ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিক্ত হিয়ায় রোমাঞ্চ রিমঝিম বৃষ্টির প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৬ জুলাই ২০১৮

রিক্ত হিয়ায় রোমাঞ্চ রিমঝিম বৃষ্টির প্রত্যাশা

মোরসালিন মিজান ॥ শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না...। এত প্রেম যার জন্য, সে হয়ত এবারও ফেরেনি। কোনদিন কি ফিরবে? নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ। তবে শাওন এসেছে ফিরে। শাওন মানে, শ্রাবণ। বছর ঘুরে একটিবার তার আসতেই হয়। কার টানে, কে বলবে, শাওন আসে। আবারও এসেছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে/দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,/ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে...। আজ সোমবার ১ শ্রাবণ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। বাংলা পঞ্জিকার বার মাসের অন্যতম আলোচিত মাসটি শুরু হলো। ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। এ সময় জলীয় বাষ্পবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় বর্ষায়। নিয়মিত বর্ষণে নতুন প্রাণ পায় প্রকৃতি পরিবেশ। আর পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে শ্রাবণ। বর্ষার দ্বিতীয় ও সমাপনী মাসটিকে আজ স্বাগত জানানো হবে। নানা ভাব ও ভাষায় বন্দনা করা হবে। কিন্তু কেন? কী আছে এই মাসের? বৃষ্টি। ঢের হয় বৃষ্টি আষাঢ়ে। হয় বটে। শ্রাবণের যে রিমঝিম, তার আলাদা মাধুর্য। বাঙালীর সূক্ষ্ম তন্ত্রীতে অনবরত সুরটি বাজে। অদ্ভুত একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। আপ্লুত না হয়ে পারা যায় না। আর কবিকুলের ওপর শ্রাবণের প্রভাব তো অনস্বীকার্য। অজ¯্র প্রিয় কবিতায় সদা ডুবে থাকার মতো গানে শ্রাবণ এসেছে, কতভাবে যে এসেছে, ভাবলে অবাক হতে হয়। শুধু কি তাই? যার শুকনো কলমে মোটেই লেখা আসেনি, আসে না, সেও মনের দু-এক কথা ছন্দে বেঁধে ফেলেন। শ্রাবণ এমনই মাস। খুব করে উস্কে দিতে এর জুড়ি নেই। প্রেমের কবি নজরুল যেন স্বীকারোক্তি করেই লিখেছেনÑ রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঝরে শাওন ধারা।/গৃহকোণে একা আমি ঘুমহারা।/ঘুমন্ত ধরা মাঝে/জল-নূপুর বাজে,/বিবাগী মন মোর হলো পথহারা...। আজকের দিনের প্রিয় গানগুলোতেও আছে শ্রাবণ বন্দনা। চির পছন্দের একটি গানের কথা না বললেই নয়। হ্যাঁ, কথাগুলো এরকম : শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে/অঝোরে নামবে বুঝি শ্রাবণে ঝড়ায়ে/আজ কেন মন উদাসী হয়ে/দূর অজানায় চায় হারাতে...। শ্রাবণধারা মাঝে বাঙালী মনের বেদন ফুটে ওঠে। রিক্ত হিয়া হারানো প্রিয়ার তরে জেগে ওঠে। গুনগুন করে গায়- শাওন-রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে/বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে...। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাস এই শ্রাবণেই দুঃখ করে লিখেছেন, ‘কাঁদিবে সে সারা রাত,- দেখিবে কখন কারা এসে আমকাঠে সাজায়ে রেখেছ চিতা; বাংলার শ্রাবণের বিস্মিত আকাশ/ চেয়ে র’বে, ভিজে পেঁচা শান্ত স্নিগ্ধ চোখ মেলে কদমের বনে...।’ অবশ্য ষড়ঋতুর বাংলাদেশে অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই। বদলে যাচ্ছে ক্রমেই। এই এখনের কথাই ধরা যাক, প্রবল বর্ষণ কি হচ্ছে কোথাও? না, তা বলা যাবে না। আষাঢ়ের আগে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছিল। মাসের প্রথমভাগেও তা-ই। তবে শেষের ক’দিন ঠিক আষাঢ়ের ছিল না। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়া। তার পর রোদ। তীব্র দহন। রাস্তায় নামতে না নামতেই ঘর্মাক্ত শরীর। জামা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছে। কবিগুরু শ্রাবণের ছবি আঁকতে গিয়ে লিখেছিলেন- সজনি গো,/ শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা...। সেই ঘনঘটনা দেখা যাবে তো এবারও? আবহাওয়া অফিস বলছে, এবার বর্ষার আগেই বৃষ্টির সব জল ঢেলে দেয়া হয়েছে। আর তাই এই শ্রাবণে আশানুরূপ জল পাওয়া না-ও হতে পারে। বাড়তে পারে দাবদাহ। এ কেমন কথা? নাকি কথার কথা? যারা শ্রাবণ ভালবাসেন তারা একে কথার কথাই মানছেন। তাদের কাছে শ্রাবণ মানেই শ্রাবণ মেঘের দিন। সেই দিনের অপেক্ষা এখন।
×