ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফের সাইরং খালে কোস্টগার্ডের অভিযানে ১০ হাজার পিস জব্দ

অভিযানের মধ্যেও আসছে ইয়াবার চালান, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৬ জুলাই ২০১৮

অভিযানের মধ্যেও আসছে ইয়াবার চালান, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

শংকর কুমার দে ॥ দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই মাদক বিশেষ করে ইয়াবা আসছে, বিক্রিও হচ্ছে। তবে মাদক বা ইয়াবা বিক্রির কৌশল নতুন, ওপেন সিক্রেট নয়, অনেকটাই রাখঢাক পদ্ধতিতে। শনিবারও টেকনাফ সাইরং খাল এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আধা কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও ২শ’ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় আসছে ইয়াবার চালান। এখন ইয়াবা বা মাদক প্রকাশ্য, সহজলভ্য নয়। বিশেষ করে রাজধানীর উত্তরা অভিজাত ক্লাবে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অভিযান পরিচালনায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের মাদক উদ্ধারের পর অভিজাত এলাকায় মাদক কারবারিরা সতর্ক হয়ে গেছে। তবে ব্যক্তিগত গোপন জলসা ঘর, গেস্টহাউস কিংবা ধনীর দুলাল-দুলালিরা ইয়াবা বা মাদক কিনছে চড়া দামে। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান গত ৮ জুলাই বনানীর যে ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন সেখানে চলছিল ইয়াবা সেবন, মদ্যপান, নাচগানের আসর, যাতে মডেল, অভিনেত্রীরাও অংশ নিয়েছিলেন। এসব ইয়াবা ও মাদক মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় আসার পর খুনের ঘটনার আগে বনানীর ওই জলসা ঘরে আনা হয়েছিল। বনানীর ২/৩ সড়কের ৫ নম্বর বাসার এ-২ ফ্ল্যাটটি মিডিয়া হাউসের নামে ভাড়া নিয়ে নিয়মিত মদ্যপান, নাচ গানের জলসা ঘর সাজিয়ে আসর জমাতো মডেল ও অভিনেত্রী চক্রটি। গ্রেফতার হওয়া প্রকৌশলী রহমত উল্লাহর দেয়া জবানবন্দীতেই ইয়াবা সেবন, মদ্যপান ও নাচগানের আসরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোস্ট গার্ডের শনিবার টেকনাফ সাইরং খাল থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আধা কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও ২শ’ ক্যান বিয়ার উদ্ধারের মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে ঢাকায় আসছে ইয়াবাসহ মাদকের চালান। সূত্রমতে, দেশজুড়ে পুলিশ-র‌্যাবের অভিযান শুরু হওয়ায় মাদক বিক্রেতারা গা-ঢাকা দিলেও মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নাদিম ঢাকা থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গিয়ে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার খবর পেয়ে অভিযান চালানোকালে শনিবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ঢাকার নাদিমের মতো অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে এমন খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে মাদক ব্যবসা এখন আর আগের মতো ওপেন সিক্রেট নয়, অনেকটা রাখঢাক করে বিক্রি হচ্ছে। মাদকও আসছে নিত্যনতুন কৌশলে। ফলে এখন সহজলভ্য নয় একটু কাঠখড় পুড়িয়ে মাদক সংগ্রহ করতে হচ্ছে মাদকাসক্তদের। এছাড়া মাদক বিক্রেতাদের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমানে স্পটগুলো আর আগের মতো নেই। দু’একজন বিক্রেতা ঘাপটি মেরে থেকে মুঠোফোনে বিক্রি করছে। রাজধানীর মিরপুর শাহআলী, কারওয়ানবাজার, জেনেভা ক্যাম্প, শুক্রাবাদ, তেজকুনিপাড়া, মহাখালী এলাকার মাদক স্পটগুলোতে প্রকাশ্যে কোন মাদক বিক্রি না হলেও যারা মাদক বিক্রেতা তারা আত্মগোপনে থেকেও যে মাদক বিক্রি করছে এমন তথ্য পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বেশিরভাগ ব্যক্তিই বর্তমানে হয়তো কারাগারে নয়তো পলাতক। যারা পলাতক তারা আত্মগোপনে থেকে পুরাতন মাদক ক্রেতা বা আসক্তদের কাছেই বিক্রি করছে। নতুন কোন ক্রেতার কাছে মাদক বিক্রি হচ্ছে না। তবে যাদের রক্তের সঙ্গে মাদক মিশে গেছে তাদের একটি অংশ এ পথ ছাড়তে পারেনি। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিব্যি ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছে। কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলীর আমিন বাজার, হেমায়েতপুরের ভাকুর্তা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় একাধিক সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে। এরা চিহ্নিত মাদক কারবারি। পুলিশের খাতায় ফেরার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এরা সতর্কতার সঙ্গে মাদকের কারবার করছে। মাদক বিক্রির নতুন কৌশল হচ্ছে আগে পুলিশ রেকি করে মাদক কারবারি চিহ্নিত করত, আর এখন উল্টো এসব মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে রেকি করে কখন পুলিশ আসবে বা আসতে পারে তা চিহ্নিত করে নিজেদের বাঁচাতে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. সহীদুল ইসলাম জানান, উত্তরা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের মাদক উদ্ধারের পর রাজধানীর অন্যান্য অভিজাত ক্লাবগুলো সতর্ক হয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে না বলে খবর পাচ্ছি। তবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর অভিজাত ক্লাবই নয়, যেখানেই মাদক বিক্রির খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান কাস্টমসের ডিজি। পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স এন্ড স্পেশাল ম্যানেজমেন্ট) মনিরুজ্জামান বলেন, জঙ্গীবাদের মতো মাদকও একটি আসক্তি। আমরা এই দাবি করছি না অভিযানের ফলে রাতারাতি মাদক নির্মূল হয়ে যাবে। হ্যা, অভিযানের কারণে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাদক একটা জাতীয় সমস্যা। এর মোকাবেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে মাদকের কুফল জানান দিতে হবে। কোস্টগার্ডের অভিযান ॥ কোস্ট গার্ড গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৪ জুলাই ভোর রাতে একটি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে টেকনাফ সাইরং খাল এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দশ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ২০০ ক্যান বিদেশী বিয়ার জব্দ করে। এ সময় কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা দ্রুত জঙ্গলে পালিয়ে যায়। জব্দকৃত ইয়াবা ও বিয়ারগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য ৫১ লাখ টাকা মাত্র। জব্দকৃত ইয়াবা ও বিয়ারগুলো পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য টেকনাফ থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই নিয়ে এ বছর কোস্ট গার্ড ৮০ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বলে তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
×