ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত থেকে আরও ৫শ’ মেও বিদ্যুত আমদানি পিছিয়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ জুলাই ২০১৮

 ভারত থেকে আরও ৫শ’ মেও বিদ্যুত আমদানি পিছিয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করতে না পারায় ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি পিছিয়ে গেছে। ১০ জুন ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিদ্যুত আমদানির জন্য পিডিবি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে পিপিএ সই করতে পারেনি। বিদ্যুত আমদানিতে করারোপের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আপত্তি তোলায় এখনও চুক্তি করা সম্ভব হয়নি বলে পিডিবির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ভারত গত বছর থেকে তার দেশের বিদ্যুত রফতানিতে ১৫ ভাগ কর বসিয়েছে। বাংলাদেশ এই কর অবকাশ চেয়ে ভারতের কাছে আবেদন করলেও কোন লাভ হয়নি। ভারত সিদ্ধান্তে অটল থাকলে পিডিবি কর প্রদান করেই বিদ্যুত আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, এনবিআর বিদ্যুত আমদানির কর আদায় বিষয়ে কিছুটা আপত্তি তুলেছে। আমরা তাদের বলেছি এখন যে ৫০০ মেগাওয়াট এসেছে সেইভাবে এটারও অনুমতি দিতে। তারা বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখছে। আশা করছি শীঘ্রই এই জটিলতা দূর হবে। ভারতীয় পক্ষে আর কোন জটিলতা আছে কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন আমার জানামতে তাদের দিক থেকে কোন সমস্যা নেই। গত ১১ এপ্রিল সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করে। পিডিবি সূত্র জানায়, স্বল্প ময়াদে ৩০০ ও ২০০ মেগাওয়াট করে ভারতের দুটি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুত কেনা হবে। সরকার স্বল্প এবং দীর্ঘ দুই মেয়াদে বিদ্যুত ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বল্পমেয়াদে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০৩৩ সালের ৩১ মে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এনভিভিএন (ভারত) থেকে স্বল্পমেয়াদে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৭১ পয়সা দরে দৈনিক ৩০০ মেগাওয়াট এবং পিটিসি ভারত থেকে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮৬ পয়সা দরে দৈনিক ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। আর দীর্ঘমেয়াদে এনভিভিএন প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৪৮ পয়সা মূল্যে ৩০০ মেগাওয়াট এবং পিটিসি থেকে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৫৪ পয়সা মূল্যে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। বলা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে দৈনিক এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। এখন ভারত থেকে দৈনিক ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করছে বাংলাদেশ। শুরুতে ৫০০ মেগাওয়াট আমদানি শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে এক হাজার মেগাওয়াট করার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে এই বিদ্যুত ক্রয় করা হবে এমন শর্তে সায় দেয়। ভারত সরকারের অনুমোদনের পর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশনের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা হয়। ভেড়ামারা এইচভিডিসি প্রকল্প পরিচালক কিউ এম শফিকুল ইসলাম সোমবার বলেন, মঙ্গল বা বুধবার থেকে নতুন নির্মাণ করা সাবস্টেশন দিয়ে পুরাতন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। এর আগে টেস্ট রানে চালানো হয়েছে সাবস্টেশনটি। চুক্তির পর যখনই বলা হবে তখনই বিদ্যুত আনা সম্ভব বলে জানান তিনি। প্রথম মেয়াদে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যান। ওইসময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের বিদ্যুত সঙ্কট সামাল দিতে বাংলাদেশকে বন্ধুত্বের প্রতীকী হিসেবে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত খাতে সহায়তা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ সই হয়)। ভারতের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সরকারী খাতের বাইরে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত খোলা বাজার থেকে ক্রয়ের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারী এবং বেসরকারী মিলিয়ে ১৩ সালের শেষ নাগাদ ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শুরু করে সরকার। প্রসঙ্গত সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ২০৪০ সাল নাগাদ প্রতিবেশী দেশ থেকে অন্তত পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির লক্ষ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত ভারত ছাড়া অন্য কোন প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানির বিষয় চূড়ান্ত করতে পারেনি বিদ্যুত বিভাগ। সরকার নেপাল, ভুটান থেকে জল বিদ্যুত আমদানির চেষ্টা করলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
×