ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শুভ সূচনা ॥ ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ জুলাই ২০১৮

পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শুভ সূচনা ॥ ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক শেষে একে ‘শুভ সূচনা’ বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর ভোজনের শুরুতে শীর্ষ কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত একটি কনফারেন্স টেবিলে সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ এক শুভ সূচনা। প্রত্যেকের জন্যই একটি শুভ সূচনা। আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ এবং ভালভাবে শেষ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ওদিকে, পুতিন বলেন, অনেক সমস্যাই রয়ে গেছে। আমরা সব বাধা দূর করতে পারিনি... কিন্তু আমি মনে করি এ পথে আমরা প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পেরেছি। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে সোমবার প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বৈঠকে বসেন বিশ্বের প্রভাবশালী এ দুই নেতা। বৈঠক শুরু হয় পূর্ব নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর। তাদের এ বৈঠকে কেবল দোভাষীরাই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শুরুর আগে পুতিনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই সফলভাবে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের জন্য তাকে অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। এটি সেরা আয়োজনগুলোর অন্যতম ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরপর ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে পুতিনের পাশে বসে উষ্ণ বক্তব্য দিয়ে বৈঠক শুরু করেন ট্রাম্প। আর তখনই রাশিয়ার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক দিন থেকেই তিনি দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছেন। ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি আমরা একটি অসাধারণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব। আমি সেটিই আশা করি। আমি একথাই বলে আসছি। আমি নিশ্চিত যে আপনারাও কয়েকবছর ধরে একথা শুনে এসেছেন। আমি প্রচার চালিয়ে বলেছি, রাশিয়ার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ভাল ব্যাপার, খারাপ কিছু না। অন্যদিকে পুতিন বলেন, বিশিষ্ট প্রেসিডেন্ট, ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পেরে আমি আনন্দিত। যদিও আমাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে...আমরা ফোনে কথা বলেছিএবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে আমাদের বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে। তবে অবশ্যই নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার এবং বিশ্বের সমস্যাপূর্ণ অনেকগুলো এলাকা নিয়ে আলোচনার এটাই সময়। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ মস্কোর দখল করে নেয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভে ক্রেমলিনের সহায়তার অভিযোগ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এ পরিস্থিতিতে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র নতুন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে দুই দেশের নেতা দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এ বৈঠক করলেন। ক্রেমলিনও এ বৈঠককে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের পথে প্রথম ধাপ হিসেবেই প্রত্যক্ষ করেছে। বৈঠকে সিরিয়া থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়টিসহ কোরিয়া উপদ্বীপ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে ট্রাম্প কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পুতিন। তবে ওই নির্বাচনে রাশিয়ার হাত থাকার কথা পুতিন অস্বীকার করেছেন এবং ওই অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে তিনি রাজি বলেও জানিয়েছেন। পুতিন বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ হয়েছে। এখন আমেরিকা এবং রাশিয়ার একসঙ্গে মিলে সব সমস্যা সমাধান করা উচিত। স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ, সমস্যা কাটিয়ে সামনের দিকে এগোনোর অঙ্গীকার ট্রাম্প-পুতিনের ॥ বিবিসি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের সমস্যা কাটিয়ে তা সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। হেলসিঙ্কিতে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। বৈঠক শেষে ট্রাম্প যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা ছিল খুবই গঠনমূলক একটি দিন। আমরা যে কয়ঘণ্টা এক সঙ্গে কাটিয়েছি তা ছিল খুবই গঠনমূলক। আমি নিশ্চিত আমরা ভবিষ্যতে মাঝেমধ্যেই এমন বৈঠকে বসব।’ আজকের বৈঠক আরো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। ট্রাম্প বলেন, বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে চারঘণ্টা আগে থেকে তার পরিবর্তন হয়েছে। বৈঠকের আগে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার শত্রুতামূলক সম্পর্কের সমালোচনা করেন এবং এজন্য তিনি তার দেশের অতীতের ভুল ও বোকামিকে দায়ী করেন। সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের যুগ শেষ। আজকের বৈঠকের মধ্যদিয়ে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতে গ্রহণযোগ্য মাত্রার আস্থা সৃষ্টি হবে। তিনি বৈঠককে সফল ও উপকারী বলে মন্তব্য করেন। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পুতিন বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচীর নিয়ন্ত্রণ আইএইএর কাছে দিয়েছে এবং নিজেদের পরমাণু কর্মসূচীর শান্তিপূর্ণ চরিত্র তুলে ধরেছে। হেলসিঙ্কিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক শেষ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক রাজনীতিকের ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠক বাতিলের দাবি জানানো সত্ত্বেও এ বৈঠক হয়। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ম্যানিপুলেশনের অভিযোগে মার্কিন সিনেট রাশিয়ার ১২ সামরিক গোয়েন্দাকে অভিযুক্ত করার পর রাজনীতিকরা এ দাবি জানান। মার্কিন সিনেটে দীর্ঘ শুনানির পর এ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ট্রাম্প বলেন, আশা করি, জটিলতা দূর হবে, অসাধারণ সম্পর্ক তৈরি হবে। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ঘাটতির জন্য তার পূর্বসূরিদের ‘মূর্খতা’কে দায়ী করে নিন্দা জানান ট্রাম্প। বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। তবে দুই দেশের বাণিজ্য, সামরিক, চীনের আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×