ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জোড়া মাথার দুই শিশুকে বাঁচানো গেল না

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৪ জুলাই ২০১৮

 জোড়া মাথার দুই শিশুকে বাঁচানো গেল না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল শেরপুরে জন্ম নেয়া জোড়া মাথার যমজ কন্যা শিশু ‘বেলা’ও ‘সুন্দরী’। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের শেরপুর থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ শুরু হওয়ার আগেই তাদের মৃত্যু হলো। গত ৭ জুলাই (শনিবার) সকাল ৯টার দিকে শহরের মাধবপুর এলাকার ফ্যামিলি নার্সিং হোমে পৌর এলাকার চাপাতলী মহল্লার গরিব রিক্সা চালক রুবেল মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২১) সিজারের মাধ্যমে জোড়ামাথার যমজ কন্যা শিশুর জন্ম দেন। সিনিয়র গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল গণি সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই ওই মাথা জোড়া লাগানো যমজ দুই বোনকে ভূমিষ্ঠ করাতে সক্ষম হন। জন্মের পর থেকেই তাদের জীবন বাঁচাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে হতদরিদ্র বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। এই দুই জোড়ামাথার শিশুর জন্ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশের পর এই দুই যমজ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এক চিকিৎসক দম্পতি। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ শরিফুর রহমান ও তার স্ত্রী শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ নায়লা হোসেন এই শিশুর যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বহন করবেন বলে বেলা-সুন্দরীর বাবা-মাকে আশ্বস্ত করেন। গাইবান্ধার তোলপাড় করা সেই তোফা তহুরার মতো সঠিক সময়ে এই দুটি শিশুর চিকিৎসা ও অপারেশন হয়ত হতে পারে এই আশায় ডাঃ মোঃ শরিফুর রহমান ১০ জুলাই ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের জাতীয় সমন্বয়ক ডাঃ সামন্ত লাল সেন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডাঃ সামন্ত লাল সেন তাদের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে ঢাকায় আনার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী গত ১১ জুলাই বেলা-সুন্দরীকে ঢামেকে আনা হয়। এর আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জোড়া মাথার যমজ শিশু তোফা ও তহুরাকে ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজ মিয়ার স্ত্রী সাহিদা আক্তার এ জোড়া শিশুর জন্ম দেন। ৭ অক্টোবর ৯ দিন বয়সে জোড়া শিশু দু’টিকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। বেলা-সুন্দরী’র মাথা জোড়া অবস্থায় থাকলেও তোফা-তহুরার কোমর জোড়া ছিল। তাদের স্পাইনাল কর্ড, মেরুদণ্ড, পায়খানার রাস্তা ও প্রস্র্রাবের রাস্তা একটাই ছিল। তবে মাথা-হাত-পা ছিল আলাদা। ১৬ জন সার্জন মিলে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। তোফা-তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’। দেশে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটাই প্রথম।
×