কারণ রত্ন ভাণ্ডারের চাবি খোয়া গেছে। তীব্র জনরোষের ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্দিরের শীর্ষ প্রশাসককে বরখাস্ত করা হয় এবং উড়িষ্যার রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সন্দ্বীপ সাহু বলেন, ভারতজুড়েই মন্দির ও বিগ্রহের ধনরতœ চুরির লক্ষ্যে এক দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে। এই দুষ্টচক্রের সঙ্গে মন্দিরের সেবায়েত পুরোহিত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। ভারতের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসব দুর্লভ স্বর্ণালঙ্কার ও প্রতœততœ সামগ্রী পাচার করে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে সুভাষ কাপুর নামে এক ভারতীয় যুবক ব্যবসা খুলে বসেছেন। মন্দিরের বিগ্রহ রতœ চুরির এই ব্যবসায় সুভাষ কাপুর ইতোমধ্যেই প্রায় দশ কোটি ডলার মুনাফা করেছেন। এছাড়াও মন্দিরের পুণ্যার্থীদের দান করা প্রায় চার কেজি স্বর্ণের হদিস ও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এসব স্বর্ণ মন্দির প্রশাসনের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ নিয়ে কোন সদুত্তর দিতে না পারায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন। কারণ মন্দিরের আয় ব্যয় ও সব ধরনের অর্থাগমের খবর তারা ছাড়া আর কারোর জানার কথা নয়। এ প্রসঙ্গে উড়িষ্যা হাইকোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী পিতাম্বর আচার্য বলেন, মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে জড়িতরা চাবি হারানোর কথা বলে জনগণকে বড় ধরনের ধোঁকা দিচ্ছে। তিনি এজন্য মালামাল উদ্ধারে ব্যর্থতার জন্য রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তি ও পুলিশের সমালোচনা করেন। জগন্নাথ মন্দিরের ধনরতœ ছাড়াও অন্যান্য অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে বলে এর আগেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। ১৯৭৮ সালে মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির এক রিপোর্টে বলা হয়, অর্থ আত্মসাৎ, চুরি, বেআইনী কর্মকা-, তীর্থ যাত্রীদের নানা ধরনের হয়রানি মন্দির প্রাঙ্গণের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে জগন্নাথ মন্দিরের রতœ ভা-ার শেষবারের মতো খোলা হয়েছিল। তখন আরএন মিশ্র ছিলেন শীর্ষ মন্দির প্রশাসক। -নিউইয়র্ক টাইমস
×