ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশীদের অবৈধ বসবাস ও অপরাধে জড়ানো রোধে ৮ দফা সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৭ জুলাই ২০১৮

বিদেশীদের অবৈধ বসবাস ও  অপরাধে জড়ানো রোধে ৮ দফা সুপারিশ

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশে শুধুমাত্র খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেই ২ হাজার ১০৫ জন বিদেশী নাগরিক এসেছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই আফ্রিকান। বাংলাদেশে আসা আফ্রিকান নাগরিকদের বেশিরভাগই ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে এসে জাল টাকা, মাদক, এটিএম বুথ জালিয়াতি, প্রতারণাপূর্বক টাকা হাতিয়ে নেয়ার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। গত ৫ বছরে বিদেশী নাগরিকদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় ৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের অবৈধভাবে বসবাস নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ দফা সুপারিশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে বৈধ বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৪৮৬। অবৈধভাবে বসবাস করা বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে। পৃথিবীর ৪৪ দেশ থেকে আসা নাগরিকরা অবস্থান করছেন বাংলাদেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে ভারতের নাগরিক। তবে জাল টাকা তৈরি, এটিএম বুথ জালিয়াতি, মাদক, প্রতারণাপূর্বক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিক। গত ৫ বছরে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে ৯৬ টি মামলা, যা এখন তদন্তাধীন ও বিচারাধীন। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা বলছেন, বিদেশী নাগরিক যারা নানা অপরাধে জড়িয়েছে তার মধ্যে , দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজিরিয়া, তুরস্ক, ঘানা, তানজানিয়াসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের নাগরিকসহ বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া এসব বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়া, মাদক ব্যবসা, এটিএম বুথ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন চার নাইজিরিয়ান নাগরিক। যারা প্রথমে বৈধভাবেই এ দেশে আসেন এবং পরে প্রতারণা ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিগত ৫ বছরে বিদেশী নাগরিকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন ৯৬টি মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাল টাকার ব্যবসা, চোরাচালান, মাদক কারবার সংক্রান্ত মামলা রয়েছে ৪৯টি। অন্যদিকে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলের মামলা রয়েছে ৯টি এবং শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে ২টি। এ ছাড়া হত্যাসহ অন্য অপরাধে মামলা হয়েছে ১০টি মামলা। বিদেশী নাগরিকদের অপরাধে আফ্রিকানদের বড় একটা অংশ রয়েছে, যাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এদের নিকট পাসপোর্ট পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের নাম, জাতীয়তা, বয়স নির্ণয় করা মুশকিল হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকেই আবার দুর্বোধ্য ভাষা প্রয়োগ করে এবং তদন্তকারী পুলিশ কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, দেশে ২ হাজার ১০৫ খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক আছে। যার অধিকাংশ আফ্রিকান ফুটবলার। এসব ফুটবলার বা ক্রীড়া সংগঠক কোথায় কি করছে তার কোন তথ্য পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নেই। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে বসবাসরত অনেক বিদেশী নানা অপরাধে জড়িত। সাধারণত খেলোয়াড়, ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে বিদেশীরা এমন অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাই বিদেশীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়াতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি টাস্ক গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। র‌্যাব বিভিন্ন সময় ১৬৬ অবৈধ বিদেশীকে গ্রেফতার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে গত মার্চ মাসেই উত্তরা থেকে ১২ নাইজিরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জাল টাকা, হেরোইন, বিদেশী মদ, নেশাজাতীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন অবৈধ সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দফতর থেকে ৮ দফা সুপারিশ সম্বলিত এক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলোয়াড় বা ক্রীড়া সংগঠক আনার ক্ষেত্রে যথাযথ মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি গ্রহণ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিষয়টি পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চকে অবহিত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। খেলোয়াড় বা ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এসে যাতে বিদেশী নাগরিক বিশেষ করে আফ্রিকান নাগরিকরা অপরাধ করতে না পারে সেই জন্য এই সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×