ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ শাস্তির আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৭ জুলাই ২০১৮

সর্বোচ্চ শাস্তির আইন হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জুন বুধবার সংসদে বলেছেন ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করতে মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক গডফাদারসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারহীনতা এবং প্রচলিত আইন এবং সাজার ধরন ও পরিমাণ যথেষ্ট না হওয়ার কারণে দেশে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা চলছে অবাধে। বিদ্যমান আইনে কোন ব্যক্তির দখলে, কর্তৃত্বে বা অধিকারে মাদক দ্রব্য পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ না থাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডরা অধরা থেকে যায়। পুলিশ সদস্য ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশেই মাদকের এমন রমরমা ব্যবসা চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবৈধ পথে বিদেশ থেকে এসব মাদক আসছে এটা নিশ্চিত বলা যায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্যদের অনেকেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলেই এত অনায়াসে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছে। সীমান্তপথে মাদক চোরাচালান বন্ধে এবং দেশের ভিতরে মাদকদ্রব্যের অবাধ কেনাবেচা কঠোর হাতে বন্ধ করতে স্থায়ী চিন্তা করতে হবে। আর এ জন্যে তদারকি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মূল্যায়ন সমীক্ষা নিয়মিত দায়িত্বের মধ্যে আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে বাড়াতে হবে প্রয়োজনীয় জনবল। বিজিবি, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে জবাবদিহির আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসেব নিয়ন্ত্রণে আনা একান্ত জরুরী। অপ্রিয় সত্য, তাদের একাংশের সহযোগিতা ছাড়া মাদকের ব্যবসা চলা কিছুতেই সম্ভব নয়। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মাদকব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, ৪ মে থেেক ৩১ মে পর্যন্ত এই অভিযানে ১২৭ জন নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা প্রতদিনই বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। মাদক মানুষের জীবন সংহারি বস্তু। জাতীয় অগ্রগতির প্রতিবন্ধকও এটি। তাই এটাকে নির্মূল করার বিকল্প নেই। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু চলমান অভিযানে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনা এই অভিযানকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করবে না, এর সাফল্যকেও ম্লান করে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, মাদকের সঙ্গে জড়িত সকল শ্রেণীর লোকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সে ব্যক্তি চুনোপুঁটি বা রুই কাতলা যেই হোক, বিচারের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে, প্রয়োজন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে। যে সকল দ্রব্য সামগ্রী সেবন বা ব্যবহার করলে মানুষ আসক্ত হয় সে সব দ্রব্যই মাদক দ্রব্য। এক কথায় বলা যেতে পারে, যে সব দ্রব্য মস্তিষ্কের ওপর বিরূপ ক্রিয়া করে আচরণের পরিবর্তন করে এমন নেশা সৃষ্টিকারী বা চিত্তবিভ্রমকারী দ্রব্যগুলোই মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য নানাভাবে বাজারে পাওয়া যায়। যার একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাদক দ্রব্য ও অপরটি রাসায়নিক উপায়ে তৈরি মাদক দ্রব্য। মাদকে যেমন খারাপ চরিত্রের মানুষ মাদকাসক্ত হয় সহজেই, তেমনি ভাল মানুষও এর কবলে পড়তে পারে। মানসিক কারণে, সামাজিক কারণে ও জৈবিক কারনে সাধারণভাবে একজন মানুষ মাদকে আকৃষ্ট হয়ে অমানুষ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে যে সব কারণের মধ্যে রয়েছে অপরিণত মন, ওষুধ গ্রহণের ফল বুঝতে না পারা, ব্যক্তিত্বের অভাব, অবহেলা সন্তানের প্রতি মা-বাবার মায়া-মমতার অভাব, জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা, মাদকের প্রতি কৌতূহল, ধূমপানের বদভ্যাস, পরিবার ও ব্যক্তি জীবনে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব। পারিপার্শ্বিক চাপ, বন্ধুবান্ধবের প্রলোভন ও প্ররোচনা, রোমান্সকর অভিজ্ঞতা পাওয়ার তীব্র বাসনা, প্রেম বিচ্ছেদ প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ বা ভালবাসায় ব্যর্থ হলে, মাত্রাতিরিক্ত অনুকরণ প্রবণতা, বেকারত্ব, আর্থসামাজিক অস্থিরতা এবং মাদকের কুফল সম্বন্ধে অজ্ঞতা, চিত্তবিনোদন, শৈশবের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারের কারণে, সন্তানের সামনে মা-বাবার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও ঝগড়াঝাটি করা, সন্তানের দায়িত্ব তৃতীয় কোন ব্যক্তির কাছে দিয়ে বাবা-মায়েদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং সন্তানকে তার প্রাপ্য আদর সোহাগ, ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করা, পরিবারের সঙ্গে কোন মাদকাসক্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতা বা যাতায়াত থাকা, মাতা-পিতার মাত্রাতিরিক্ত আদর-আস্কারাও মাদকাসক্ত হতে সহায়তা করে থাকে। মাদক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারকে নিরাময় বা সংশোধন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ রাষ্ট্রের অর্জনকে ভূলুন্ঠিত করে চলেছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজেকে পরিবার প্রিয়জন সমাজ দেশ ও জাতিকে নিয়ে যায় এক কঠিন অথচ অচল ক্ষয়িঞ্চু পাথর জীবনে। মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আজ সময়ের দাবি। লেখক : কবি ও সাংবাদিক
×