ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেট নগরী ছেয়ে গেছে ব্যানার পোস্টারে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ জুলাই ২০১৮

 সিলেট নগরী  ছেয়ে গেছে ব্যানার পোস্টারে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সাদা-কালো পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, অলিগলির রাস্তার চিত্রই পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি সমর্থিত আরিফুল হক চৌধুরীর প্রতীক সংবলিত ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলকভাবে। বাকি মেয়র প্রার্থীরা ধীর গতিতে এগুচ্ছেন। নগরীর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখাই এখন কষ্টকর। বর্ষা মৌসুমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে প্রার্থীদের নানা অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ছাপানো পোস্টার বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। পোস্টারগুলো পলিথিন পেপারে লেমিনেট করে টানাতে গিয়ে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যে কারণে আর্থিক অসচ্ছল কাউন্সিলর প্রার্থীরা পোস্টার টানানোর প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছেন। এছাড়া খোলা জায়গায় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রেও বাড়তি ব্যয় হচ্ছে প্রার্থীদের। বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে কার্যালয় নির্মাণে ব্যয় বেশি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ১৯৬ প্রার্থীর জমজমাট প্রচার চলছে আধ্যাত্মিক শহরখ্যাত সিলেটে। এখন পর্যন্ত সিলেটের কোথাও প্রচারের ক্ষেত্রে বড় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রার্থীদের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ করছেন একে অপরের বিরুদ্ধে। গত দুদিনে বিভিন্নস্থানে মেয়র প্রার্থী কামরান ও আরিফুল হকের পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে দেন দরবার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ তুলছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোদ বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। কামরানের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগে আরিফুলের পোস্টার লাগানোর কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিককে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়। এই শ্রমিককে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য আরিফুল হক বন্দর বাজার ফাঁড়িতে এসে রাত ১২টায় অনশন শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে আরিফুল কামরানের সঙ্গে কথা বললে কামরান পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই শ্রমিককে ছাড়িয়ে নেন। এভাবে চলছে প্রচার অভিযান। নগরীর উত্তর সুরমায় ব্যস্ততম সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, কোর্ট পয়েন্টের ওভারব্রিজ, নগরভবন পয়েন্ট, জিন্দাবাজার পয়েন্ট, চৌহাট্টা, আম্বরখানা পয়েন্ট, রিকাবীবাজার পয়েন্ট, মির্জা জাঙ্গাল পয়েন্ট, তালতলা পয়েন্ট, বাগবাড়ি পয়েন্ট, মীরের ময়দান পয়েন্ট, সুবিদবাজার পয়েন্ট, আখালিয়া, নয়াসড়ক, শাহী ঈদগাহ, টিলাগড়, নাইওরপুল, কাজীটুলা, সোবাহানীঘাট, মেন্দিবাগসহ সবক’টি পয়েন্টই মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার ঢাকা পড়ে গেছে। নগরী ঘুরলেই চোখে পড়ে প্রার্থীদের পোস্টার টানানোর কাজে শ্রমিকদের ব্যস্ততা। নির্বাচন উপলক্ষে পোস্টার-্যানার টানানো, লিফলেট বিতরণ, অফিস স্থাপনসহ মৌসুমি কাজে বেশ ক’টাকা রোজগারের পথ হয়েছে মৌসুমি শ্রমিকদের। মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রার্থীদের প্রচার চলছে। শুক্রবার ভিন্ন মেজাজে মসজিদভিত্তিক প্রচার অভিযানের জন্য প্রার্থীরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী এলাকার ভেতরে কে কোথায় জুমার নামাজ আদায় করবেন সেটা নির্ধারণ করে ঐ এলাকায় নিজেদের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। নামাজ শেষে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। বদর উদ্দিন কামরান ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান শুক্রবার সকালে নগরীর সুবহানীঘাটে আল্লামা হযরত আব্দুল লতিফ চৌধুরীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হযরত শাহজালাল দারুছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসার জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের সঙ্গে গণসংযোগকালে বলেন, আধ্যাত্মিক শহর সিলেটের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মার বন্ধন রয়েছে। দীর্ঘদিন আমি নগরের মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। একদিনের জন্য কখনও আমি আমার প্রাণের সিলেটবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করিনি। যতদিন আল্লাহরাব্বুল আলামীন আমাকে জীবিত রাখবেন- আমি আজীবন সিলেটের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব। এ সময় মেয়র প্রার্থী কামরানকে কাছে পেয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জড়িয়ে ধরেন এবং কোলাকুলি করেন। জুমার নামাজের আগে মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সুবহানীঘাটের মাদ্রাসা রোডের ব্যবসায়ীর সঙ্গে গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে একটি ‘আধুনিক নগরী’ হিসেবে গড়ে তুলতে সিলেটের মানুষ আজ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। যেদিকেই যাচ্ছি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হচ্ছি। জনগণের ভালবাসার প্রতিদান দিতে আমি প্রস্তুত রয়েছি। তিনি বলেন- এই সিলেট সামাজিক, ধর্মীয় সম্প্রীতির শহর। শান্তিপ্রিয় সিলেটের মানুষের স্বপ্ন একটি উন্নত নগরের বাসিন্দা হবেন তারা। আমি অতীতে তাদের স্বপ্নের সারথী হয়ে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা সিলেটের উন্নয়নে আন্তরিক। সিলেটের উন্নয়ন সম্পর্কে তাকে কিছুই বলতে হয় না। এবার প্রধানমন্ত্রী সিলেটকে উন্নত শহরে পরিণত করতে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। ৩০ জুলাই নির্বাচনে সিলেটের মানুষ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভোট দেবে ইনশাল্লাহ! এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কামরানের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান চৌধুরী, ছাহেব ক্বিলার সুযোগ্য উত্তরসূরি ও আল ইসলাহ কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরত মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী, আল ইসলাহর অর্থ সম্পাদক মাওলানা আবু সালেক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আজির উদ্দিন পলাশ, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান, আল ইসলাহ পাঠাগার সম্পাদক মাওলানা নজির আহমদ হেলাল, তালামীযের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন জাহেদ, মহানগর আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, মাওলানা রফিকুল হোসেন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মতিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম, বদরুল হোসেন খান কামরান, ছাত্রলীগ নেতা শাওন আহমদ ও আবুল কালাম আব্দুল হাই। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী কামরানের সমর্থনে উত্তর কাজিটুলাবাসীর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার রাতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলাউলের সভাপতিত্বে ও আব্দুল আহাদ এলিছ এবং মোঃ আকবর যৌথ পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, সিলেট মহানগর সভাপতি, মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। বক্তব্য রাখেন- ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর মালিক রাজা, সিলেট মহানগর যুবলীগের আহবায়ক আলম খান মুক্তি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, প্রচার সম্পাদক দিলাল আহমদ, আইন সম্পাদক আব্দুল করিম বাবলু, কামাল আহমদ, ইশমাম কোরেশী নায়িব, শাহিদুল ইসলাম সৌমিক, দিলাল আহমদ, আব্দুল ওদুদ সোহাগ, এলিছ আহমদ, আব্দুল করিম বাবলু, মোহাম্মদ আকবর, আওয়ামী লীগ নেতা কামরান কামাল। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর গুলশান সেন্টারে ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ফখরুল হাসানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা রকি দেবের যৌথ পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন মেয়রপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
×