ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা, তারেককে নেতৃত্ব থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১৬ জুলাই ২০১৮

 খালেদা, তারেককে নেতৃত্ব থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব) আদেশ সংশোধন করে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং লন্ডন প্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এ ছাড়া তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ২০ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হাঁটু ও শরীরের ব্যথা খুব বেড়ে গেছে। এ কারণে তিনি হাঁটতে পারছেন না। শনিবার পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করতে গেলে খালেদা জিয়াকে যে ভবনে রাখা হয়েছে সেই ভবনের নিচে তাদের বসানো হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল তিনি আসবেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। কারণ, কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত। তার হাঁটু ও শরীরের ব্যথা খুব বেড়ে গেছে। ১৩ দিন তার সঙ্গে পরিবারসহ কারও দেখা হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের দেখা করতে না দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, কারাবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মাইনাস ওয়ান থিওরি বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে যা ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু হয়েছিল। সবাইকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকলকে জাগাতে হবে। সময় এসেছে আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করি। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আইজি প্রিজন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চিঠি দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তার শরীর খুব খারাপ। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সরকার কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চিকিৎসা না দিয়ে তার শারীরিক অসুস্থতা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেন তিনি সেখান থেকে আর ফিরে না আসেন। তবে খালেদা জিয়ার জীবন যদি হুমকির মুখে পড়ে তাহলে এর সমস্ত দায়-দায়িত্ব শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বহন করতে হবে। তিনি বলেন, কোন্ ধরনের প্রতিহিংসা হলে একজন ৭৩ বছর বয়সী মানুষকে তার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়? পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা চলতে পারে না। শীঘ্রই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি জানতে চাওয়া হলে ফখরুল বলেন, তফসিল ঘোষণা তো তাদের পছন্দ মতো নির্বাচন কমিশন আছে, করতেই পারে। সেটা গ্রহণ করার ব্যাপার আছে। সে জন্য আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব যথাসময়ে এবং সেই সিদ্ধান্ত আমরা আপনাদের জানাব। মির্জা ফখরুল বলেন, ১১ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংসদীয় কটুবাক্যের ধারাবর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেনÑ বিএনপি গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন করল কেন? প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শুধু প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য, বানোয়াট অপ্রচার। বিএনপি গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা গত ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের দ্বারা সংশোধিত। কিন্তু আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরকার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল সেই একই কায়দায় এখন বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল। বিএনপির বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের সংস্থাগুলো নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়, যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। ফখরুল বলেন, আমাদের দলের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান স্পষ্টতর করার জন্য কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্য পদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোন দলের গঠনতন্ত্রে সদস্যপদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেয়ার বিধান নেই। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনও সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন। কিন্তু এতে কোন দোষ নেই, এতে কোন পাপ নেই, এতে কোন অন্যায় নেই; আর সকল দোষ বিএনপি নেতাদের। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পত্রপত্রিকায় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে কাল্পনিক সিন্ডিকেট সংবাদ পরিবেশন করার ধারাবাহিকতায় সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত: সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিওতে) অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপপ্রচার ও সরকারী ষড়যন্ত্রের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’। ফখরুল বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে দলীয় গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংযোজন করার অপচেষ্টা চলছে। এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাই আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে হবে। ফখরুল বলেন, বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের কোন অশুভ নীলনক্সার অংশ না হবার জন্য আমি দেশের সকল গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের ষোলো কোটি মানুষ এত বোকা নয় যে, সরকারের এসব ছলচাতুরি বুঝতে পারে না। সরকারের উচিত হবে এসব নোংরা কৌশল থেকে বিরত থেকে সোজাপথে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এর আগে ’৭৫ সালে দেশে একই রকম অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। তখন তাদের শুভদিন ছিল। তবে সেই শুভদিন বেশিদিন টিকতে পারেনি। যারা স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ পরিচালনা করে তারা কখনও শুভদিনগুলো শেষ পর্যন্ত ভোগ করতে পারে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।
×