ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দুই রকমের বক্তব্য নতুন প্রজন্ম মনে রাখবে ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ জুলাই ২০১৮

  কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর  দুই রকমের বক্তব্য নতুন প্রজন্ম মনে রাখবে ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী চাকরিতে কোটা থাকা না থাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দুই রকমের বক্তব্য নতুন প্রজন্ম মনে রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, কোটা নিয়ে হাইকোর্ট দেখানো অগ্রহণযোগ্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে মওদুদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। যতই তারা ষড়যন্ত্র করুক নির্বাচনের আগেই আমরা তাকে মুক্ত দেখতে পারব। খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নির্বাচন করব। খালেদা জিয়াকে ছাড়া বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতীয় ঐক্যের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, আমরা যদি ঐক্যের প্রক্রিয়া সফল করতে না পারি, তাহলে দেশের মানুষ অত্যন্ত হতাশ হবেন। সেখানে কারও না কারও একটা ভূমিকা থাকতে হবে। আমাদের দেশের যারা সুশীল সমাজ তাদের তো আমরা খুব ভাল করে চিনি, যারা সরকারী মদদপুষ্ট তারা কিছু করবেন বলে মনে হয় না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়ে কথা রাখেন নাই এটা নতুন প্রজন্মসহ দেশের মানুষ মনে রাখবে। কোটা আন্দোলনের ব্যাপক সফলতার মুখে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন কোটা পদ্ধতি থাকবে না। আর ২৭ জুন সংসদে দাঁড়িয়েই তিনি বললেন কোটা পদ্ধতি থাকবে। আর এ ইস্যুতে সরকারী দল এখন বলার চেষ্টা করছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের নাকি একটা রায় আছে। আমি যতদূর জানি হাইকোর্টে এ বিষয়ে কোন রায় আছে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও হাইকোর্টের যদি এ ধরনের কোন রায় থাকে, সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ব্যাপারে আছে। নাতি-নাতনিদের ব্যাপারে আছে বলে আমি মনে করি না। মওদুদ বলেন, ভারতে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিজীবী ও সিভিল সোসাইটি আছে, তারা সরকারের যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন। আমাদের এখানে নেই তা নয়। আমাদের এখানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আসিফ নজরুল, টিআইবি ও সিপিডি আছে। কিন্তু তারা বড় কোণঠাসা। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের কথা রক্ষা করতে পারেননি। তবে তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সরকারই তো হাইকোর্টে গিয়ে সেটাকে সংশোধন করতে পারে। যদি সরকার মনে করে হাইকোর্টের রায় হলো একমাত্র বাধা। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পালন করতে এখনও রাজি। যদি নিয়ত ঠিক থাকে তাহলে কত ধরনের পথ আছে সমস্যা সমাধানের। মওদুদ বলেন, কোটা ইস্যুতে এখন যেই কথা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরে যেতে চাইছেন সেই কথা মোটেও টেকসই নয়। যদি আপনারা সত্যিকার অর্থে কোটা প্রত্যাহার করে নিতে চান আর যদি বাধা থাকে হাইকোর্টে, তাহলে সেই বাধা আপনারা অবশ্যই দূর করতে পারেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিপীড়নের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন নিরীহ ছেলে। মওদুদ বলেন, কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত রাশেদ ১০ দিনের রিমান্ডে। তার মা হাহাকার করছে যে, আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দেন। মা তো মা-ই। প্রধানমন্ত্রী আপনিও তো একজন মা। সুতরাং কেন এই অত্যাচার-নিপীড়ন। আমি মর্মাহত হয়েছি, কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর একজন বলেছেন কোটা আন্দোলনকারীরা নাকি জঙ্গী। এই মন-মানসিকতাই হলো ফ্যাসিবাদ। কারণ এসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা নেই। মওদুদ বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা চায় মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ হোক, তারা এত কষ্ট করে লেখাপড়া করে। তাদের বাবা-মা গরিব। জমি বিক্রি করে তাদের লেখাপড়া করায়। তারা মেধাবী শিক্ষার্থী। তারা পরীক্ষায় প্রথম হয়। কিন্তু তারা কোটার জন্য চাকরি পায় না। কত বছর ধরে তারা এই ব্যথা বহন করছে। তারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে কোন বক্তব্য নেই। মওদুদ বলেন, কোটা আন্দোলনকারী সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে তরিকুলের মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এই অপরাধের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে অবশ্যই হবে। আজকে আপনারা ভাবতে পারেন, আপনাদের কেউ ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। এটা ভাববেন না এজন্য যে, সকলের ওপরে একজন মহাবিচারক সবকিছু দেখছেন। রাজনীতি একটি অত্যন্ত গতিশীল বিষয়, যে কোন মুহূর্তে যে কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা তো এখন মনে করি, দেশের মানুষ মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। উপযুক্ত সময় এলে এমন উপযুক্ত কর্মসূচী দেয়া হবে, যার ফলে এই সরকারের পতন হবে। মওদুদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র এখন মৃত্যুশয্যায়। গণতন্ত্রকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সরকারের পরিবর্তন করা। এর অন্য কোন বিকল্প আমরা দেখি না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বা সরকার প্রধান মনে করে তারাই সরকারে থাকবে। এখানে অন্য কোন শরিক থাকতে পারবে না। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান প্রমুখ। সরকারের হুমকির মুখে ইসি আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে- রিজভী ॥ সরকারের হুমকির মুখে ইসি আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ইসি আগে জানিয়েছিল বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু এখন এমন নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, সরকারপ্রধান যে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখবেন, তার আরও প্রমাণ রয়েছে। যেমন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বিগত কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন, খালেদা জিয়ার জন্য কারাগারের সেল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে পরিষ্কার করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না। রিজভী বলেন, যে দেশে আইনের শাসন নেই, সেদেশে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যদের ভোটারদের সঙ্গে নয়, বরং সরকারের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। সুতরাং আগামী নির্বাচনগুলো কোন রং ও রূপে আত্মপ্রকাশ করবে, তা এখনই খুব সহজে অনুমান করা যায়। রিজভী বলেন, তিন সিটিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লজ্জভাবে সরকারী দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মামলা-হামলার হুমকির মুখে নেতাকর্মীদের নিজ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর গ্রেফতারের হিড়িক তো চলছেই। তিনি বলেন, বরিশাল ও রাজশাহীতে সরকারী দলের পক্ষ থেকে কালো টাকার ছড়াছড়ি চলছে। অস্বাভাবিক টাকা খরচ দৃশ্যমান হলেও সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। আর খুলনা ও গাজীপুরে অনুসৃত নীতি বাস্তবায়ন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এই ইসির অধীনে কখনওই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।
×