ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রা রা রাসপুটিন...বনি এমের গানের সুরে আলোড়িত ঢাকার শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৪ জুলাই ২০১৮

 রা রা রাসপুটিন...বনি  এমের গানের সুরে  আলোড়িত  ঢাকার শ্রোতা

মনোয়ার হোসেন ॥ সীমানা পেরুনো সুরের অনন্য এক আয়োজন। রা রা রাসপুটিন/লাভার অব দ্য রাশান কুইন ...। গত শতকের কালজয়ী এই গানের সুরে আলোড়িত হয় ঢাকার শ্রোতা। এমন আরো কিছু গানে গানে শহুরে সুররসিকেরা ভেসেছে নির্মল আনন্দের জোয়ারে। নাচের তালে মধুময় সুর ও বাণীতে বয়ে গেছে প্রাণের প্রবাহ। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়েছে সঙ্গীতের আসর। তরুণদের সঙ্গে মধ্যবয়সী কিংবা কিশোর-কিশোরীও মজেছে সুরের আবেশে। এভাবেই সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে উষ্ণতা ছড়িয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ব্যান্ডদল বনি এম। শুক্রবার রাতে পশ্চিমা এই সঙ্গীতদলের গান শোনার সুযোগ পেয়েছে প্রাচ্যের শ্রোতারা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বনি এম ফিচারিং লিজ মিশেল লাইভ ইন ঢাকা’ নামের কনসার্ট। সঙ্গীতের সীমারেখা অতিক্রম করা এ কনসার্টের আয়োজন করে ক্রেইন্স লিমিটেড? শ্রোতাদের করতালির মাঝে মঞ্চে আসেন ভোকাল লিজ মিশেলের নেতৃত্বাধীন বনি এম। সময় তখন রাত পৌনে আটটা। প্রথমেই কণ্ঠে তুলে নেন সানি শিরোনামের গানটি। গানের সঙ্গে নেচে ওঠে চার সদস্যের দল। নাচ-আশ্রিত সেই সুরে সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয়ে বয়ে যায় উত্তাল তরঙ্গ। দলের দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল ড্যাডি কুল। ষষ্ঠ পরিবেশনায় সুররসিকদের উন্মাদনায় ভাসায় রাসপুটিন শীর্ষক গানটি। এ পরিবেশনার সময় একঝাঁক শিশু মঞ্চে এসে নাচে-গানে মেতে ওঠে বনি এমের সঙ্গে। অন্যদিকে মিলনায়তনজুড়ে গানটির প্রতিধ্বনি ছড়িয়েছেন বাকিরা। মাঝে পরিবেশিত হয়েছে ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রেইন। ছুটির দিনের আমেজ ছড়িয়েছে হুররে হুররে ইট্স হলি হলি ডে শিরোনামের গান। এছাড়া তাদের গাওয়া অন্য গানগুলোর শিরোনাম ছিল মা মা বেকার; বাই দ্য রিভার অব ব্যাবিলন; বাহামা মামা; গটা গো হোমসহ একগুচ্ছ জনপ্রিয় গান। আর ঢাকার শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসে মুগ্ধ হয়ে লিজ মিশেল বলেছেন; ভালবাসি তোমাদের। বনি এম গত শতকের সত্তরের দশকের আলোড়ন তোলা ডিসকো ঘরানার সঙ্গীতদল। ইউরো-ক্যারিবিয়ান শিল্পীদের সঙ্গী করে এই ব্যান্ডদলটি গড়েছিলেন জার্মান সঙ্গীত প্রযোজক ফ্রাঙ্ক ফ্যারিয়ার। বনি এমের চার সদস্যের সবাই ক্যারিবীয় অঞ্চলের। সদস্যরা হলেন লিজ মিশেল, মারিয়া ব্যারেট, মেইজি উইলিয়ামস ও ববি ফারেল। ববি ছাড়া অন্য তিনজনই নারী। বনি এমের প্রথম এ্যালবাম ‘টেক দ্য হিট অব মি’ প্রকাশ হয় ১৯৭৬ সালে। এ্যালবামের প্রথম হিট সিঙ্গেল ‘ডেডি কুল’ যুক্তরাজ্যের টপ চার্টে স্থান করে নেয়। ড্যান্স গানের এ এ্যালবামটি ইউরোপের নানা দেশের টপ চার্টের সেরা অবস্থানটি অর্জন করে। এরপর আর তাদের পেছেন ফিরে তাকাতে হয়নি। সারা বিশে^ ড্যান্স গানের দল হিসেবে তারা ট্যুর করতে থাকে। দ্বিতীয় এ্যালবাম ‘লাভ ফর সেল’ বের করে ১৯৭৭ সালে। ‘মা বাকের’, ‘বেলফাস্ট’, মাদারলেস চাইল্ড গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৭৮ সালে প্রকাশ পায় এ্যালবাম ‘নাইট ফ্লাইট টু ভেনাস’। এ এ্যালবাম বনি এমকে এনে দেয় ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সাফল্য। ‘রিভার অব ব্যবিলন’, ‘রাসপুটিন’, ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রাইন’ গানগুলো অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। পরের এ্যালবাম ‘ওশেন্স অব ফ্যান্টাসি’ প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে। সেখানে স্থান পায় তাদের ক্যারিয়ারের আরেক তুমুল জনপ্রিয় গান ‘হুররে হুররে ইট্স আ হলি হলি ডে’। ‘হোল্ড অন আম কামিং’, ‘বাহামা মামা’র মতো জনপ্রিয় গানগুলোও এই এ্যালবামের। ১৯৮০ সালে আসে তাদের প্রথম সংকলন এ্যালবাম ‘দ্য ম্যাজিক অব বনি এম টোয়েন্টি গোল্ডেন হিটস’। ‘বুনুনুজ’ শিরোনামের পঞ্চম এ্যালবামটি আসে ১৯৮১ সালে। ‘বুনুনুজ’ ক্যারিবীয় শব্দ। অর্থ সুখ। রিদম এ্যান্ড ব্লুজ ও ইউরো ডিসকো ঘরানার গান ছিল এতে। তারপর ১৯৮২, ’৮৫, ’৮৮-তেও এ্যালবাম এনেছে বনি এম। এছাড়া ‘বনি এম মেগা রিমিক্স’ যুক্তরাজ্যে সেরা দশের মধ্যে ঢুকে পড়ে। দলটি এসময় ওয়ার্ল্ড ট্যুরেও বের হয়। ‘পাপা চিকো’ নামের একটি গান প্রকাশ করে। একপর্যায়ে দলে ভাঙ্গন ধরে। গানটিকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার ॥ ‘হুররে হুররে ইটস এ্যা হলি হলি ডে’, ‘রিভাস অব ব্যাবিলন’, ‘ডেডি কুল’, ‘রাসপুটিন’ বা ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রিং’ গানগুলোর সঙ্গে মিশে আছে অনেকের কৈশোর বা তারুণ্যের স্মৃতি। আছে গান শুনতে শুনতে নেচে ওঠা বা সুরেলা রাতের মধুর ক্ষণের নস্টালজিয়া। সেই লিজ মিশেল দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে ‘বনি এম ফিচারিং লিজ মিশেল লাইভ ইন ঢাকা কনসার্টে’ গাইবেন বিখ্যাত সব গানগুলো।
×