ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীর নির্দেশেই ফরহাদকে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৫ জুলাই ২০১৮

  বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীর নির্দেশেই ফরহাদকে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ১৫ জুন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগের দিন জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলি চালিয়ে বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেনকে হত্যার ঘটনায় আরও পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত ৬ জন গ্রেফতার হলো। আরও কয়েকজন পলাতক আছে। ইতোপূর্বে ফরহাদ হোসেন হত্যায় জড়িত দুই আসামি ডিবি পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী রমজানের নির্দেশে ফরহাদ হোসেনকে হত্যা করা হয় বলে গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৪টি অত্যাধুনিক পিস্তল ও ১২ রাউন্ড তাজা বুলেট। গত ১০ জুলাই ফরহাদ হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয় আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে সুজন। সুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে প্রকাশ পায় হত্যাকা-ে জড়িত অন্যদের নাম। সেই জবানবন্দীর সূত্র ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানের সার্বিক নির্দেশনায় রাজধানীর গুলশান থেকে আসামি জাকির হোসেন ও আরিফ মিয়াকে আর মিরপুরের শাহ আলী থানা এলাকা থেকে আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনির, বদরুল হুদা ওরফে সৌরভ ও বিল্লাল হোসেন ওরফে রনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৪টি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন ও ১২ রাউন্ড বুলেট। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জানান, বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী রমজানের নির্দেশেই ফরহাদ হোসেনকে হত্যার ঘটনাটি ঘটে। এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে রমজানের সন্ত্রাসী গ্রুপটি। এতে প্রতিবাদ করায় রমজান ফরহাদ হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক রমজান তার ছোট ভাই সুজন ও সহযোগী জাকির ও আরিফকে ফরহাদকে হত্যার দায়িত্ব দেয়। ফরহাদকে হত্যার কয়েক দিন আগেই রমজান ভারতে চলে যায়। রমজান এখনও ভারতে পলাতক। পরবর্তীতে হত্যার দায়িত্ব পায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ওরফে কলিন্স। সে হত্যার দায়িত্ব দেয় তাদের বেতনভুক শূটার নুর ইসলাম, অনির, সৌরভ ও সাদকে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫ জুন সকালে খুনীরা উত্তর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারে শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী গ্রুপের বাংলাদেশের সামরিক কমান্ডার অমিতের সঙ্গে খুনের বিষয়ে আলোচনা করে। সেখান থেকে সুজনের সঙ্গে হত্যাকান্ডের আরেক সহযোগী অমিত ছাড়া সবাই মিলে একটি রিক্সার গ্যারেজ থেকে অস্ত্র নেয়। অস্ত্রগুলো খুনীদের কাছে বুঝিয়ে দেয় মেহেদীর আরেক সহযোগী পুলক ওরফে পলক। পরে অমিতের নির্দেশনা অনুযায়ী নুর ইসলাম, অনির ও সৌরভ মূল কিলিং মিশনে অংশ নেয়। আর তাদের ব্যাকআপ হিসেবে ঘটনাস্থলের কিছু দূরে অবস্থান করতে থাকে সাদ ওরফে সাদমান। শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তর বাড্ডার আলীর মোড়ের কাছে বায়তুস সালাম জামে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা ফিল্মিস্টাইলে ফরহাদ হোসেনকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। ফরহাদ হোসেনের বুকে ও মাথায় গুলি লাগলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ফরহাদ হোসেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও ওই ভোট হয়নি। তিনি বাড্ডা ইউনিয়ন (বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর খুনীদের আরেক সহযোগী আরিফ আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ হোসেনকে চিনিয়ে দিয়েছিল। হত্যার পর মোটরসাইকেলযোগে পালানোর সময় বাড্ডা লিংক রোডে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির কবলে পড়ে। এ সময় নুর ইসলাম ও অনির পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পর পল্লবীতে অমিতের কাছে গিয়ে অস্ত্র জমা দেয় খুনীরা। অমিত খুনীদের মধ্যে এক লাখ টাকা ভাগ করে দেয়। এরপর খুনীরা বরিশালে গিয়ে আত্মগোপন করে। কিছুদিন থাকার পর তারা আলাদা আলাদাভাবে ঢাকায় আসে। হত্যার পর রমজানের ছোট ভাই সুজন ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সে ঢাকায় আসে। খুনীরা দেশে আসার খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ গত ৪ জুলাই মধ্যরাতে বাড্ডার সাঁতারকুলে অভিযান চালায়। সেখানে খুনীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলি হয়। গোলাগুলিতে ফরহাদ হত্যাকান্ডের জড়িত দুই খুনী নুর ইসলাম ওরফে সানি (২৮) ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদীর সামরিক কমান্ডার মাহবুবুর রহমান ওরফে অমিত (৩৫) নিহত হয়। ডিবি কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানান, বাড্ডা-গুলশান এলাকায় গ্রেফতারকৃত কিলারদের নিয়ন্ত্রণ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষসন্ত্রাসী আশিক ও মেহেদী। তার মধ্যে মেহেদী আমেরিকায় ও আশিক ভারতে পলাতক। গ্রুপটির আরও কিছু সন্ত্রাসী বর্তমানে সুইডেন, ফ্রান্স ও মালয়েশিয়ায় পলাতক। এরমধ্যে আশিক বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে বিশাল একটি ক্যাডার বাহিনী পরিচালনা করত। বিদেশে থাকা সন্ত্রাসীরা রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে। গ্যাংটি চেষ্টা করছে, পুনরায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে ও আধিপত্যকে বিস্তার করতে। এজন্য তারা নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে।
×