ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াসিন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৭ জুলাই ২০১৮

  শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াসিন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ ও র‌্যাবের পৃথক অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ এলাকার ইয়াবাসম্রাট ও পলাতক তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াসিন আরাফাত এবং প্রায় দুই হাজার পিস ইয়াবা পাচারকালে তিন মাদক ব্যবসায়ী ও এক নারী গ্রেফতার হয়েছে। গরিব ছাত্রদের দিয়ে ঢাকায় ইয়াবার চালান আনা, হস্তান্তর ও বিক্রি করা হয়। গত ১৫ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল মিঞা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা বাজার এলাকা থেকে ইয়াবা সম্রাট একাধিক মামলার পলাতক আসামি ইয়াসিন আরাফাতকে (২৮) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ইয়াসিন আরাফাত তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট। তাকে দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ ও র‌্যাব খুঁজছিল। বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হলেও প্রতিবারই জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে এই মাদক ব্যবসায়ী। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, ইয়াসিন আরাফাত গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দুই মাস আগে র‌্যাবের হাতে জব্দ হওয়া প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা মূল্যমানের ইয়াবা ট্যাবলেটের প্রকৃত মালিকের সন্ধান মিলল। এতদিন ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো প্রকৃতপক্ষে কার তা নিয়ে সংশয় ছিল। অভিযান পরিচালনাকারী এসআই জুয়েল মিঞা জানান, গত ১৬ মে র‌্যাব-২ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ সিরাজ মোল্লা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল নাবিস্কো মোড়ে মামুন নামে একজনকে ৪৩ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার করে। ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো খোদ মিয়ানমার থেকে আনা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। মামুন জানায়, ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো ইয়াসিন আরাফাতের (২৮)। ইয়াসিন আরাফাত ও ইকবাল হোসেন ওরফে মানিক (৩১) যাত্রীবাহী বাস, বিমানযোগে বিভিন্ন কায়দায় কক্সবাজার ঢাকায় এনে বিক্রি ও সরবরাহ করে। এ সংক্রান্ত দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পুলিশ কর্মকর্তা জুয়েল মিঞা বলছেন, ইয়াসিন আরাফাতের পিতার নাম জালাল আহম্মেদ। বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা গ্রামে। এসএসসি পাস করতে পারেনি। ২০০৬ সালে ইয়াসিন তার গ্রামের এক প্রতিবেশী মামার সঙ্গে ঢাকায় এসে শাহজাহানপুর এলাকায় বসবাস শুরু করে। আনোয়ার নামে ওই মামা ও তার সহযোগী ইদ্রিসের সঙ্গে প্রথমে হুন্ডির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিল। তাতে মার খেয়ে আবার সে ২০০৯ সালে টেকনাফে চলে যায়। সেখানে তার এলাকার প্রতিবেশী মাসুম ও শরীফের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। ২০১৭ সালে একবার গ্রেফতার হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। তাতে ইয়াবা ব্যবসা এবং এ সংক্রান্ত ব্যবসার বিষয়ে অনেক তথ্য দেয়। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও একই ব্যবসায় নামে। মাত্র ১৫ দিন আগে ছাড়া পেয়ে আবারও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ইয়াসিন আরাফাতের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, ইয়াসিন বেকার যুবক, স্বল্প শিক্ষিত লোকজন ও গরিব ছাত্রদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা ট্যাবলেট সরবরাহ ও বিক্রি করার বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার প্রধান টার্গেট গরিব, অসহায় ও নিরীহ ছাত্ররা। যারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় এসেছে। এ ধরনের যেসব ছাত্র তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য তাদের ইয়াসিন থাকা, খাওয়া, লেখাপড়া ও হাত খরচের ব্যবস্থা করে। অন্যদিকে অভিনব কায়দায় পেটের ভেতরে করে ইয়াবা পাচারকালে রবিবার রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতাল গেটের সামনে থেকে আসাদ (২৪), শুকুর আলী (২১) ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক (২১) নামে তিন মাদক ব্যবসায়ীকে র‌্যাব-১ এর একটি দল গ্রেফতার করে। পরে তাদের পেট থেকে উদ্ধার করা হয় ১৮শ’ ২০ পিস ইয়াবা। র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবাগুলো গ্রেফতারকৃতরা কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এনেছিল। গ্রেফতারকৃতরা ইয়াবাগুলো ছোট ছোট পুঁটুলি করে সেগুলো গিলে পেটে করে এনে হস্তান্তরের চেষ্টা করছিল।
×