ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারকারীর হার ৪১ বছরে ৮ গুণ বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ জুলাই ২০১৮

 পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারকারীর হার ৪১ বছরে ৮ গুণ বেড়েছে

নিখিল মানখিন ॥ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার গত ৪১ বছরে ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর গড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৫ শতাংশ। এমন দাবি করেছে সরকার। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ব্যয়ের তুলনায় পদ্ধতি ব্যবহারকারীর এ বৃদ্ধির হার মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ১৯৭৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর পদ্ধতি ব্যবহারকারী গড়ে মাত্র ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রপআউটের হার এখনও ৪২.২ শতাংশ। ১৭.৬ শতাংশ দম্পতির মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। আর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষের এখন যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু অসচেতনতা ও পদ্ধতি উপকরণের দুষ্প্রাপ্ততায় অনেক দম্পতির বেশিসংখ্যক সন্তান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে। পরিাবর পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিসংখ্যানে পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বৃদ্ধির চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তবে প্রত্যাশিত হারে নয়। অধিদফতর জানায়, ১৯৭৫ সাল থকে প্রতি বছর পরিবার পরিকল্পনা ব্যবহারকারীর হার গড়ে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৫০ সালে ১ কোটি ছিল। তা ২ শ’ বছর পর ১৯৫১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২ কোটি ৩ লাখ হয়। এই জনসংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ হয় ৯০ বছরে (১৯৪১ সালে )। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৯৭৯ জন মানুষ। বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল উর্ধগামী। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করলেও তা ছিল পূর্বের বৃদ্ধির তুলনায় একেবারেই উদ্বেগজনক। পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ১৯৭৫ সালের ৭.৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে ৬১.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার সন্তোষজনক হারে বাড়েনি। ১৭.৬ শতাংশ দম্পতিদের মধ্যে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই অপূর্ণ চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯.৮ শতাংশ। এ বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। আর ২০ থেকে ২৪ বয়সী ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। এর এক-তৃতীয়াংশ ১৯ বছর বয়স হওয়ার আগেই মা বা গর্ভবতী হয়ে যান। স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ৭ ভাগ স্থায়ী এবং ৮ দশমিক ৬ ভাগ দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পদ্ধতি গ্রহণের হার এখনও অনেক কম। শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ পুরুষ স্থায়ী এবং অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। এদিকে, প্রতি বছর পরিবার পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পেছনে সরকার ও বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু ব্যয়ের তুলনায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম কাজ দেখাতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফলতার মুখ দেখছে না পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়ে গেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগের মতো সেবা দিচ্ছেন না মাঠকর্মীরা। প্রচারও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অধিদফতরের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদ ধারণকারীদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব ও মামলা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শীঘ্রই দেশে জনসংখ্যার বিষ্ফোরণ ঘটবে এবং জাতীয় জীবনে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে।
×