ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোটাসংক্রান্ত কমিটি দেশবিদেশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৫ জুলাই ২০১৮

  কোটাসংক্রান্ত কমিটি দেশবিদেশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চাকরিতে কোটা ইস্যুতে সরকার গঠিত কমিটি দেশ-বিদেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের আরেকটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সকলকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, কোটা সমস্যার সমাধানে সরকার এখন একেবারে ‘রাইট ট্রাকে’ আছে। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থাকবে বলে আবারও জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন। আমিও এ কথার পুনরাবৃত্তি করছি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এদিকে রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কোটা সংস্কারেরর বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার রাজধানীতে পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে তারা এসব কথা বলেছেন। সেতুভবনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারী চাকরিতে কোটা বিষয়ে সরকারের গঠিত কমিটি দেশ-বিদেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। আন্দোলনকারীদের আরেকটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতার বিষয়ে সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা এসব বিষয়ে কেন কথা বলছেন, সেটা তাদের বিষয়। আমি বলতে চাই, কোটা সমস্যার সমাধানে সরকার এখন একেবারে ‘রাইট ট্রাকে’ আছে, ফর্মালি একটা কমিটি গঠন হয়েছে কেবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে। এই কমিটি খোঁজ-খবর নিচ্ছে, অন্যান্য দেশের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। কোটার এ বিষয়টা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা আছেন, তাদের অনুরোধ করব ধৈর্য ধরার জন্য। প্রধানমন্ত্রী যে স্টেপ নিয়েছেন, এই পদক্ষেপের প্রতি আস্থা রেখে আরেকটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যেটা বক্তব্য সেটা হচ্ছে যে, ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়িতে যে নারকীয় তা-ব হয়েছে, তার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকেই কেবল তারা গ্রেফতার করছে। গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ আয়োজিত এক সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক কথা বলেছেন, সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছেন। আমিও এ কথার পুনরাবৃত্তি করছি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল সেই জামায়াতের এ দেশে রাজনীতি করার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার কোন অধিকার নেই। এদেশে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের সব ধরনের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে হবে। তাদের সন্তানদের সরকারী চাকরিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারা ধর্মের নামে জ্বালাও পোড়াও করেছে, মানুষ খুন করেছে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যদি ৪০ বছর পর এসে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেন তাহলে যারা জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের বিচারও হতে পারবে, হওয়া সম্ভব। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সরকারের দেয়া নানা বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধার বর্ণনা দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহনশীল। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি দাওয়া সব সময় গুরুত্ব দেন। তাই সম্প্রতি দেশের সব ঐতিহাসিক স্থান রক্ষার জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। রিমান্ড থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতা কারাগারে ॥ রিমান্ড শেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে শনিবার আদালতে আনা হয়। এদের মধ্যে দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপরজনের বিষয়ে আজ রবিবার সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। কারাগারে পাঠানো দুই নেতা হলেন, জসিমউদ্দিন (২১) ও মশিউর রহমান (১৮)। জামিন আবেদনের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তির নাম ফারুক হোসেন। বিকেলে তাদের তিনজনকেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থিত করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী রেজাউল ইসলাম তাদের জন্য জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জসিমউদ্দিন ও মশিউর রহমানের জামিন আবেদন খারিজ করেন। অন্যদিকে ফারুক হোসেনের শুনানির দিন কাল ধার্য করেন। গত ৩ জুলাই এই তিনজনকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারা তিনজনই কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের হীন পন্থা ত্যাগের আহ্বান ॥ এদিকে রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, কোটা সংস্কারেরর বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্বচ্ছ হতে হবে। পাশাপাশি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষা, তাদের বিরুদ্ধে অসত্য কোন অভিযোগ না আনা এবং নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের হীন পন্থা ত্যাগ করা এবং শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন আলোচকরা। সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার : কোন পথে বাংলাদেশ?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয় উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দীন, আইনজীবী সারা হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহাবুব হোসেন, সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা, গণজাগরণের নেতা লাকী আক্তার, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, কোটা আন্দোলনকারী রাশেদের মাসহ অন্যান্যরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যে ধরনের আচরণ করা হচ্ছে গণতন্ত্রের ইতিহাসের সঙ্গে তা যায় না। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ আমাদের অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না নির্যাতিতের পক্ষে। অন্যদিকে যারা হাতুড়ি পিটা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আইনের সমান প্রয়োগ নেই এই ক্ষেত্রে। সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫ ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু আন্দোলন করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। এম হাফিজ উদ্দীন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার কোন যুক্তি দেখাতে পারছে না, বলেই হামলা-মামলা দিয়ে দমন নীতি গ্রহণ করছে। সম্মিলিত আন্দোলন ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন সরকারবিরোধী আন্দোলন মনে করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। লাকী আক্তার বলেন, কোটা সংস্কার একটি যৌক্তিক আন্দোলন কিন্তু এই আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির বা সরকারবিরোধী বলে ট্যাগ দেয়া হচ্ছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। যার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, আইনের শাসন নাই, সর্বক্ষেত্রে দ্বৈত বিচরণ করছে। দাবি আদায়ে রাস্তায় কেউ নামতে পারে না, সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যারা মারছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থা থেকে বেরোতে হলে গণজাগরণ দরকার। আলোচনায় অংশ নিয়ে কোটা আন্দোলনকারী রাশেদের মা বলেন, আমার ছেলেকে আপনারা ফেরত দেন, আমার ছেলে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেটা বাড়িতে এসেই মা বলে ডাকত, আমার জানটা ভরে যেত কিন্তু সে আজ জেলে পচতেছে। চাকরি পাওয়ার জন্য আন্দোলনে গেছলো রাশেদ, চাকরি পেলে আমাদের সংসারের অভাব দূর করত। কিন্তু আমার ছেলেকে নির্যাতন করা হচ্ছে, ফিরিয়ে দেন আমার ছেলেকে। আরও উপস্থিত ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লুবনা আক্তার, উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের জীবনান্দ জয়ন্ত, মানবাধিকার কর্মী রেদউনুর রহমান, ঢাবি শিক্ষক নুশাত ফরেজী প্রমুখ। কর্মসূচীতে হামলার নিন্দায় অভিভাবক ফোরাম ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচীতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম নামের একটি সংগঠন। অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোঃ সেলিম উদ্দিন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সাধারণ ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নিয়ে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে পুলিশী নির্যাতন, গ্রেফতার ও সন্ত্রাসী আক্রমণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাদের প্রতি নির্দয় আচরণ ও নিষ্ঠুরতা কাম্য নয়। ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি এ সংগঠনের।
×