ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

সুন্দরবন ঘেঁষে জনবসতি প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৭ জুলাই ২০১৮

সুন্দরবন ঘেঁষে জনবসতি প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ সুন্দরবন সংলগ্ন মরা ভোলা নদীর চরে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সোনাতলা এলাকার ৫ একর জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপজেলার সাউথখালী ও রায়েন্দা ইউনিয়নের শতাধিক ছিন্নমূল পরিবারের আশ্রয় হবে। বনের পাশে এ ধরনের জনবসতিপূর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্প হলে সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। আদালত থেকেও এ ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা মৌজার আওতাধীন ৫ একর সম্পত্তিতে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নির্মাণের জন্য চলতি বছরের মার্চে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয়। যা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মাত্র ৫শ’ ফুট দূরে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট অথবা পরিবর্তন হবে এমন কোন কাজ করা যাবে না। এছাড়া ২০১৩ সালে শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের দাসের ভারানি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামের একই ধরনের একটি প্রকল্পের কাজ বাতিল করা হয়। ২০০৫ সালে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষা তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে সোনাতলা-১, ২, ৩ আদর্শ গ্রাম প্রকল্প স্থগিত করা হয়। এছাড়া ২০০৪ সালে ভোলা নদীর চরে আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে একটি রিট করলে সেই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। সুন্দরবন ঘেঁষে ভোলা নদীর চরে নতুন করে বসতি ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ইতোমধ্যে বন বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনকে পৃথক পত্রে প্রকল্প বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছেন। বন বিভাগের মতে, জেগে ওঠা চরের জমিতে এ ধরনের বসতি স্থাপনের ফলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়া ছিন্নমূল মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে সম্পূর্ণভাবে বনের উপর নির্ভরশীল হবে। এতে বনজ সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি বনের বাঘ লোকালয়ের গ্রামগুলোতে ঢুকে প্রাণহানি ঘটাতে পারে। এ বিষয় দীপ্ত বাংলা হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা রেজাউল করিম খান রেজা বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার জন্য তিনি জনস্বার্থে চলতি বছরের মার্চে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত ওই প্রকল্পের কাজ স্থগিতসহ সুন্দরবন ঘেঁষে যে সকল অবৈধ জন বসতি গড়ে ওঠেছে তা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। প্রকল্পটি দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা বনসংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অসহায়, দুস্থ, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের আশ্রয়ের জন্য ওই প্রকল্পটি তৈরি করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাধা না দিয়ে সকলের সার্বিক সহযোগিতা করা উচিত। এতে বনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে তিনি মত দেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যয়ন নেয়া হয়েছে। সেখানে জমির মালিক যে বন কর্তৃপক্ষ তা উল্লেখ নেই। সে অনুযায়ী ওই এলাকায় প্রকল্পটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, ভূমি আইন অনুযায়ী নদী ভরাট হওয়া সম্পত্তির মালিক জেলা প্রশাসক। এছাড়া সাধারণ জনবসতিতে বনের ওপর প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে তিনি আদালতের কোন নির্দেশনা পাননি বলে উল্লেখ করেন। এ বিষয় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ভোলা নদীর জেগে ওঠা চর সুন্দরবনের অংশ। এখানে বন্দোবস্ত দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বন ঘেঁষে এভাবে বসতি গড়ে ওঠার প্রতিযোগিতা চলতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। তাই বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাতিল করা জরুরী।
×