ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল্লাহ আল মামুনের জন্মবার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৪ জুলাই ২০১৮

 আবদুল্লাহ আল মামুনের জন্মবার্ষিকী উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের নবনাট্যচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা আবদুল্লাহ আল-মামুন। নাটক রচনা, প্রযোজনা, নির্দেশনা, পরিচালনা, অভিনয়, নাট্যশিল্পী সৃষ্টি সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অসাধারণ নাট্য পরিমন্ডল সৃষ্টি করেছিলেন দেশের এই কীর্তিমান সুসন্তান। বহুমাত্রিক এই শিল্পষ্টার জন্মদিন ছিল শুক্রবার। স্মৃতিচারণ আর নাট্য প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে এদিন তার ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করে তারই হাতে গড়া নাটকের দল থিয়েটার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এদিন বিকেলে তার সৃষ্টির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করবেন নাট্যসারথি আতাউর রহমান, অভিনয় শিল্পী সারাহ বেগম কবরী, সুবর্ণা মুস্তাফা, নাট্যজন ড. ইনামূল হক, অভিনয় শিল্পী কেরামত মওলা ও লাকী ইনাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভিনয় শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। শুরতে আতাউর রহমান আবদুল্লাহ আল মামুনের মঞ্চ নাটক নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, মামুন গুরুগম্ভীর প্রকৃতির ছিল। স্বাধীনতার পর মঞ্চ নাটকের বাধাধরা কিছু বিষয়ের বাঁধ ভেঙ্গেছে সে। তার ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘কৃতদাশ’সহ অনেক নাটক সে সময় খুবই দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। তার প্রত্যেকটি নাটক মঞ্চসুলভ ছিল। তার রচনা ও নির্দেশনা অনন্য ছিল। জীবনটা হচ্ছে উদযাপনের। মানুষ যে কর্ম রেখে যায় তার মৃত্যু নেই। আবদুল্লাহ আল- মামুনের যা কাজ তা আমাদের জীবনে উদযাপনের উপলক্ষ সৃষ্টি করেছে। সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, বাবা ও মায়ের পরে আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক মামুন ভাই। টেলিভিশনের নাটকে যা কিছু আমি অর্জন করেছি তার সবটাই ওনার কাছে শিখেছি। শুধু অভিনেতা নয়, ভাল নির্মাতা ছিলেন তিনি। তিনি নেই এই সত্যটা আমি মানি না। যতদিন বাংলা নাটক থাকবে ততদিন তিনি আমাদের মাঝে থাকবেন। ড. ইনামূল হক বলেন, মামুন আমাকে নাট্যকার বানিয়েছে। তার উৎসাহে আমি ১৯৬৮ সাল থেকে নাটক লেখা শুরু করি। তার অনেক নাটকেও আমি অভিনয় করেছি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অনেক নাটক তিনি লিখেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অভিনয়ও করেছেন। তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন। অভিনয় শিল্পী সারাহ বেগম কবরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চলচ্চিত্রে অবদানের বিষয় নিয়ে বলেন। ‘আহা কিযে সুন্দর হারিয়েছি অন্তর’ গানটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি শুরু করেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র জগতে মামুন ভাইয়ের যা কিছু ছিল আমি অবাক বিস্ময়ে অনুধাবন করেছি। তার ‘সারেং বউ’ ছবিতে তিনি আমাকে নির্বাচন করেছিলেন। সভাপতির বক্তব্যে ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, আমার নাট্যজীবন আবদুল্লাহ আল-মামুনের স্মৃতি বিজড়িত। আমার আজকের অবস্থানের নিরানব্বই ভাগই তার কৃতিত্ব। ছোট বাচ্চাদের লালনের মতো তিনি আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন। তার ভেতর এক আত্মবিশ্বাস ছিল। নাট্যসংলাপ মুখস্থ করানোই ছিল তার প্রথম কাজ। নতুন প্রজন্মের উচিত তাকে অনুসরণ করা। সবশেষে সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার প্রযোজনা আবদুল্লাহ আল-মামুন রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’। নাটকটির কাহিনী গড়ে উঠেছে ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে। যেখানে এক মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে একজন মানুষ বেড়ে উঠেছে। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর আকস্মিকভাবে সে জানতে পারে, তার গর্ভধারিণী মায়ের ধর্ম আর তার ধর্ম এক নয়। তাহলে কী মা-ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং মানবের স্বরূপ সন্ধান করা হয়েছে ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটকে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, মজিবর রহমান জুয়েল, তানজুম আরা, মারুফ কবির, সাইফ জোয়ারদার, আব্দুল কাদের ও তোফা হোসেন। নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনায় হাসান আহমেদ, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান ও আবহ সঙ্গীতে ছিলেন প্রদীপ কুমার নাগ। ‘কবিতার অনুধ্যানে আবু জাফর খান’ কবিতাসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত ॥ জীবনবোধ, হারিয়ে ফেলা স্মৃতির বেদনা, জন্ম-মৃত্যুর আখ্যান, মনুষ্যত্বের স্বরূপ, রহস্যনিবিড়তা ইত্যাকার বিষয় ভাবনার অবয়বে উন্মোচন করে কবি আবু জাফর খানের কবিতা। তার কবিতায় রয়েছে দর্শনজাত ভাষা ও আঙ্গিক-শৈলীতে নতুনত্বের ছ্ােয়া। একটা স্ব-ভাষার সূচনা করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি, যা তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। স্বভাবে আত্মমগ্ন, প্রকাশেও তাই, ধ্যানী-তপস্বীর মতোন তিনি। তার কবিতায় চিত্রকল্প একটি নিত্য অনুষঙ্গ বিষয় প্রকৃতি ঘেরা। তার কবিতা নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় ‘কবিতার অনুধ্যানে আবু জাফর খান’ শীর্ষক কবিতাসন্ধ্যা। বাংলাদেশ কবিতা মঞ্চ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বরকল্পন আবৃত্তিচক্র। আবহ সঙ্গীতে ছিলেন সালাহ উদ্দীন মাহবুব ও বংশীবাদক সুজন মিয়া। সমাপনী সম্ভাষণে ছিলেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি ফারুক মোহাম্মদ। অনুষ্ঠান সহযোগী ছিলেন ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ ও বেহুলাবাংলা। বটবৃক্ষে পানি ঢেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিল্পী সমর মজুমদার, কবি ফারুক মাহমুদ, গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী ও কবি বিমল গুহ। কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খানের জন্ম পাবনার সুজানগর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। এ পর্যন্ত এককভাবে তার ১৪টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (৭টি উপন্যাস, ৬টি কাব্যগ্রন্থ ও ১টি গল্পগ্রন্থ)। তাছাড়া যৌথভাবে দুই বাংলার কবিদের সঙ্গে ৫টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ‘বাংলাদেশ কবিতা সংসদ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক, রবীন্দ্র স্মারক সম্মাননা, আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে কথাসাহিত্যে (বাংলাদেশ) বাংলা সাহিত্য পদক, কলকাতা থেকে ড. বি আর আম্বেদকর সাহিত্য সম্মাননা, কলকাতা থেকে প্রকাশিত চোখ পত্রিকার পক্ষ থেকে চোখ সাহিত্য পদক, কবি জসীম উদ্দীন পরিষদ কর্তৃক পল্লীকবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক, ভারত থেকে নজরুল সাহিত্য স্মৃতি স্বর্ণপদক এবং মাইকেল মধুসূদন একাডেমি, ভারত থেকে মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি সম্মাননা অর্জন করেন। আত্মপ্রচার বিমুখ এই সাহিত্য প্রতিভা নীরবে-নিভৃতে নিরন্তর সাহিত্য চর্চা করে চলেছেন।
×