ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যযুদ্ধের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৭ জুলাই ২০১৮

রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক এক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। সোমবার বেজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন ও ইইউ নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, এতদিনকার বিশ্বের কাঠামো পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। খবর গার্ডিয়ান। পর্যবেক্ষকদের মতে আপাত দৃষ্টিতে টাস্কের কথায় কোন জটিলতা না থাকলেও তা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে। তার বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় ইইউ প্রধান আরও বলেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বিশ্বে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠতে পারে। তাই তিনি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সংস্কার করার আহ্বান জানান। ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্বকে নৈরাজ্য ও সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করা যেতে পারে। চীনের রাজধানী বেজিংয়ে ইইউ নেতৃবৃন্দ ও চীনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে চলমান শীর্ষ বৈঠকের উদ্বোধনী দিনে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রধান এইা সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন। এই বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গ স্থান পায়। ডোনাল্ড টাস্ক ও ইউরোপীয় কমিশন প্রধান জাঁ ক্লদ জাঙ্কারের সঙ্গে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের মধ্যে এই শীর্ষ বৈঠক এই কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে যে, ইতোমধ্যেই বাণিজ্যযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক বেশ ক্ষয়িষ্ণু ও শীতলতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে অভিহিত করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি ইউরোপীয় এই সংস্থাকে বেশ জটিল ও ঝামেলাপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। এরও আগে ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসাকে ইইউ জোটের সঙ্গে আপোস আলোচনায় না গিয়ে বরং সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন। ইতোমধ্যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের বিভিন্ন পণ্যের ওপর পাঁচ শ’ বিলিয়ন ডলারের বেশি শুল্ক আরোপ করেছেন। এই বাণিজ্যযুদ্ধের মোকাবেলায় চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার পাশে থাকার আহ্বান জানায়। কারণ, ইইউভুক্ত দেশগুলোর ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইইউতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং মিং রবিবার পিপলস ডেইলিতে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে বলেন, চীন ও ইইউ জোট বর্তমান বিশ্বের স্থিতিশীলতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে প্রধান দুটি শক্তি। এই দুই শক্তি একপাক্ষিক ও সংরক্ষণবাদী শক্তির উৎকট প্রকাশের মধ্যেও শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। সম্পাদকীয়তে ঝাং মিং আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, দুই পক্ষের মধ্যে এই শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আস্থা জোরদার হবে এবং বহুপাক্ষিকতা অবাধ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সুবিধার সপক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।’ এদিকে, সোমবার চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগের তিন মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৮। ক্রমশ কমে যাওয়া এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে চীনের এক সরকারী মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন, ইইউ নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে একটি মার্কিনবিরোধী জোট গঠনের প্রস্তাব করলে ইইউ জোট তাতে রাজি হয়নি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন ধরনের শক্ত অবস্থান নিতেও অসম্মতি জানায়। অন্যদিকে, ইইউ জোট চীনের অর্থনৈতিক নীতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিষয়ে নিজেদের সহমত প্রকাশ করে। গত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় ভতুর্কি প্রদান এবং বিদেশী মেধাস্বত্ব জোরপূর্বক হস্তান্তর করার চীনা নীতির সমালোচনা করে। চীনের বিরুদ্ধে এ ধরনের সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকেই করে আসছে। এতদসত্ত্বেও ইইউ জোট ও চীনা নেতৃবৃন্দ বৈশ্বিক বহুমুখী বাণিজ্যের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×