ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার লাল মরিচের কদর এখন বিশ্বজুড়ে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৫ জুলাই ২০১৮

 বগুড়ার লাল মরিচের কদর এখন বিশ্বজুড়ে

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার মরিচের ঝাল এখন বিশ্বজুড়ে। রান্নায় অন্য অঞ্চলের মরিচের দরকার যেখানে ৪ থেকে ৫টি সেখানে বগুড়ার একটি মরিচই যথেষ্ট। এভাবেই বগুড়ার মরিচ যন্ত্রে গুঁড়ো হয়ে প্যাকেটে ঢুকেছে। কনজ্যুমার গুডসের (মসলা) কোম্পানিগুলোর কাছে বগুড়ার মরিচের কদর বেশি। রফতানিকারকদেরও আগ্রহ বেড়েছে। রফতানিও হচ্ছে। আরেকদিকে কৃষকও লাল হয়ে উঠছে। বগুড়ার মরিচের তীব্র ঝালের কথা বিদেশ বিভূঁইয়ে অনেক আগেই পৌঁছেছে। হালে দেশের গুঁড়া মসলা কোম্পানিগুলো মরিচ আবাদ প্রধান যমুনা তীরের গ্রাম ও চরগ্রামে গিয়ে ক্রয় কেন্দ্র খুলেছে। মরিচ রফতানিকারকরাও মাঠ পর্যায়ে গিয়ে মরিচ কেনার জন্য চাষীদের আগাম বায়না করে রাখছে। রফতানিকারক এক প্রতিষ্ঠান জানালেন, মরিচ বিশ্বের সকল দেশের গুঁড়া মসলা কোম্পানির কাছে অতি প্রয়োজনীয়। বগুড়ার মরিচের মানের একটা আলাদা সুনাম আছে। বগুড়ায় মরিচ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় এলাকা যমুনার তীরের সারিয়াকান্দির গ্রাম ও চরগ্রাম। এরপর গাবতলির কলাকোপা, ধুনটের গোসাইবাড়ি, ভান্ডারবাড়ি, সোনাতলার রানীরপাড়া, হরিখালি এলাকায় মরিচের আবাদ অনেক বেড়েছে। সারিয়াকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কিষাণবাড়ির আঙিনা ও চাতালের মেঝেতে বিশেষ কায়দায় মরিচ শুকানো হচ্ছে। মরিচের বাজার বেশ চড়া। কৃষক দুটো পয়সা পাচ্ছে। বিশেষ করে কনজ্যুমার গুডসের কোম্পানির লোকজন গত ক’বছর ধরে মরিচ চাষ করার জন্য কৃষকদের উপকরণ সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদিত মরিচ আগাম কেনার অর্থ প্রদান করছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের কৃষক মরিচের আবাদ করে লাভসহ বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায় চলতি মৌসুমে বগুড়ায় মরিচ আবাদের টার্গেট করা হয়েছিল প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্য ছিল এই পরিমাণ জমিতে আবাদ করে ফলন মিলবে প্রায় ৮০ হাজার টন। আবাদ মৌসুমে দেখা গেল মরিচ চাষীরা টার্গেটের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছে। যে এলাকাতে আগে কখনও মরিচের আবাদ হয়নি সেই এলাকাতেও মরিচের আবাদ হচ্ছে। নানা ধরনের মরিচের মধ্যে লাল টোপা মরিচের দাম বেশি। টোপা মরিচ মাঠে পেকে যাওয়ার পর সংরক্ষণের কাজগুলো করে নারী। শুকনো মরিচ সংরক্ষণ ও বস্তায় ভরার কাজ খুব সহজ নয়। এক ধরনের তীব্র ঝাঁঝ অনেক সময় অসহনীয় হয়ে ওঠে। কয়েক নারী শ্রমিক বললেন ঝাঁঝ যতই হোক মরিচ বেচে লাভের মুখ দেখার পর ঝাঁঝের কথা আর মনে থাকছে না। কয়েক কৃষক বললেন উল্টো কথা। শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে বেশি। ফড়িয়া দালালদের কারণে লাভের অংশ কমে যাচ্ছে। পাইকারি বাজারে শুকনো মরিচ প্রতি মণ ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। খুচরা বাজরে তা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। মাঠের কৃষকের কথা মরিচ বেচে এবার লাভবান হচ্ছেন। গ্রামের বধূদেরও কথা- এখন আর শুকনো মরিচ পিষতে হয় না। হাত জ্বালা করে না। কোম্পানির লোক কিনে নিয়ে গুঁড়া করে প্যাকেটে ভরে গ্রামের মানুষের কাছেই বেচছে।
×