ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজও মাঠে থাকবেন

তিনিই বড় প্রেরণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৫ জুলাই ২০১৮

 তিনিই বড় প্রেরণা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরতে চান। আর তর সইছে না তার। অধৈর্য হয়ে পড়েছেন তিনি। বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবার কিতারোভিচ। গত বুধবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রোয়েশিয়া উঠেছে ফাইনালে। আজ মহারণ। সামনে ফ্রান্স। কোলিন্ডা শনিবার বলেছেন, তিনি ‘ভীষণ উত্তেজিত। ম্যাচ শুরুর আগ পর্যন্ত কিভাবে অপেক্ষা করব তা নিজেও বুঝতে পারছি না।’ মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে আজ উপস্থিত থাকবেন ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট নিজের প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে। কোলিন্ডা বললেন, ‘আমার বিশ্বাস চ্যাম্পিয়ন হব আমরাই।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’কে ক্রোয়েশিয়ার জার্সি উপহার দিয়েছেন কোলিন্ডা। এবার ক্রোয়েশিয়ার জার্সি উপহার দেবেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোকে। ক্রোয়েশিয়া প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘রাজনীতিবিদ কিংবা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়। একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে মস্কোয় হাজির হয়েছি। ফাইনাল মানেই টানটান উত্তেজনা। আশা করব একটা ভাল ম্যাচ হবে।’ আর সেই ম্যাচে কাপ জিতবে আমার ‘সোনার ছেলেরা’। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় স্থান পেয়েছিল। এবার ফাইনালে। আর একটা ধাপ। জিততে পারলেই ইতিহাস তৈরি করবেন মডরিচ, রাকিটিচরা। ফাইনাল দেখার জন্য ক্রোয়েশিয়া থেকে অনেক সমর্থক আসছেন মস্কোয়। পাসপোর্ট নিয়ে যাতে কোন সমস্যা না হয় তাই ক্রোয়েশিয়া প্রশাসন বাড়তি সময় কাজ করে চলেছে। ক্রোয়েশিয়া ফুটবল সংস্থা অবশ্য ফিফার কাছে বাড়তি টিকেটের আবেদন করেছিল। কিন্তু টিকেট শেষ। তাই কালোবাজারে টিকেট কেনা ছাড়া উপায় নেই। সেমিফাইনাল মিস করেছেন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠক থাকায়। তবে ফাইনাল মিস হচ্ছে না। এবার স্বপ্ন বুনছেন কাপ নিয়ে দেশে ফেরার। দল যে ফাইনালে উঠে গেছে। তাই কাপ জেতার প্রত্যাশা তিনি করতেই পারেন। এর আগে বিশ্বকাপের ফাইনালে অনেক দেশই উঠেছে। ভবিয্যতে অনেক দেশই উঠবে। কিন্তু দেশ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার আগে কোন দেশের প্রেসিডেন্টকে এইভাবে উৎসবে মেতে উঠতে দেখা যায়নি অতীতে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার সব থেকে ‘বড় সমর্থক’ সেই দেশের প্রেসিডেন্ট। প্রিয় দেশ তথা দল ক্রোয়েশিয়া সোচিতে স্বাগতিক রাশিয়াকে হারানোর পর প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবর কিতারোভিচ যেভাবে উদযাপন করেন তা ইতিমধ্যে ইতিহাসে ঢুকে গেছে। দুই সন্তানের জননী কিতারোভিচ প্রাক্তন ফুটবলারও বটে। জাতীয় দলে না হলেও খেলেছেন ক্লাব ফুটবল। নকআউট শুরুর পর থেকেই দেখা যাচ্ছে মধ্য চল্লিশ বছর বয়সী এই ভদ্রমহিলাই ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের ‘মেন্টর’। কেন বলা হচ্ছে এই কথা? কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে লুকা মডরিচ, পেরিসিচরা তখনও ড্রেস চেঞ্জ করেননি। ২০ বছর পর দেশ সেমিফাইনালে ওঠায় কোলিন্ডা এতটাই উত্তেজিত ছিলেন যে ব্যক্তিগত সচিব ও নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েন। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালেও ডেনমার্ককে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পরও তিনি ড্রেসিংরুমে গিয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তবে কোয়ার্টার ফাইনালের রাতে তিনি একটু আগেই ড্রেসিংরুমে ঢুকে যান। তাকে এত দ্রুত ড্রেসিংরুমে ঢুকতে দেখে সুবাসিচ, রাকিটিচরা হকচকিয়ে যান। তবে ফুটবলের টানে ভদ্রমহিলার আবেগ সত্যিই দেখার মতো। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি প্লেনে ‘বিজনেস ক্লাসে’ মস্কো আসেননি। জাগ্রেব থেকে অন্য ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ইকনমি ক্লাসে মস্কো আসেন । ফাইনালের আগেও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দেখার জন্য তিনি ফিফা কিংবা আয়োজক রাশিয়ার কাছে টিকেট চাননি। তিনি ফ্যান আই ডি’র মারফত ইন্টারনেটে আগে কাটা টিকেট নিয়ে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে বসেই খেলা দেখতে থাকেন। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথে তিনি ফিফা ও রাশিয়া সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলিত হন। কোলিন্ডার ফুটবলপ্রেম দেখে এই আবেগতাড়িত প্রেসিডেন্টের জন্য ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্টিনো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভিভিআইপি বক্সে বসার ব্যবস্থা করেন। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপের অন্যতম নায়ক তথা ক্রোয়েশিয়া ফুটবল সংস্থার বর্তমান সভাপতি ডেভর সুকারের পাশে বসে খেলা দেখেন কোলিন্ডা। সেদিন তার পাশে বসে ছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্র মেডভেদ। ক্রোয়েশিয়া প্রথম গোল করার পর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো হাততালি দিতে থাকেন। যা দেখে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অবাক হয়ে যান। অতিরিক্ত সময়ে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গেলে তো ভিভিআইপি বক্সে কোলিন্ডা কিতারোভিচকে নাচতে দেখা যায়। যা দেখে দিমিত্র মুখ ঘুরিয়ে নেন। পরে টাইব্রেকারে জেতার পর তিনি রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দিকে এগিয়ে যান। তখন দিমিত্র তার সঙ্গে সৌজন্যসূচক হাত মেলান। ক্রোয়েশিয়ার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট তাই এখন রাশিয়ান মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। ইকনমি ক্লাসে তিনি সাধারণ সমর্থকদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তা পোস্ট করেন। মস্কোর বিভিন্ন সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি একটি রাশিয়ান ওয়েবসাইটে বলেছেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলপ্রেমী। যৌবনে ফুটবল খেলেছি।’ খেলোয়াড় ছিলাম বলেই ফুটবলের প্রতি আমার এত টান, ভালবাসা। দেশের প্রেসিডেন্ট বিশ্বকাপের আসরে এসে যেভাবে উজ্জীবিত করছেন তাতেই হয়তো তেতে গেছেন পেরিসিচ, লুকা মডরিচরা। ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচ বলেছেন, ‘অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আমাদের প্রেসিডেন্টই বিশ্বকাপ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে তার সন্মান রক্ষা করেছি। এবারের চেষ্টা থাকবে কাপ নিয়ে একই উড়োজাহাজে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে দেশে ফেরার।
×