ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি, প্রতিষ্ঠান বাজেয়াফত করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৫ জুলাই ২০১৮

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি, প্রতিষ্ঠান বাজেয়াফত করতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি সভা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিষ্ঠান বাজেয়াফত ও সরকারের ভেতর থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে বরখাস্তসহ ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট একদিনের জন্য ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ধারা প্রত্যাবর্তন করবে। শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও দেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার প্রত্যয়’ শিরোনামে মুক্তিযোদ্ধাদের এ প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। সমাবেশের সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) হেলাল মোর্শেদ ও কবির আহমেদ খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ইসমত কাদির গামা, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামুকার সদস্য মেজর (অব) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক মিয়া প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি আর একবার ক্ষমতায় আসে কি হবে বুঝতে পারেন? ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বাংলাদেশে। বিএনপি যদি একদিনের জন্য ক্ষমতায় আসে, ওই এক দিনেই বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়ে যাবে, বিএনপি যদি এক দিনের জন্য ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশে লাশের পাহাড় জমে যাবে। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষের ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে, তার মূলোৎপাটন করতে হলে দেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের শত্রুরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে আমরা পারব না কেন? আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে তারা আমাদের বার বার চ্যালেঞ্জ করবে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের বিএনপি ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ বিএনপি। এই বিএনপি আপনাদের আমার বাড়ি ছাড়া করবে। মনে কি আছে গ্রাম ছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মীরা এই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বছরের পর বছর অনেকটা লঙ্গরখানার মতো করে দুঃসহ জীবন যাপন করেছে। মনে কি আছে বরিশাল, ভোলায় গোপালগঞ্জে কত দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে। কী ভয়াল দূর্বিষহ জীবন যাপন করেছে এদেশের সংখ্যালঘুরা। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা মহিলাদের ধর্ষণ, ঘরে ঘরে অত্যাচার, পুকুরের মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। বসত ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এই হচ্ছে বিএনপি। সেই ইতিহাস কি ভুলে গেছেন? বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে এক দিনের জন্য ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ধারায় প্রত্যাবর্তন করবে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের বিকল্প বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি যদি আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারে বাংলাদেশে একদিনেই রক্তের নদী বয়ে যাবে, দেশ সন্ত্রাসের লীলাভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে। একদিনেই বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানী ভাবধারায় প্রত্যাবর্তন করবে। ২০০১ সালের মতো নীলনক্সার নির্বাচন বাংলাদেশে আর সম্ভব নয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিষ্কার বলতে চাই বাংলাদেশে ২০০১ সালের নীলনক্সার নির্বাচনের স্বপ্ন আর সফল হবে না। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সাল মার্কা নির্বাচন যাতে না হতে পারে, আগুন সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যাতে না হয়, সে কারণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া আমাদের আর কোন আস্থার ঠিকানা নেই। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে, পরাভূত করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করতে সবাইকে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাজনীতি করতে পারে না। মুকিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের শুধু বিচার নয়, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আর আগামী নির্বাচনে সব ভেদাভেদ ভুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনর্বার বিজয়ী করতে হবে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছেন এবং খালেদা জিয়া ওই শক্তিকে আরও হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। বিএনপি রাজাকার, জঙ্গী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রক্ষা করার জন্যই মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে থাকে। আসলে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাই তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। নৌ-পরিবহণমন্ত্রী প্রতিনিধি সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেধার ভিক্তিতে চাকরি দেয়া জামায়াত-শিবির, যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তান যাতে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দেয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতা বিরোধী যারা সরকারের ভিতরে থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। যুদ্ধাপরাধদের স্থাবর অস্থাবর সম্পতি ও জামায়াত-শিবির কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াফত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুন্নকারী, মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের নিয়ে কটাক্ষকারীদের দেশদ্রোহী হিসেবে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ২০০১, ১৩, ১৪ ও ১৫ সালের তা-বের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কোটা সংস্কারের নামে অগ্নিসংযোগ. নাশকতা, অরাজকতা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি সমাবেশে সারাদেশ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক সাবেক কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
×