ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ পাচারের ঝুঁকি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৫ জুলাই ২০১৮

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থ পাচারের ঝুঁকি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেছেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আমরা এটাকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রমে মানুষের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। যা ব্যাংকগুলোর জন্য অশনিসংকেত। এসব সমস্যা কাটাতে ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান গবর্নর। ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জন্য ‘অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ’ বিষয়ক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। আরও বক্তব্য রাখেন তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি মোঃ বোরহান উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কনসালটেন্ট দেব প্রসাদ দেবনাথসহ অন্যরা। গবর্নর বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এটা কেন হচ্ছে, এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা- সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নজর রাখছে। তিনি আরও বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের ঝুঁকি বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে আমরা এটা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস। দারিদ্র্য, বৈষম্য ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এ খাত। সে কারণে বেসরকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। ফজলে কবির বলেন, সম্পদের সুষম ব্যবহার ও অপচয় রোধের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা বান্ধব নীতি সংস্কারের ফলে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল। এ অগ্রযাত্রা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। গর্বনর বলেন, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন আমার, আপনার, সবার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্বনর বলেন, সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষকে নিয়োগ দিতে হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে হবে। তাহলেই ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা আসবে। বিএফআইইউয়ের প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, সরকারের বিভিন্ন এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কার্যক্রমের কারণে দেশ থেকে অর্থপাচারের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিককালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ রাখার পরিমাণ কমে যাওয়া তার একটি বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, মানি লল্ডারিংয়ে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ একসময় ৫২তম থাকলেও বর্তমানে ৮২তম স্থানে চলে এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে। তিনি আরও বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান বেশ ভাল। এটি ধরে রাখতে অপরাধমুক্ত, স্থিতিশীল ও দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএফআইইউয়ের উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারের পরিমাণের দিক থেকে আমাদের অবস্থান ভারতের নিচে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাইবার ক্রাইম। এশিয়ার দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে আইনের শাসন ও সুশাসনের কিছুটা ঘাটতি থাকায় এখানে এ ঝুঁকির পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাত অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য পড়েছে। প্রধান প্রধান ঝুঁকিগুলো নিয়ে বিশেষ ভাবনার প্রয়োজন আছে। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন এখন বিশ্বজুড়ে একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ব্যাংক এশিয়ার ডিএমডি মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, দেশ-বিদেশে অর্থায়ন কর্মকান্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থ সন্ত্রাসের পরিমাণও বাড়ছে। বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সভাপতিত্ব করেন বিএফআইইউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক এ বি এম জহুরুল হুদা।
×