ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল বাড়াচ্ছে পণ্যমূল্য, যানজটে ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৫ জুলাই ২০১৮

 ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেল বাড়াচ্ছে পণ্যমূল্য, যানজটে ভোগান্তি

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকু- এলাকায় স্থাপিত ওজনস্কেল বাড়িয়ে দিচ্ছে ভোগ্যপণ্যসহ সকল ধরনের পণ্যের পরিবহন ব্যয়। চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানগুলোকে থমকে যেতে হয় সীতাকুন্ডের দারোগারহাট এলাকায়। সেখানে মনগড়া চার্জ আদায়ের পাশাপাশি চলে হয়রানিও। পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর জন্য তৈরি করা এই প্রতিবন্ধকতা প্রতিদিন সৃষ্টি করে চলেছে তীব্র যানজট। মহাসড়কের পুরোটা পথ সুন্দরভাবে পাড়ি দেয়া গেলেও সেখানে নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রীদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের কোন মহাসড়কেই যেহেতু ওজনস্কেল নেই, সেহেতু এই ওজনস্কেলটি উঠিয়ে দেয়া হোক। চিটাগাং চেম্বারসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। ওজনস্কেলের কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে বিধায় দেশের অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম থেকে পণ্য সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। একই দেশে শুধু একটি অঞ্চলের ওপর এহেন কড়াকড়ি আরোপ ন্যায়সঙ্গত নয়। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম শনিবার এক জরুরী পত্রের মাধ্যমে মহাসড়কে স্থাপিত এই স্কেল স্থায়ীভাবে বাতিল করার জন্য সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৩ টন ওজন নির্দিষ্ট করে দেয়ার ফলে শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ব্যয় কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অন্য কোন মহাসড়কে ওজন নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৮২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। তাছাড়া বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রাম থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। সরকার সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে স্কেল বসিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ এসব পদক্ষেপের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঈদ-উল-আজহাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ মসলা জাতীয় দ্রব্য যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, লং, এলাচ, দারুচিনি, ধনিয়া ইত্যাদি আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় লাঘব করে পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে দুই এক্সেলবিশিষ্ট মোটরযানে ১৩ টন ওজন পরিবহনের বাধ্যবাধকতা স্থায়ীভাবে বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী প্রতি অনুরোধ জানান চেম্বার সভাপতি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওজনস্কেল যদি রাখতেই হয় দেশের সকল মহাসড়কেই রাখা হোক। তা না করে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম অংশে এ ধরনের একটি যন্ত্র বসানো বৈষম্যমূলক আচরণ। আমরা চাই, এ স্কেল সরে যাক। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। আর সীতাকু-ে স্থাপিত এই স্কেলটি প্রকারান্তরে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর মূল্যও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ট্রেড এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, সীতাকুন্ডের দারোগারহাটে স্থাপিত ওজনস্কেলটি পণ্য পরিবহনের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। সেখানে কোন পণ্যবাহী যানবাহনের ওজন ১৩ টনের বেশি হলে চার্জ আদায় করা হয়। কিন্তু এ চার্জ আদায়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন নিয়মও প্রতিপালিত হয় না। যে গাড়ি থেকে যা আদায় করা যায়, বা যে গাড়ি যেভাবে ম্যানেজ করতে পারছে সেভাবেই চলছে। তিনি জানান, ২৫ টন পণ্য পরিবহনে আগে ভাড়া পড়ত ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। কিন্তু ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহনে কড়াকড়ি থাকায় এখন সেই ২৫ টন পণ্য পরিবহনে ব্যয় হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাড়তি এ ভাড়া যুক্ত হচ্ছে পণ্যের মূল্যের সঙ্গে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, সীতাকুন্ডে ওজনস্কেল বসিয়ে প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। ওজনস্কেলে আমাদের আপত্তি থাকবে না, যদি দেশের সকল মহাসড়কে এ ধরনের স্কেল বসানো হয়। কিন্তু সীতাকুন্ডের স্কেলটি শুধু চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদেরই থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। উত্তরের জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে চাইলে পরিবহনজনিত ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, আরেকটি ওজনস্কেল রয়েছে দাউদকান্দি এলাকায়। সেটিও এই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই। শুধু এই একটি সড়কে স্কেল বসানো যুক্তিযুক্ত নয়। হয় সকল মহাসড়কে এ ধরনের স্কেল বসানো হোক, নয় তো এই দুটি স্কেলও উঠিয়ে দেয়া হোক। এদিকে, মহাসড়কের সীতাকু-ের দারোগারহাট এলাকাটিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রী সাধারণকে। পুরো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নির্বিঘ্নে যানবাহন চললেও চাকা থমকে যায় দারোগারহাট এলাকায় এসে। মাত্র কয়েক মিনিটের পথ পার হতে অনেক সময় দুই ঘণ্টাও লেগে যায়। ওজনস্কেলের কারণে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। পণ্যবাহী গাড়িগুলো বাম দিকের লাইনে থাকার নিয়ম থাকলেও স্কেল ফাঁকি দিতে তারা চলার চেষ্টা করে ডানপাশে। এতে করে ভয়াবহ যানজটে নষ্ট হয় মানুষের কর্মঘণ্টা। এ ব্যাপারে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখনও কোন পদক্ষেপ নেই। শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, মহাসড়কে ভোগান্তির এই ওজনস্কেল না থাকার পক্ষে সকল মহল।
×