ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ ফজলুর রহিম রিমন;###;শিক্ষক, ধানমন্ডি আইডিয়াল স্কুল;###;জিগাতলা, ঢাকা-১২০৯।;###;ইমেইল- [email protected];###;মোবাইল : ০১৬৮০৫৫১৬৫৪

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিশেষ আলোচনা হিসাববিজ্ঞান

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১৫ জুলাই ২০১৮

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা  বিশেষ আলোচনা হিসাববিজ্ঞান

পর্ব -২ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি দু মানে দুইটি আর তরফা মানে পক্ষ। অর্থাৎ দু’তরফা মানে দুইটি পক্ষ। যে পদ্ধতিতে প্রতিটি লেনদেনের সাথে জড়িত দুইটি পক্ষ চিহ্নিত করে একটি পক্ষকে ডেবিট ও অপর পক্ষকে সমপরিমান টাকা ক্রেডিট করা হয় তাকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে। এই অধ্যায় হতে ভালো করে শিখে রাখতে হবে পাঁচ ধরনের হিসাব গুলো। তোমাদের সুবিধার্থে হিসাবগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ ১. সম্পদ হিসাবঃ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের সুবিধার্থে ব্যবহৃত ভূমি, দালানকোঠা, আসবাবপত্র ইত্যাদিকে সম্পদ বলে। সম্পদ কে ইংরেজীতে Assets বা সংক্ষেপে ”A” বলা হয়। ২.দায়ঃ প্রতিষ্ঠানের উপর বাহিরের পক্ষের কোন পাওনা বা দাবী কে দায় বলা হয়। যেমন –ব্যাংক ঋণ, পাওনাদার,বকেয়া বেতন ইত্যাদি।দায় কে ইংরেজীতে Liabilities আর সংক্ষেপে “L” বলা হয়। ৩.আয়ঃ যে সকল খাত হতে প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ের অর্থ উর্পাজিত হয় তাকে আয় বলে।যেমন পন্য বা সেবা বিক্রয়, বিনিয়োগের সুদপ্রাপ্তি, কমিশন প্রাপ্তি, শিক্ষানবীশ সেলামি ইত্যাদি।আয়কে ইংরেজীতে ওহপড়সব বা সংক্ষেপে ও বলা হয়। ৪.ব্যয়ঃ যে সকল খাতে প্রতিনিয়ত অর্থ খরচ হয় তাকে ব্যয় বলে। যেমন –বেতন হিসাব, মজুরি হিসাব,ভাড়া প্রদান ইত্যাদি। ৫.মালিকানা স্বত্ব হিসাবঃ প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের উপর মালিকের পাওনা বা দাবিকে মালিকানাস্বত্ব বলে। যেমন মূলধন হিসাব, নীট লাভ ইত্যাদি। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “মোট ক্রয়, মোট বিক্রয়, প্রারম্ভিক মূলধন, মালিকানা স্বত্ব হ্রাস বা বৃদ্ধির পরিমান” ইত্যাদি নির্নয় করতে বলা হয়ে থাকতে পারে। “L” এর জন্য “ডেবিট- ক্রেডিট নির্ণয়,সমাপনী মূলধন , হিসাবের শ্রেণী বিভাগ” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা হয়ে থাকতে পারে। “M” এর জন্য “মুনাফা বা ক্ষতি নির্ণয়, মালিকানাস্বত্ব নির্ণয় হিসাব সমীকরনের উপর লেনদেনের প্রভাব” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। মূলধন ও মুনাফা জাতীয় লেনদেন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত সকল লেনদেনকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-১) মূলধন জাতীয় লেনদেন ২) মুনাফা জাতীয় লেনদেন। ১) মূলধন জাতীয় লেনদেনঃ যে সকল লেনদেনের মেয়াদকাল একের অধিক বছরের জন্য জন্য হয়ে থাকে সে লেনদেনকে মূলধন জাতীয় লেনদেন বলে। উদাহরন স্বরুপ মালিক যখন ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে, প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে স্থায়ী সম্পদ (আসবাবপত্র ,দালানকোঠা) ক্রয় করা, এই ধরনের লেনদেন কয়েক বছর পরপর সংগঠিত হয়। ২) মুনাফা জাতীয় লেনদেনঃ যে সকল লেনদেন এক বছরের মধ্যে অনেকবার হয়ে থাকে, সে লেনদেনকে মুনাফা জাতীয় লেনদেন বলে। উদাহরনস্বরুপ পন্য ক্রয়/বিক্রয়,বেতন প্রদান, বিজ্ঞাপন প্রদান ইত্যাদি। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “মূলধন জাতীয় লেনদেনের মোট পরিমান নির্ণয়,মুনাফা জাতীয় লেনদেনের মোট পরিমান নির্ণয়,মূলধন জাতীয় প্রাপ্তি/প্রদান,নিয়মিত খরচ/আবর্তন খরচের পরিমান, মুনাফা জাতীয় আয়/ব্যয়,বিলম্বিত মুনাফা জাতীয় ব্যয়ের পরিমান” ইত্যাদি নির্নয় করতে বলা থাকতে পারে। “L” ও “M” এর জন্য “মুনাফা জাতীয় আয়ের /ব্যয়ের মোট পরিমান, মূলধন জাতীয় প্রাপ্তি/প্রদানের মোট পরিমান নির্ণয়,বিশদ আয় বিবরনীতে অর্তভূক্ত হবে এমন লেনদেনের মোট পরিমান, মূলধন জাতীয় প্রাপ্তি ও মূলধন জাতীয় আয়ের পরিমান, মালিকানাস্বত্ব” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকতে পারে। জাবেদা তোমরা নিশ্চয় জান যে ইংরেজী “Journal” শব্দ থেকে জাবেদার উৎপত্তি। জার শব্দের অর্থ দিবস। প্রতিনিয়ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত আর্থিক লেনদেন সমূহ প্রাথমিকভাবে তারিখ অনুসারে ডেবিট –ক্রেডিট বিশ্লেষন করে যে বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলে। এই অধ্যায় হতে জাবেদার শ্রেণী বিভাগ, বাট্রা ও বাট্রার শ্রেণী বিভাগ, সাধারন জাবেদা, সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের জাবেদা,ক্রয় জাবেদা ,বিক্রয় জাবেদা, ক্রয় ফেরত জাবেদা, বিক্রয় ফেরত জাবেদা,চালান তৈরি,ডেবিট নোট /ক্রেডিট নোট তৈরি ইত্যাদি বিষয়গুলো ভালো করে শিখে রাখবে। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “মোট ক্রয়/বিক্রয়ের পরিমান নির্ণয়, চালান,ডেবিট/ক্রেডিট নোট কারবারি বাট্রা , ক্রয় বাট্রা, বিক্রয় বাট্রার পরিমান নির্ণয়,আনুসঙ্গিক খরচের পরিমান নির্ণয়” করতে বলা থাকতে পারে। “L” ও “M” এর জন্য ক্রয় “জাবেদা, বিক্রয় জাবেদা, সাধারন জাবেদা, চালান তৈরি,ক্রয় ফেরত জাবেদা, বিক্রয় ফেরত জাবেদা” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকতে পারে। উল্লেখ্য “M” এর অংশে কিছু খতিয়ান তৈরি করতে বলা থাকতে পারে। খতিয়ান ইংরেজী শব্দ Ledger এর বাংলা শব্দ হচ্ছে খতিয়ান। খবফমব শব্দের অর্থ হচ্ছে সেলফ বা তাক।আমরা তাকে বা আলমারিতে যেভাবে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিষ গুছিয়ে রাখি, তেমনি খতিয়ানে প্রতিষ্ঠানের হিসাব সমূহ সাজিয়ে রাখা হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খতিয়ান প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক। এই আধ্যায় হতে অংক সমাধান করার জন্য খতিয়ানের ছক সমূহ,লেনদেন কিভাবে খতিয়ানে পোষ্টিং দিতে হয় তা ভালো করে জেনে রাখবে। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “জাবেদা,ক্রয় জাবেদা,কারবারি/নগদ বাট্রার পরিমান” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। এই অধ্যায় হতে “L” ও “M” এর জন্য “ঞ” ছকে খতিয়ান প্রস্তুত, আধুনিক/জের পদ্ধতিতে খতিয়ান প্রস্তুত, সাধারন খতিয়ান, সহকারী খতিয়ান ইত্যাদি তৈরি করতে বলা থাকবে। উল্লেখ্য জাবেদা ও খতিয়ান মিলে একত্রে একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকতে পারে। রেওয়ামিল হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য খতিয়ানের উদ্ধৃত্ত সমূহ নিয়ে হিসাব বর্ষের শেষ দিনে যে বিবরনী প্রস্তুত করা হয় তাকে রেওয়ামিল বলে। এই অধ্যায়ের অংক সমাধান করার জন্য চলতি সম্পদ, চলতি দায়, দীর্ঘ মেয়াদী দায় , মালিকানাস্বত্ব, সমন্বিত ক্রয়, বিক্রিত পন্যের ব্যয়, কোন হিসাব ডেবিট দিকে যাবে, কোন হিসাব ক্রেডিট দিকে যাবে, কোন কোন হিসাবগুলো রেওয়ামিলে আসবেনা এই বিষয়গুলো ভালো করে জেনে রাখবে। তোমাদের সুবিধার্থে কয়েকটি বিষয় নিন্মে তুলে ধরা হলোঃ মনে রাখবে সকল সম্পদ ও ব্যয় রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে। সকল ধরনের আয়,দায় ও মালিকানাস্বত্ব রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে যাবে। যে সকল হিসাব সমূহ রেওয়ামিলে আসবেনা তা হলো ১.প্রারম্ভিক হাতে নগদ/ ব্যাংক জমা (০১.০১....) ২. সমাপনী মজুদ পন্য (৩১.১২...) ৩.সম্ভাব্য দায় এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “কোন কোন হিসাবগুলো রেওয়ামিলে আসবেনা তার পরিমান, চলতি সম্পদ, চলতি দায়, দীর্ঘ মেয়াদী দায় ,মুনাফা জাতীয় আয়/ব্যয়,মূলধন জাতীয় প্রাপ্তি/প্রদান” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। “L”ও “M” এর জন্য “রেওয়ামিল প্রস্তুত করন , মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য,মোট সম্পদ/দায়ের পরিমান নির্নয়, অশুদ্ধ রেওয়ামিল শুদ্ধভাবে প্রস্তুত,অনিশ্চিত হিসাব প্রস্তুত” ইত্যাদি বলা থাকবে। উৎপাদন ব্যয় বিবরণী কোন উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানের পন্য বা সেবা উৎপাদন করতে যে ব্যয় হয় তা উল্লেখ করে মুনাফা নির্ণয়সহ বিক্রয়মূল্য নির্ধারনের জন্য যে বিবরনীর প্রস্তুত করে তাকে উৎপাদন ব্যয় বিবরনী বলে। এই অধ্যায়ের অংক সমাধান করার জন্য উৎপাদন ব্যয়ের উপাদান সমূহ , প্রত্যক্ষ খরচ, পরোক্ষ খরচ,কারখানা খরচ, বিক্রয় ও বিতরন খরচ,অফিস ও প্রসাশনিক ব্যয় এবং মূল বইতে প্রদত্ত ফর্মূলাটি ভালো করে জানা থাকতে হবে। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য মোট প্রত্যক্ষ খরচ, মোট পরোক্ষ খরচ,মূখ্য ব্যয় নির্ণয়,পরিচালন ব্যয়, প্রসাশনিক ব্যয়,ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। “L”ও “M” এর জন্য “মোট ব্যয় নির্ণয়,উৎপাদন ব্যয় নির্ণয়, বিক্রয় মূল্য নির্ণয়, মুনাফা নির্ণয়” ইত্যাদি বলা থাকতে পারে। পারিবারিক ও আত্নকর্মসংস্থান মূলক হিসাব পরিবারের আয়-ব্যয় ও সম্পদ -দায়ের ভিত্তিতে পারিবারিক হিসাব প্রস্তুত করতে হয়। পারিবারিক হিসাব প্রস্তুতের মাধ্যমে পারিবারিক তহবিলের পরিমান, পারিবারিক আয় বা ব্যয় উদ্ধৃত্ত,বছরের শেষে মোট সম্পদ ও দায় দেনার পরিমান নির্ণয় করা যায়। এই অধ্যায় হতে “K” এর জন্য “পারিবারিক/ প্রারম্ভিক তহবিল ,মূলধন জাতীয় ব্যয়, বাৎসরিক আয়, মুনাফা জাতীয় আয়/ব্যয়” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। “L” এর জন্য “আয়-ব্যয় বিবরনী/আয় বা ঘাটতির পরিমান, প্রাপ্তি-প্রদান হিসাব/সমাপনী নগদ উদ্ধৃতের পরিমান,মোট প্রাপ্তির উপর খাদ্য-সামগ্রীর শতকরা হার” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। “M” এর জন্য “আর্থিক অবস্থার বিবরনী, আয়-ব্যয় বিবরনী/আয় বা ঘাটতির পরিমান” ইত্যাদি নির্ণয় করতে বলা থাকবে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা তৃতীয় ও শেষ পর্বে তোমাদের জন্য একটি নমুনা প্রশ্ন থাকবে যা তোমাদের হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষার ২/১ দিন পূর্বে ছাপানো হবে।
×