ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে যুবককে থানায় নিয়ে অর্থ আদায়

ব্যাগে ইয়াবা ঢোকানোর কথা স্বীকার করলেন এসআই

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৭ জুলাই ২০১৮

ব্যাগে ইয়াবা ঢোকানোর কথা স্বীকার করলেন এসআই

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে খুলশী থানা পুলিশের পরিকল্পিত সারপ্রাইজ চেকিংয়ে মাত্র একটি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। খুলশী থানার এস আই পিন্টু বড়ুয়া প্রকাশ টিটু শনিবার বিকেলে আমবাগান এলাকার লোহারপুলের পাশেই এই পরিকল্পিত চেকপোস্ট পরিচালনা করেন। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার একটি ক্যান্টিনে চাকরিজীবী ফারহান শাহরিয়ার প্রকাশ অভির হাতে থাকা ব্যাগে পরিকল্পিতভাবে একটি ইয়াবা উদ্ধারের নীলনক্সার ঘটনা সৃষ্টি করে পুলিশ, এমন অভিযোগ। শনিবার বিকেল ৪টা থেকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা টহল পুলিশের গাড়িতে আটকিয়ে পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি ফোনে জানানো হয়। এরপর খুলশী থানা হেফাজতে নেয়া হয় সন্ধ্যা সাতটায়। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে এসআই পিন্টুর দরকষাকষির পর রাত সাড়ে আটটায় ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে অভিকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ওসি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও এসআই ওসির পরামর্শে অর্থ আদায় করেছে বলে স্বীকার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এসআই ও অভির পরিবারের লোকজন ওসির জন্য থানায় অপেক্ষা করছিলেন। অভির মামার পরিচিত আরেক থানার এসআই জাহেদের পরিচয়ের সূত্র ধরে ও ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এস আই পিন্টু মুচলেকা ও অর্থ লেনদেনে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেদকের অভিযোগটি ওসি থানায় আসার আগেই মোবাইলে এসআই পিন্টুর সঙ্গে আলাপ করেছেন। এসআই পিন্টু প্রথমে ৪০ হাজার টাকা দাবি করলেও অভির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দরকষাকষির পর অভিকে ছাড়াতে ১৭ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এ বিষয়ে কয়েক দফায় ওসির সঙ্গে এসআই কথা বলেছেন। এমনকি অভি ও তার খালু মনির হোসেন খুলশী থানায় মুচলেকা দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, অভি কেন নিরপরাধ হয়েও পুলিশের পরিকল্পিত ইয়াবা ফ্যাঁসাদে পড়ে ১৭ হাজার টাকা গচ্চা দিল এবং এসআই পিন্টুর তৈরি মিথ্যা মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে হলো। শনিবার অভিযানে থাকা খুলশী থানা পুলিশের মাধ্যমে জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় টাইগারপাস-আমবাগান সড়কে শনিবার বিকেল ৪টায় সারপ্রাইজ চেকিং চলছিল। টেম্পুতে চড়ে আরও ৮/১০ যাত্রীর সঙ্গে আসছিল ফারহান শাহরিয়ার অভি। টেম্পুতে চালকের পাশের সিটেই ছিল অভি। গাড়ি থেকে নামিয়ে কোন ধরনের অগ্রীম তথ্য ছাড়াই সারপ্রাইজ চেকিংয়ের নামে অভির দেহ তল্লাশি শুরু করে দুই কনস্টেবল। এক পর্যায়ে রেলের টিকেট প্রিন্টিং প্রেসের দেয়াল ঘেঁষে থাকা শতবর্ষী কড়ই গাছের আড়ালে নেয়া হয় অভিকে। তার হাতে থাকা একটি কাপড়ের শপিং ব্যাগে তল্লাশির নামে তিনটি ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। অভি এতে বাধা দিলেও নীলনক্সায় থাকা পুলিশ সদস্যরা তার ব্যাগে ইয়াবা রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে অভিকে গাড়িতে তুলে নেয়। অভির মোবাইল থেকে তার ফাহিম মামাকেসহ কয়েকজনকে ফোন করানো হয় তাকে ছাড়িয়ে নিতে। খুলশী থানা সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে অভিযানে থাকা এসআই পিন্টু বড়ুয়া, দুই কনস্টেবল ও এক আনসার সদস্য অভিকে নিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানে তাকে একটি টুলের ওপর বসিয়ে রাখা হয়। ইতোমধ্যে অভির কয়েক মামা ও খালুসহ কয়েকজন থানায় উপস্থিত হন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভি পুলিশকে জানিয়েছে, সে চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক টার্মিনালের ক্যান্টিনে চাকরি করে। সেখানে তার মামা মোহাম্মদ সেলিমও ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। শনিবার বিকেলে সে ক্যান্টিন থেকেই বাসায় ফিরছিল। ইয়াবা সেবন কিংবা বহনের সঙ্গে সে কোনভাবেই জড়িত নয়। শনিবার রাত আটটায় প্রতিবেদক ওসির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, অভিকে কোন্ এসআই আটক করেছে আপনার জানা আছে কিনা। অভির ব্যাগে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসানোর মামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনা আমার থানায় কখনও ঘটেনি। ফলে ইয়াবা ঢুকিয়ে অভিকে ফাঁসানো হচ্ছে অভিযোগটি সত্য নয়। এ ব্যাপারে পরিকল্পিত অভিযানের এসআই পিন্টু বড়ুয়া রবিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে প্রতিবেদককে বলেন, অভির কাছে তিনটি নয় একটি ইয়াবা পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি আপনাকে কে বলেছে। আপনার পার্সোনাল মোবাইল নম্বরটা আমাকে দিন। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। কিন্তু অভির বাবা নেই। সুতরাং, অভি এতিম। মানবিক বিষয় বিবেচনা করে ও অভির সারা জীবনের কালো দাগ মুছতেই ১৭ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেই পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুচলেকা নেয়া হয়েছে ঠিকই এবং অভিকে মাসে অন্তত একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামে খুলশী থানা পুলিশের ইয়াবা ফাঁদের আতঙ্কে যাত্রী ও পথচারীরা। সারপ্রাইজ চেকিংয়ের নামে পরিকল্পিত অপরাধে মেতে উঠেছে অসাধু পুলিশ। দেহ তল্লাশির নামে পকেটে ইয়াবা পুরে দিয়ে আটক করে থানায় নিতে মরিয়া পুলিশের এসব সদস্য। শুধু তাই নয়, পরিবহনে পুরুষের সঙ্গে নারী সঙ্গী পেলেই খুলশী থানা পুলিশ অশ্লীল কথা বলে অর্থ আদায়ের পাঁয়তারা করে। এমনকি স্বামী-স্ত্রী পেলে বিয়ের কাবিননামা ও ভাইবোন পেলেও অভিভাবকদের মোবাইলে হেনস্থা করার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রতিনিয়ত খুলশী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পাবলিক পরিবহনে তল্লাশির নামে হয়রানি থেকে রমজান মাসেও রক্ষা পায়নি যাত্রীরা।
×