ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুও রয়েছে পিপিপির আওতার এসব উন্নয়ন কর্মসূচীতে

৪৭ প্রকল্প অনুমোদন ॥ ১২.৬ বিলিয়ন ডলারের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৭ জুলাই ২০১৮

 ৪৭ প্রকল্প অনুমোদন ॥ ১২.৬ বিলিয়ন ডলারের

এম শাহজাহান ॥ দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ ৪৭ প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে প্রায় ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। পিপিপি কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গবর্নর্সের সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে ১০ প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারী অংশীদারদের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে মোট বিনিয়োগ প্রকল্পের ৩০ শতাংশ পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে পিপিপির আওতায় বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা তেমন কার্যকর হয়নি। কিন্তু চলতি বাজেটে পিপিপিতে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা রয়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) ৭৮ প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বাজেটে সরকারী তহবিলের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পিপিপিতে নজর রয়েছে সরকারের। এতে একদিকে সরকারী অর্থ সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়বে। হবে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি। পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করতে পিপিপি আইন, প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন এবং পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতিমালা-২০১৭ এরই মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্মসচিব রফিকুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দিক লক্ষ্য রেখে পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য ৪৭টি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দশটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি প্রকল্পের জন্য চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া জনস্বাস্থ্যে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য দুটি প্রকল্প পিপিপির আওতায় সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা বাইপাস রোড, ঢাকা চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে এবং শান্তিনগর-বিজয়নগর মাওয়া ঝিলমিল ফ্লাইওভারের মতো প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রজেক্ট ডাইরেক্টের বা পিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত। সৎ ও দক্ষ ও অভিজ্ঞ পিডি প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক হয়ে থাকেন। সূত্র মতে, রূপকল্প-২১ ও ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণে দেশের ভৌত অবকাঠামো ও সেবা খাতে প্রতিবছর বিনিয়োগ প্রয়োজন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের সমান অর্থ। অর্থাৎ প্রতিবছর কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। যেখানে পিপিপির মাধ্যমে পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবছর পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগ হতে হবে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার, যা অবকাঠামো ও সেবা খাতের মোট বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ। এজন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রকল্পে মোট বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এডিপিতে নেয়া ৭৮ প্রকল্পের মধ্যে আটটি প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো হলোÑ মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্প, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ স্থাপন প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মোংলা বন্দরের দুটি জেটি নির্মাণ প্রকল্প, রাজউকের আওতায় মধ্যবিত্তদের জন্য বহুতল ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে বয়স্কদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল অবসর নির্মাণ প্রকল্প, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণ ও হোমোডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া ৭৮ প্রকল্পের মধ্যে বেসরকারী অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রয়েছে ১৮ প্রকল্প। চলতি বাজেটের এডিপিতে পিপিপির আওতায় সড়ক প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আউটার রিং রোড (মোট দৈর্ঘ্য ১২৯ কিলোমিটার) হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-মদনপুর-ডেমরা-বাইপাইল-গাজীপুর-হেমায়েতপুর পর্যন্ত নির্মাণ প্রকল্প। উভয়পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এক্সপ্রেসওয়ে উন্নীতকরণ প্রকল্প, নবীনগর-মানিকগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকার যানজট নিরসনে এর চারপাশে বৃত্তাকার রুট নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু পিপিপিতে ॥ পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ এলাকায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) অনুমোদন করা হয়েছে এবং এটা বিল্ড, ওউন, অপারেট এ্যান্ড ট্রান্সফারের (বিওওটি) ভিত্তিতে পিপিপির আওতায় নির্মাণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর সঙ্গে যশোর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্য জেলাগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য এই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দেশের অন্যান্য এলাকার ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। সৃষ্টি হবে বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ, যা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ইতোমধ্যে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক অর্থসচিব ও বর্তমানে এডিবিতে কর্মরত মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এজন্য অর্থায়ন নিয়ে এডিবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সংস্থাটি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×