ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

আমেরিকায় সোশ্যালিস্টরা আসছে!

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১৫ জুলাই ২০১৮

 আমেরিকায় সোশ্যালিস্টরা আসছে!

মার্কিন কংগ্রেসের মধ্য মেয়াদী নির্বাচনের প্রাইমারীতে সম্প্রতি চারজন মহিলা প্রার্থী জয় লাভ করে দারুণ চমক ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এরা সবাই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্ল্যাটফর্ম থেকে দাঁড়ান। এদের বিজয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে এমন শক্ ওয়েভ সৃষ্টি করেছে যার কম্পন প্রবলভাবে অনুভব করছে পার্টি নেতৃত্ব। এটাকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ‘ওল্ড গার্ড’ ও এস্টাবলিসমেন্টের বিরুদ্ধে রায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি যে চারজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তারা যেভাবে ও যত ভোটে জয়ী হয়েছেন তাতে নবেম্বরের নির্বাচনে এই চারজনের জয় অবধারিত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তাদের এলাকাগুলোতে ডেমোক্র্যাটদেরই প্রাধান্য। সর্বশেষ প্রাইমারীতে একজন ডেমোক্র্যাট মহারথী ধরাশায়ী হয়েছেন রাজনীতিতে একেবারেই নবাগত এক লাতিনা তরুণীর কাছে। সোশ্যালিস্টদের বিজয় মার্কিন রাজনীতিতে বড় ধরনের মেরুকরণ ঘটাতে পারে। প্রাইমারীতে সম্প্রতি যে চারজন নারী সোশ্যালিস্ট প্রার্থীর জন্য আলোড়ন তুলেছে তারা হলেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ (২৮), সামার লি (৩০), সারা ইনামোরাটো (৩২) এবং এলিজাবেথ ফিডলার (৩৭)। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এদের বিজয়ে খুশি হয়ে নানা মন্তব্য সহকারে টুইট করেছেন। তিনি মনে করছেন এর ফলে ডেমোক্র্যাটিক শিবিরে ভাঙ্গন ধরবে এবং নবেম্বরের কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ভাল করবেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই? তাহলে সোশ্যালিস্টদের এই জোয়ার কেন? তার জন্য দেখা যাক কেন সোশ্যালিস্টরা প্রাইমারীতে এভাবে জয়ী হচ্ছে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় আগমন আমেরিকানদের মধ্যে এক নতুন উপলব্ধির সঞ্চার করেছে। তারা দেখছে যে, এই মানুষটি কিভাবে আমেরিকার এতদিনের মূল্যবোধগুলোকে পদদলিত করছেন। কিভাবে তাদের এতদিনের সুযোগ সুবিধাগুলোকে সঙ্কুচিত করে ফেলছে না তাদের মেডিকেয়ার নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তারা আবাসনকে একটা মানবাধিকার বলে গণ্য করছে এবং গৃহহীন, ঠিকানাহীন মানুষদের জন্য মাথা গোঁজার নিশ্চিত ঠাঁই চাইছে। তারা চাকরির নিশ্চয়তা চাইছে যে নিশ্চয়তা তাদের মন্দার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। তারা সকলের জন্য বিনামূল্যে সরকারী কলেজে পড়ার সুযোগ চায়। তারা সবার জন্য মেডিকেয়ার চায় এবং ইউএস ইমিগ্রেশন এ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির অবলুপ্তি চায়। তাদের এই আশা-প্রত্যাশাগুলোই প্রাইমারীতে বিজয়ী এই প্রার্থীদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে বলেছেন যে, এই লাল জোয়ার আগামী নবেম্বরে আরও বেশি সংখ্যায় রিপাবলিকানদের কংগ্রেসে এনে দেবে এবং এতে তাঁর শাসন আরও শক্তিশালী হবে। কিন্তু প্রকৃত লাল জোয়ারটা হয়ত এই যে, মার্কিন জনগণের মধ্যে বিশেষত তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ছে। আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কটেজ ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকার প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন। এটাই তার প্রথম রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই সেদিন পর্যন্ত তিনি পানশালায় পরিবেশক হিসেবে কাজ করতেন। নিউইয়র্কের ব্রনস্ক এলাকার ২৮ বছর বয়স্কা এই লাতিনা নারী প্রাইমারীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০ বছর ধরে কংগ্রেস সদস্য পদে থাকা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো কাউলিকে হারিয়ে সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছেন। পার্টিতে কাউলির র‌্যাংক চতুর্থ। তিনি স্পীকার ন্যান্সি পেলোসির স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ওকাসিও-কর্টেজ শেষ পর্যন্ত যদি নিউইয়র্কের চতুর্দশ নির্বাচনী জেলায় জয়লাভ করতে পারেন তাহলে তিনিই হবেন কংগ্রেসের কনিষ্ঠতম নারী সদস্য। এই জেলায় লাতিনের প্রধান এলাকা কুইন্স ও ব্রনস্ক অন্তর্গত। গোটা নির্বাচনী এলাকায় ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য থাকায় তার জয়লাভের সমূহ সম্ভাবনা আছে। প্রাইমারীতে কট্টর রিপাবলিকান বিরোধী কাউলির পরাজয়ে ট্রাম্প খুশি হয়ে টুইট করেছেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত ভুলে গেছেন যে, লাতিনা নারী ওকাসিও-কর্টেজ আরও বেশি ট্রাম্পবিরোধী। এর আগে গত মে মাসে পেনসিলভানিয়া থেকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের আসনে প্রার্থিতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিন তরুণ প্রগতিশীল মহিলা প্রাইমারীতে এমন সব পুরুষ প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন যারা রাজনৈতিক এস্টাবলিসমেন্টের দারুণ আনুকূল্যপ্রাপ্ত ছিল। তিন মহিলাই ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট অব আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট। তাদের মধ্যে দু’জন সামার লি (৩০) ও সারা ইনামোরাটো প্রতিনিধি পরিষদের বর্তমান সদস্য দুই জাতি ভাই ডোম কোস্টা ও পল কোস্টাকে প্রাইমারীতে নাস্তানাবুদভাবে হারিয়েছেন। বলা বাহুল্য, দুই কোস্টা হচ্ছেন পেনসিলভানিয়ার প্রবাদপ্রতিম রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। একই অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচনে প্রার্থিতা লাভের জন্য আরেক প্রগতিশীল মহিলা এলিজাবেথ ফিডলার ডেমোক্র্যাট দলীয় পুরুষ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন যিনি দলীয় নেতৃত্বের আশীর্বাদপুষ্ট। দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করার তিন মাস পর তিনি প্রার্থী পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন এবং প্রচারাভিযানের সময় অন্যান্য অভিভাবকের কাছে বাচ্চাটিকে রেখে প্রচার চালিয়েছিলেন। এই চারজন সোশ্যালিস্ট প্রার্থীর প্রাইমারীতে বিজয় এক ঐতিহাসিক ঘটনা। দেশজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের নাগরিকদের মধ্যে এক নবজাগরণ এসেছে। এ হচ্ছে তারই অংশ। এদেশের এক অতি অন্ধকার সময় এ ঘটনা হতাশার মাঝে আশার আলো জাগায় বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। আমেরিকায় এখন এক কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় যার বৈধতা ও চারিত্রিক সততা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে এবং যিনি আইনের প্রচলিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কাজ করে চলেছেন। তার ফেডারেল সরকার ক্লেপটোক্রেসির এক মহোৎসবে পরিণত হয়েছে সেখানে যে যার খুশি করে পার পেয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প আমেরিকার এতদিনের সুমহান ঐতিহ্য ও মূল্যবোধগুলোতে পদদলিত করে যেন কয়েক প্রজন্মের জন্য আমেরিকাকে কদর্যরূপে পুনর্নির্মিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এর বিপরীতে সারাদেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মহিলারা যে যেভাবে পারছে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের উপায় খুঁজে বের করে মাঠ পর্যায় থেকে গণতন্ত্রকে নতুন করে গড়ে তুলতে প্রায় অতি প্রাকৃতিক বা অলৌকিক উদ্যম নিয়ে কাজ করছেন। তারা যেন পণ করেছেন যে ট্রাম্পের অশুভ উদ্দেশ্যকে কিছুতেই সফল হতে দেবেন না। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করছেন। সেই ট্রাম্পবিরোধী প্রতিরোধের মেরুদ- হচ্ছেন শহরতলির মধ্য বয়সীরা যারা অনেক সময় ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকেও ঝাঁকুনি দিচ্ছেন। তরুণ জনগোষ্ঠী যারা ট্রাম্পের ক্ষমতার আগমনকে পচন ধরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দেখছে তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকেও বদলে দিতে চাইছে একে পরিণত করতে চাইছে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের বাহন হিসেবে। আমেরিকায় সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা এখন ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকা (ডিএসএ)। তবে একে পার্টি না বলে এ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ বলাই অধিক সঙ্গত যে, গ্রুপটি নির্বাচনের ময়দানে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করে আবার বাইরে অবিচারের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ আন্দোলন করে। আমেরিকায় সমাজতন্ত্রের এক কট্টর ও আপোসহীন প্রবক্তা বার্নি স্যান্ডার্স ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থিতা লাভের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর থেকে এই গ্রুপটির ব্যাপক প্রসার ও শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা ২০১৬-এ ৭ হাজার থেকে বেড়ে আজ ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবারের প্রাইমারীতে জয়ী চার মহিলার সবাই এই গ্রুপভুক্ত। ডিএসএর অনেক লক্ষ্য প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটদের লক্ষ্য থেকে অভিন্ন। পার্থক্য এখানে যে ডিএসএ উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটদের পাশে থেকে একত্রে কাজ করতে রাজি হলেও এর সদস্যরা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের সমাজতন্ত্র অংশটি নিয়েই সাধারণত অধিক সিরিয়াস। ডিএসএর গঠনতন্ত্রে সম্পদ ও উৎপাদনের ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সুষম বন্টন, নারীবাদ, বর্ণগত সমতা ও অগ্নিপরীক্ষামূলক সম্পর্কভিত্তিক মানবিক সমাজ ব্যবস্থার কথা বলা আছে। উৎপাদনের উপায়গুলোর ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা পুরনো ধারার অনেক ডেমোক্র্যাট এমনকি অতি উদারপন্থীদের কাছেও একটা অভিশপ্ত ও ঘৃণিত ব্যাপার। কিন্তু তরুণ সমাজের কাছে এর আবেদন অনেকখানি। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ৬১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমাজতন্ত্রকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। মহামন্দা, শিক্ষার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, স্বাস্থ্য বীমার অনির্ভরযোগ্যতা এবং কর্মক্ষেত্রের ক্রমবর্ধমান নাজুক অবস্থা সব একত্রিত হয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিদারুণ নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। কমিউনিজমের ব্যাপক পরিসরে ব্যর্থতার স্মৃতি তাদের নেই। তবে পুঁজিবাদের ব্যর্থতা তাদের চতুর্দিকে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। তবে প্রাইমারীতে নারী চতুষ্টয়ের বিজয়ের কৃতিত্ব এককভাবে ডিএসএ দাবি করতে পারে না যদিও এই চারজনের প্রার্থিতাকে এ সংগঠনটি অনুমোদন করেছে। অনেক গ্রুপই এদের পেছনে একত্রিত হয়েছিল। যেমন ওকাসিও কর্টেজের পেছনে দাঁড়িয়েছিল ‘ব্রান্ড নিউ কংগ্রেস নামে জনতুষ্টিবাদী সংগঠন এবং ইনডিজিবল’ নামে প্রতিরোধ গ্রুপ। ফিডলার, লি ও ইনামোরাটোর বিজয়ের পেছনে ডিএসএ ছাড়াও অন্যান্য গ্রুপ ছিল। সমগ্র গ্রুপই ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। প্রাইমারীতে এই চারজনের পক্ষে ভোট দিয়েছে এমন অনেক মধ্য বয়সী নারী-পুরুষ ট্রাম্পের কার্যকলাপে আতঙ্কিত হয়ে ‘কংগ্রেস পিএ’ নামে একটি উদারপন্থী গ্রুপে পূর্ণ সময় ধরে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাদের মূল ভাবনা ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচিত করা। তারা মনে করেন দলটির আজ তরুণ লোকজনকে প্রয়োজন। এদিকে ডিএসএর তরুণ সদস্যরা ট্রাম্পের মতো অশুভ শক্তির উত্থান কেন হলো তা বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি করতে পারছে এবং পারছে বলেই আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদারপন্থীরা যতটা আতঙ্কিত বোধ করছে তারা ততটা নয়। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে সমাজটা কেন আজকের এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে এবং কিভাবে সমাজকে নতুন করে গড়ে তোলা যায়। পিটাসবার্গ ডিএসএর যুগ্ম চেয়ারম্যান ২৯ বছর বয়স্কা এরিনে কোহেন মনে করেন ট্রাম্প বিপর্যয়ে প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে হুমকি বোধ করছে এবং মনে করছে তাদের ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আর সোশ্যালিস্টরা বলেন, আজকের এই অবস্থা যে শুধু ট্রাম্পের জন্য হয়েছে তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে অবক্ষয় চলতে চলতে আজকের এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। কে ক্ষমতায় আছে সেটা বড় কথা নয়, সোশ্যালিস্টদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তিবোধও দেখা যায়। তারা মনে করে বর্তমান বিপর্যয় এড়াতে সবার সঙ্গে হুড়াহুড়ি করে নেমে পড়ার চাইতে আগামীতে কয়েক দশকের মধ্যে তারা যে সমাজে বাস করতে চান সেটাকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা জরুরী। আর সে জন্যই ডিএসএর সোশ্যালিস্ট ফেমিনিস্ট কমিটিগুলো ছুটির দিন নানা ধরনের কর্মসূচী নেয় যেখানে শিশু পরিচর্যা ও বিনামূল্য লাঞ্চের ব্যবস্থা থাকে। এই কমিটিগুলো ফ্রি ক্লিনিক চালায়, মেকানিকের দোকানে বিনা খরচে গাড়ি মেরামত ও অন্যান্য সমাজ সেবামূলক কাজ করে। ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টরা অনবরত একের পর এক সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠান করে মার্কিন জীবনে মহামারী আকারে বিদ্যমান একাকীত্ব বা বিচ্ছিন্নতাবোধের প্রতিষেধক সৃষ্টির চেষ্টা করে। মার্কিন সমাজে সবকিছুতেই অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক যা একাকীত্ব সৃষ্টি করে। এই একাকীত্ব ও নিৎসঙ্গতাবোধ থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। ওকাসিও কর্টেজের বিজয় এতই আলোড়ন ও চমক সৃষ্টি করেছে যে, রিপাবলিকান বলছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে সমাজতন্ত্র মাথাচাড়া দিচ্ছে। স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন। করাটাই স্বাভাবিক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমেরিকায় সোশ্যালিস্টরা ঘৃণার পাত্র হিসেবে পরিগণিত। সাধারণ মানুষদের মধ্যে যে ধারণা পাল্টাচ্ছে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও পাল্টাচ্ছে। আর সে জন্যই প্রাইমারীতে ওকাসিও কর্টেজ, সামার লি, সারা ইনামোরাটো, এলিজাবেথ ফিল্ডারদের এই নাটকীয় বিজয়। এভাবেই ডেমোক্র্যাটরা আসছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এস্টাবলিসমেন্ট বা নেতৃত্ব সেটা চাক বা নাই চাক। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
×