ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ণাঢ্য বিশ্বকাপ ফুটবল

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৮ জুলাই ২০১৮

বর্ণাঢ্য বিশ্বকাপ ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবল। বলা হয়ে থাকে গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থÑ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শনী। শত কোটি মানুষ টিভি পর্দার সামনে রুদ্ধশ্বাস উপভোগ করে এই দুর্দান্ত গতিময় শক্তির খেলা। তাতে কৌশলও যে বড় উপাদান, সে কথাও মানতে হবে। গোটা বিশ্ব মেতেছিল উন্মাদনায়, পুরো একটি মাস। বাংলাদেশেও বিরাজ করেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও দারুণ উত্তেজনা। কোন কোনদিন চারটি খেলা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন্টা রেখে কোন্টা দেখবÑ এমন ছিল অবস্থা। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি অনুপস্থিত ছিল এবারের বিশ্বকাপে। ছিল না নেদারল্যান্ডস, চিলির মতো জনপ্রিয় দলও। তবে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, ফ্রান্সের মতো সাবেক চ্যাম্পিয়নরা এবারও শক্তিশালী দল নিয়ে নেমেছিল ফুটবলের মহারণে। যদিও শেষ পর্যন্ত একমাত্র ফ্রান্সই সব ক’টি বাধা ডিঙ্গিয়ে সামনে এগিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারাই হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। বলাবাহুল্য, বিশ্বকাপ ফুটবল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ক্রীড়ানুষ্ঠান। জনপ্রিয়তা এবং পৃথিবীব্যাপী টিভি দর্শকের সংখ্যাসহ বাণিজ্যিক বিচারেও বিশ্বকাপ ফুটবল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। গত বিশ্বকাপে ফিফা নিট মুনাফা করেছিল ২৬০ কোটি ডলার। এবার মুনাফা আরও বেড়েছে। আয়োজক দেশ রাশিয়ার অর্থনীতিতেও জোয়ার এনেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। বলা যায়, এটি হলো বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল আসর। বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুন রূপে সেজেছিল রাশিয়া। সমাগম হয়েছিল ১০ লক্ষাধিক বিদেশী ফুটবলপ্রেমীর। দীর্ঘ বাছাইপর্ব উতরে আসা ৩২টি দল খেলেছিল এই বিশ্বকাপ। স্বাভাবিকভাবেই এই ৩২ দেশের মানুষের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহটা ছিল বেশি। কিন্তু অন্য দেশগুলোরও কম নয়। আর ফুটবল খেলুড়ে ২০৭টি দেশের মধ্যে ১৯৭তম অবস্থানে থাকা এবং কখনও বিশ্বকাপে না খেলা বাংলাদেশও এ সময় সত্যিকার অর্থেই হয়ে ওঠে ‘আন্তর্জাতিক’। বিশ্বকাপ ফুটবল সুযোগ এনে দেয় বিশ্বের ছোট-বড় বহু দেশের নাগরিকদের মধ্যে অভাবিত এক আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার। যে সব দেশের ফুটবল খেলোয়াড় এই তীব্র প্রতিযোগিতামূলক খেলার বিশ্ব আসরে যোগ দেয় তারা প্রত্যেকেই শেষ খেলার শেষ বাঁশি বাজার পর স্বদেশে ফিরে অনুধাবনে সক্ষম হয় পৃথিবী নামক গ্রহে তারা বিশ্ববাসীকে কতটা আনন্দ আর বিনোদন উপহার দিয়েছে পুরো একটি মাস। বিশ্বকাপ ফুটবল অর্থনৈতিক বিচারে বিপুল বিশাল এক বাণিজ্য-ইভেন্ট হলেও এটি যে একজন বিশ্ব নাগরিকের জীবনে কী অসামান্য সুখ ও তৃপ্তিময় সুধা নিয়ে আসে তার মূল্য অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষ প্রধানত যে দুটি দলকে সমর্থন করে এসেছিল (ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা) তারা মহার্ঘ্য কাপটি অর্জনের দৌড়ে বেশ পিছিয়ে পড়ার পরও খেলা থেকে মানুষ চোখ ফিরিয়ে নেয়নি। নতুন করে নতুন কোন্ দলকে মানুষ সমর্থন জানিয়েছে সে সব দলের খেলোয়াড়দের ভালবাসার আসনে বসিয়েছে। এবার বিশ্বকাপের নতুন তারকা যেমন পাওয়া গেছে, তেমনি নতুন কয়েকটি দেশের ফুটবল দল ফেবারিট হয়ে উঠেছে। ক্রোয়েশিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্কের মতো দল বাংলাদেশের মানুষের যেন আপন হয়ে উঠেছে। আরেকটি দিক লক্ষণীয় হলো, ক্রোয়েশিয়ার মতো ছোট একটি দেশের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের কোটি মানুষের প্রিয়জনে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে তার অনুরাগীবৃন্দ। ফাইনাল খেলা শেষে নিজ দেশের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সমভাবে তিনি মমতা ও সৌজন্যের মিশেলে আলিঙ্গনাবদ্ধ করেন। এতে তার উদার মনোভঙ্গিরই পরিচয় মিলেছে। প্রতিপক্ষ মানেই যে শত্রু নয়, আর ফুটবল যে শেষ পর্যন্ত একটি খেলা বৈ অন্য কিছু নয়, এই সত্যটিও সামনে চলে এসেছে। এখন আমাদের চার বছরের প্রতীক্ষা। বর্ণাঢ্য আসরের স্বাদ নিতে এখন থেকেই যেন কথার জাল বুনে যাওয়া। শেষ কথা হলো, একদিন আমাদের দেশও খেলুক বিশ্বকাপ, এমনটাই চাওয়া। সে লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণের সময়ও এখনÑ এটি যেন দেশের ফুটবল অভিভাবকরা ভুলে না যান।
×