ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোনার জুতো হ্যারির, মডরিচের সোনার বল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৬ জুলাই ২০১৮

সোনার জুতো হ্যারির, মডরিচের সোনার বল

রুমেল খান ॥ নানা চমক আর রোমাঞ্চে ঠাসা ছিল এবারের ফিফা বিশ্বকাপের একবিংশ আসরটি। শেষ চমকটি ছিল বৃষ্টি স্নাত। রবিবার রাতে রাশিয়ার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলা শেষ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হতে না হতেই শুরু হয়ে গেল আকাশের কান্না। তড়িঘড়ি করে ছাতা নিয়ে আসা হলো মঞ্চে উপবিষ্ট ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফানতিনো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মারকন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপ্পে এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্রাবার-কিতারোভিচের জন্য। কিন্তু তার আগে সবাই ভিজে একাকার। আর কোন বিশ্বকাপের ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এমনটা ঘটেনি। এমন বৃষ্টি স্নাত পরিবেশেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্বকাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন হবে কোন দল, সেটা জানার প্রতি সবার যেমন আগ্রহ থাকে, তেমনি আগ্রহ থাকে অন্য পুরস্কারগুলো কে বা কারা জিতবেন, সেগুলোর প্রতিও। এটা যেন অলিখিত নিয়মই হয়ে গেছে- যিনি গোল্ডেন বল জিতবেন, তিনি বিশ্বকাপ জিতবেন না। গত ২০১৪ আসরে ফাইনালে আর্জেন্টিনা হারলেও তাদের অধিনায়ক লিওনেল মেসি জিতেছিলেন গোল্ডেন বল। এবার রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মডরিচেরও ভাগ্যে ঘটল একই পরিণতি! এ নিয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জিতলেন বিশ্বকাপ না জেতা দলের কোন খেলোয়াড়। রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ‘সিলভার বল’ জিতেছেন বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া বেলজিয়ামের তারকা ফরোয়ার্ড ইডেন হ্যাজার্ড। বিশ্বকাপজয়ী দল ফ্রান্সের তারকা স্ট্রাইকার এ্যান্টোনি গ্রিজম্যান তৃতীয় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ‘ব্রোঞ্জ বল’ লাভ করেন। সেরা গোলরক্ষকের জন্য নির্ধারিত পুরস্কারটি (গোল্ডেন গ্লাভ) পেয়েছেন বেলজিয়ামের থিবাউ কর্তৌয়া। ফিফা ফেয়ার প্লে ট্রফির পুরস্কারটি গেছে স্পেনের হাতে। এছাড়া সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট পুরস্কারটি এবার অর্জন করেছেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী, ২৪ বছর বয়সী ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক এবং তারকা ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন। ‘সিলভার বুট’ জিতেছেন ফ্রান্সের এ্যান্টোনি গ্রিজম্যান এবং ‘ব্রোঞ্জ বুট’ জিতেছেন বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু। দ্বিতীয় ইংলিশম্যান হিসেবে গোল্ডেন বুট জেতার কৃতিত্বের অধিকারী হলেন জাতীয় দলের হয়ে ৩০ ম্যাচে ১৯ গোলের মালিক হ্যারি। এর আগে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন গ্যারি লিনেকার। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে স্বদেশী লিনেকারের মতো হ্যারিও এবারের বিশ্বকাপে সমান ৬ গোল করেছেন। হ্যারি এই বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬ গোল। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রুপ ম্যাচে মাঠে নামেননি। তবে অনেকেই সমালোচনা করে বলেছেন হ্যারির গোলগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে স্পট কিক থেকে (৩টিই পেনাল্টি থেকে)। ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানার গোল ছিল খুবই কম। সেক্ষেত্রে তিনি বেশ সৌভাগ্যের অধিকারী। এবারের বিশ্বকাপের ‘বিস্ময় বালক’ কিলিয়ান এমবাপে লাভ করেছেন বেস্ট ইয়ং প্লেয়ার এ্যাওয়ার্ড। বলা যায় এই ক্যাটগরিতে তিনিই ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফাইনালে তিনি করেন এক গোল। এর ফলে ৬০ বছর পুরনো এক রেকর্ডও গড়েন মাত্র ১৯ বছর বয়সী দুরন্ত গতির এই ফরোয়ার্ড। ১৯৫৮ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন ‘টিনএজার’ ফুটবলার হিসেবে গোল করার রেকর্ড গড়েন এই বিশ্বকাপে মোট ৪টি গোল করা এমবাপে। এর আগে ১৯৫৮ সালের ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে জোড়া গোল করে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে। এখন দেখার বিষয়, আগামী ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে কার ভাগ্যে জোটে এই পুরস্কারগুলো।
×