ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্প্রেড নির্দেশনা মানছে না ১১ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৬ জুলাই ২০১৮

  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্প্রেড নির্দেশনা মানছে না ১১ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সত্ত্বেও ঋণ ও আমানতের সুদের ব্যবধান ভঙ্গ করছে ১১টি ব্যাংক। আমানতের বিপরীতে কম সুদ বিতরণ করে ঋণের বিপরীতে বেশি সুদ আদায়ের তালিকার শীর্ষে রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক লিমিটেড। তারপরই রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধানে (স্প্রেড) ৫ শতাংশের ওপরে থাকা বিদেশী ব্যাংকগুলো হলো স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন লিমিটেড, উরি ব্যাংক এবং এইচএসবিসি। বেসরকারী ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু তা মানছে না কয়েকটি ব্যাংক। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমানতের সুদের হার বেশি রাখতে হবে। যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নীতিমালার আলোকে ঋণ ও আমানতে সুদহার নির্ধারণ করতে পারে। ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ব্যাংকের কাছে প্রচুর পরিমাণে অলস টাকা পড়ে আছে। বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। আবার খেলাপী ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। এত কিছুর পরও বছর শেষে রয়েছে ভাল মুনাফা অর্জন করার টার্গেট। ফলে আমানতকারীদের দিকে খেয়াল না রেখেই বছর শেষে ভাল মুনাফা অর্জনের স্বার্থে আমানতের সুদ কমাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদেশী খাতের ছয়টি ব্যাংকের স্প্রেড ৭ শতাংশীয় পয়েন্টের উপরে অবস্থান করছে। চলতি বছরের মে মাস শেষে বিদেশী ব্যাংকগুলোর ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে মাত্র ২.১ শতাংশ। এতে গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭.২ শতাংশ। স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরের ব্যাংকগুলো হলো বিদেশী ব্যাংকগুলো হলো- স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, ব্যাংক আল ফালাহ ও সিটি ব্যাংক এনএ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারী খাতের ছয় ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর অবস্থান করছে। গত মে মাস শেষে বেসরকারী ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ১০ দশমকি ৪৯ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ সুদ; স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বেসরকারী ব্যাংকগুলো হলো ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের আমানতের বিপরীতে গড়ে এক দশমিক ৬২ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশী খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ দিয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে নিয়েছে সুদহার ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বেসরকারী খাতের এ ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েক বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ধীরে ধীরে কমছে আমানতের সুদহার। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদের হার চার দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদের হার ছিল চার দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর এর আগের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ছিল পাঁচ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় সুদের হার ছিল ছয় দশমিক আট শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছর শেষে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ছিল সাত দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত কয়েক বছর ধরে আমানতের সুদের হার কমার পাশাপাশি ঋণের সুদ হারও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংক আমানত এবং ঋণের সুদহারের ব্যবধান এখনও অনেক বেশি।
×