ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২১তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী শুরু

তারুণ্যের নিরীক্ষা শিল্পমানস, আগামীর ডাক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৫ জুলাই ২০১৮

তারুণ্যের নিরীক্ষা শিল্পমানস, আগামীর ডাক

মোরসালিন মিজান ॥ নবীন বলতে যা বোঝায়, অতটা নবীন কেউ নন। অন্তত কাজ দেখে তা মনে হয় না। শিল্পীদের বয়স ২১ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বয়স বিবেচনায় যেমন তেমন, কাজের দিক থেকে তাদের অনেকেই স্পষ্ট এগিয়ে। এ সময়ের মধ্যে নিজস্ব শিল্পভাষা নির্মাণ একটু কঠিন। কঠিনেরেই তারা ভালবেসেছেন। শিল্পকর্মের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি মান। বহুবিধ নিরীক্ষা। নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ঘুরে দেখে তাই মুগ্ধ হতে হয়। মুগ্ধ-ইবা বলি কেন, অভিভূত হতে হয়। এবার ২১তম আয়োজন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে শনিবারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ইতিহাসটা একবার স্মরণ করা যেতে পারে। নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী শুরু হয়েছিল সেই ১৯৭৫ সালে। ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আয়োজনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এত ভাল ফল পাওয়া হয়েছিল যে, এর পর থেকে নিয়মিতভাবে এটি আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। মাঝখানে কিছু ছন্দপতনও ছিল। তবে থেমে থাকেনি। বর্তমানে এটি প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের স্বপ্নের প্ল্যাটফর্ম। নিজের সবচেয়ে ভাল কাজগুলো এখানে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। বড় শিল্পী হওয়ার শুরুটা বলা চলে এখান থেকেই। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ২১তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী বরং নতুন করে আশাবাদী করেছে। লক্ষণীয় বিষয়, দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে প্রতিযোগীর সংখ্যা। শিল্পকর্মের সংখ্যা বাড়ছে। এবার সবচেয়ে বেশি ৭৮৭ জন শিল্পী শিল্পকর্ম জমা দেন। মোট কাজ ছিল ১৯৭৬টি। বিপুল সম্ভার থেকে বাছাই কমিটি ৩৮০ জন শিল্পীর ৪১২টি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য নির্বাচন করে। প্রদর্শনীতে কোন কোন মাধ্যমের কাজ আছে? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন নেই কোন মাধ্যমটি? প্রায় সব মাধ্যমের চমৎকার উস্থাপনা। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, স্থাপনা, পারফর্মেন্স আর্ট একরকম মুগ্ধ করে রাখে। নতুন নতুন মিডিয়ায়ও সাবলীল কাজ করেছেন শিল্পীরা। প্রদর্শনী চলছে ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্যালারিতে। এসব গ্যালারি ঘুরে দেখা যায় বহু চিত্রকর্ম। তেলরং এ্যাক্রেলিক জলরং ওয়াশ ড্রইং ট্যাপেস্ট্রি প্যাস্টেল ও মিশ্রমাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে শিল্পভাষা। অদ্ভুত সুন্দর কিছু ছাপচিত্র আছে। উডকাঠ এচিং এ্যাকুয়াটিন্ট ড্রাইপয়েন্ট লিথেগ্রাফ ও মিশ্রমাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পীরা। দর্শনীতে আছে বেশ কিছু ভাস্কর্য। কাঠ সিমেন্ট পাথর ধাতু পাস্টার ও সিরামিকে ভাবনার বিস্তার ঘটানো হয়েছে। স্থাপনা শিল্প নিয়ে সাধারণেরও খুব আগ্রহ। এ মাধ্যমেও আছে কয়েকটি উন্নত কাজ। এ ভাবে নানা মাধ্যমে মনের কথা বলার চেষ্টা করেছেন শিল্পীরা। সমকালীন দেশ ও বিশ্বভাবনা যথারীতি প্রাধান্য পেয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যÑ নিরীক্ষা প্রবণতা। কত রকম নিরীক্ষা যে শিল্পীরা করেছেন! এ জন্য দীর্ঘ চর্চা, কনফিডেন্স, সাহস, শিল্পভাষা নির্মাণের শক্তি থাকা চাই। অংশগ্রহণকারীদের তা আছে বলেই মনে হয়েছে। উদ্বোধনী দিন প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে ৫টি ক্যাটাগরিতে মোট ৮টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার। চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র মাধ্যমের শ্রেষ্ঠদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। বিশেষ এ প্রদর্শনী চলবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত।
×