ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ জুলাই ২০১৮

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

নারী ও নতুন ভোটার টার্গেট লিটনের ॥ সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে বুলবুলের সমর্থকরা! মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন জমে উঠেছে। শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই জমজমাট প্রচারে নামেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। জুমার নামাজ আদায়ের পর মসজিদ কেন্দ্রীক প্রচারে নামেন প্রার্থীরা। উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহী বদলে দেয়ার অঙ্গীকারে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন এখনও তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা না দিলেও রাজশাহী নগরীকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি করার মিশন তার। প্রচারের অংশ হিসেবে এবার নারী ও নতুন ভোটরদের টার্গেট করে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে রাজশাহী নগরীতে এবার মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮। এর মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জনই নারী ভোটার। ভোটের অংকে নারীর সংখ্যাও বেশি। এছাড়া এবার নগরীতে নতুন ভোটার বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার। এসব নতুন ভোটারদের নৌকায় টানার টার্গেট নিয়েছে এবার মেয়র প্রার্থী লিটন। তরুণদের একটি অংশ এবার উন্নয়নের জন্য লিটনের পক্ষেই আওয়াজ তুলেছেন। শুক্রবার নগরীতে তরুণ ভোটারদের নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নতুন ভোটাররা অংশ নিয়ে উন্নয়নের জন্য লিটনের পক্ষে থাকার অঙ্গীকার করেছে। রাজশাহীতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্র্মূল কমিটির স্টুডেন্ট ফ্রন্ট এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এদিকে রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট চেয়ে শুক্রবার নগরীতে গণসংযোগ করেছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নগরীর আসাম ও শিরোইল কলোনি এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি। নগরীর শালবাগানের পারহাউজের মোড় এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর বউ বাজার, রবের মোড়, শিরোইল আসাম কলোনি, শিরোইল কলোনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাড়া, শিরোইল কলোনি স্কুল এলাকা, ছোটবোনগ্রাম এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন ও গণসংযোগ করেন। এসব এলাকার বিভিন্ন বাড়ি ও দোকানে গিয়ে রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কায় ভোট চান খায়রুজ্জামান লিটন। গণসংযোগের সময় এসব এলাকায় প্রচার মিছিল বের করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পাড়া-মহল্লা। মিছিলে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার শত শত নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন। এদিকে গণসংযোগের শুরুতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র প্রার্থী লিটন বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও সংখ্যালঘু ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। এসব বিষয়ে ইসিতে ইতোমধ্যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা অনেক উজ্জীবিত। ভোটাদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। পরে তিনি নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার বায়তুল মামুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এদিকে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বেলা ১১টা থেকে মেহেরচন্ডি, ভদ্রা, বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশন, নামো ভদ্রা, চকপাড়া এলাকায় ভোটের প্রচার করেন। তিনি নগরীর রবের মোড় এলাকায় জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি নগরীর উন্নয়নের আরেকবার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তার সঙ্গে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ছাড়াও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইসিতে ফের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান নিজে এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন তপু এ অভিযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগের অভিযোগে বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের নারী কর্মীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, পোস্টার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা, অপপ্রচার এবং ভোটারদের হুমকি ও শাড়ি-লুঙ্গিসহ বিভিন্ন রকম উপঢৌকনের প্রলোভন দেখানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আলাদা তিনটি ঘটনায় সমর্থকদের হুমকি-ধামকি দিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে আরও তিনটি অভিযোগ দিয়েছেন খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি অভিযোগ করেন, গত ১০ জুলাই দুপুর ২টার দিকে ধানের শীষের প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা আরডিএ মার্কেটের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সুলতানের দোকানে গিয়ে হুমকি দেয় এবং ধানের শীষের প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বল প্রয়োগ করে। এ ঘটনার সময় ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী বুলবুলের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা সুলতানকে বিভিন্নভাবে কটূক্তি করে এবং ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনার পর সুলতান আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে এবং বিষয়টি নৌকার পক্ষের কর্মীদের জানান। অপর তিনটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে খায়রুজ্জামান লিটন উল্লেখ করেছেন, গত ১১ জুলাই হেতেমখাঁ ছোট মসজিদ এলাকায় তার নৌকা প্রতীকের পোস্টার খুলে ফেলে ধানের শীষের পোস্টার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আসাম কলোনি রবের মোড় এলাকায় ধানের শীষের কিছু নেতাকর্মী নৌকার প্রতীকের নারী কর্মীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, কটূক্তি ও উত্যক্ত করে। এছাড়া কোর্টস্টেশন রেললাইনের পাশের বস্তিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোটারদের প্ররোচিত করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালায়। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের বেশকিছু নেতাকর্মীকে আটক করে মিথ্যা মামলা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, বোয়ালিয়া এবং কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছে বিএনপি। তারা অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে। ভোটের মাঠে ২০ হাজার নারী কর্মী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন নারী কর্মীরা। মেয়র ও কাউন্সিলর পদের ২১৭ প্রার্থীর হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন প্রায় ২০ হাজার নারী কর্মী। ভোটের মাঠে এই বিপুলসংখ্যক নারী কর্মীর উপস্থিতি এবারই প্রথম। তাই রাজশাহী নগরজুড়ে নারী কর্মীদের এই প্রচারে রাসিক নির্বাচনে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। সকাল ও বিকেলে মোট চার ঘণ্টা প্রচার চালিয়ে নারী কর্মীরা পাচ্ছেন বাড়তি অর্থও। ভোটের প্রচার সময় কম হওয়ায় প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদেরও ব্যাপকভাবে প্রচারে নামিয়েছেন। রাসিক নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলরে ১৬০ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫২ জন। এসব প্রার্থীরা পুরোদমে মাঠে নেমেছেন। ভোটারদের মন জয় করতে নামিয়েছেন বিশাল কর্মী বাহিনী। বিশেষ করে প্রার্থীরা ১০০ থেকে ১৫০ জন করে নারী কর্মী মাঠে নামিয়েছেন ভোট প্রচারের জন্য। নারী কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের ছবি-প্রতীক সংবলিত লিফলেট ও নির্বাচনী ইশতেহার বিলি করছেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারী কর্মীরা নারী ভোটারদের পাশাপাশি পুরুষ ভোটারদের কাছেও প্রার্থীদের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরছেন। নগরীর প্রত্যেক ওয়ার্ডেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নারী ভোটকর্মী রয়েছেন। এসব নারী কর্মীরা দল বেঁধে লিফলেট নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। নগরীতে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র নারী কর্মী এবার নির্বাচনে প্রচারে নেমেছেন। প্রচারে থেমে নেই ধণাঢ্য পরিবারের নারীরাও। প্রচারে দরিদ্র নারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। নগরীর সপুরা এলাকার মেহরুন নেসা (৪৩)। বুধবার থেকেই তিনি ভোট প্রচারে নেমেছেন। প্রতিদিন এজন্য তিনি পেয়ে থাকেন ২৫০ টাকা। তিনি বলেন, গত দুই দিনে ৫০০ টাকা আয় করেছেন। এতে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার পাশাপাশি সংসারের কিছু ঘাটতিগুলো পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। নগরীর দড়িখরবোনা এলাকার জমিরন বিবি জানান, তাদের মধ্যে একজন নেত্রী থাকেন। তিনিই নারী কর্মীদের তালিকা তৈরি করেন ও টাকা-পয়সা বণ্টন করে দেন। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লিফলেট হাতে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাতে হয়। তিনি বলেন, প্রথম দিন ২০০ টাকা আয় হয়ছিল। অন্য প্রার্থী আরও ৫০ টাকা বেশি দেয়ার কথা বলেছিল। তাই পরের দিন থেকে অন্য প্রার্থীর প্রচারে নেমেছন তিনি। . সাদিকের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের গণসংযোগ ॥ আমার পরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি ॥ সরোয়ার খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ভোট প্রার্থনা করছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তার, রিফাত জাহান তাপসী, জেলার দুইবারের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু, যুবলীগ নেতা আল-আমিন হাওলাদার এবং ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের ইসলাম সান্টু ভূঁইয়ার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া মেয়র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরীর বর্ধিত এলাকাসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার গণসংযোগের সময় অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নগরীর নাজিরেরপুল এলাকায় গণসংযোগকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ মেজবা উদ্দিন ফরহাদ, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সদস্য সচিব এবায়েদুল হক চাঁন প্রমুখ। নৌকার সমর্থনে উঠান বৈঠক ॥ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সমর্থনে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘিয়া মাদ্রাসা মাঠে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। কাউকে হুমকি-ধামকি দিয়ে ভোট নিতে চাই না। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে যার যার ভোট সে দিবে, যাকে খুশি তাকে দিবে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ বা শঙ্কা প্রকাশ করার কিছুই নেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রার্থী ও তার দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা একটি রোগে পরিণত হয়েছে। বরিশালের জনগণ উন্নয়নের বিবেচনা করেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। উঠান বৈঠকে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। ভোটারদের টার্গেট উন্নয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত নগর গড়া ॥ ২০১৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচনে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় মেয়র নগরবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে এখানে নগরীর কাক্সিক্ষত উন্নয়নই প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচিত বিএনপি দলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে বহু দুর্নীতির অভিযোগ। যার মধ্যে উন্নয়ন কাজ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম-দুর্নীতি, বেতন বৈষম্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ জমা না দেয়া অন্যতম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এসব অনিয়মের কারণে মেয়র আহসান হাবিব কামালকে একাধিকবার শোকজ এবং ঘটনার তদন্তও করা হয়েছে। তবে বিএনপির নেতা হলেও এই মেয়র তা বিশেষ পদ্ধতিতে ম্যানেজ করে নিয়েছেন। নগরীর বিশিষ্ট নাগরিকদের মতে, গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে সিটি কর্পোরেশন ছিল দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও স্বজনপ্রীতিতে নিমজ্জিত। খ-িত কিছু উন্নয়ন কাজ হলেও তাও টেকসই হয়নি। ফলে আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নয়নমুখী মেয়র ও কাউন্সিলর চান সর্বস্তরের নগরবাসী। সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশালের সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, সামগ্রিকভাবে দেখলে গত ৫ বছরে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং হাজারও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নগরীর বর্ধিত ২০ কিলোমিটার এলাকার চেহারা এখনও অজপাড়া গাঁয়ের মতোই। গাজী জাহিদ আরও বলেন, মেয়র আহসান হাবিব কামাল উন্নয়ন করতে না পেরে ঠুনকো অজুহাত তুলেছেন যে তিনি বিরোধী দলের হওয়ায় যথাযথ বরাদ্দ আসেনি। কিন্তু ওই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। উন্নয়নসহ কর্পোরেশনের সামগ্রিক কাজে কোন প্রকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিল না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসন্ন নির্বাচনে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন এমন একজনকে মেয়র এবং কাউন্সিলদের নির্বাচিত করবে নগরবাসী। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, নগরবাসী পানি সঙ্কট থেকে মুক্তি পায়নি। প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া গোটা নগরজুড়েই সড়কগুলোর অবস্থা বেহাল। সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলবদ্ধতার। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে না নগরীকে। যে কারণে নানামুখী সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট এসএম ইকবাল বলেন, নগরীতে নগর পরিবহন ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা চলছে গত ২-৩ বছর ধরে। এক সময় নগরীতে ২২টি খাল ছিল। সেগুলোর অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। খালগুলো দখল ও ভরাটের কারণে নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি দলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামাল নগরীর উন্নয়নে সফল হতে পারেননি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নগর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে কর্পোরেশনে যে দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা ছিল তা বর্র্জন করতে হবে আসন্ন নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর ধরেই নগর ভবনে চলেছে দুর্নীতি। উন্নয়নের নামে হয়েছে বরাদ্দ লোপাট। জনবল নিয়োগে চরম স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। অথচ পাঁচ বছর আগে ভোটের সময় বিএনপি দলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কর্পোরেশনের কার্যক্রম চালাবেন এবং নগরবাসীর কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করবেন। কিন্তু নগরবাসীর প্রত্যাশা আদৌ পূরণ হয়নি। তাই উন্নয়নের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে নগরবাসীর অন্যতম প্রত্যাশা হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসীর প্রত্যাশা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে আসেন, তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারেন না। তাই তিনি নির্বাচনকে ঘিরে কোন প্রতিশ্রুতি দেবেন না। তবে নির্বাচিত হলে তিনি নগরবাসীর মৌলিক চাহিদাগুলো যেমন প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ এবং জলাবদ্ধতা দূর করাসহ বর্ধিত অংশের উন্নয়নে মনোযোগী হবেন। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, নগরবাসী তার পক্ষে রায় দিলে তিনি কখনই দুর্নীতি করবেন না। আর দুর্নীতি করবেন না বলেই ভাল কাজ করতে পারবেন। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মার্কার মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, তিনি মেয়র থাকা অবস্থায় নগরীতে অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। পরবর্তীতে সেসব উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। এবার নির্বাচিত হলে সড়ক, ড্রেনেজ সমস্যা, পানি ও নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনে সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন। নগরীতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরোয়ারের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচনে আহসান হাবিব কামালকে বিএনপির মনোনয়ন পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে তার নির্বাচনের মূল দায়িত্বে ছিলেন মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি (কামাল) মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কেন রক্ষা হয়নি। মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের যে অভিযোগ উঠেছে সরোয়ার কেন তার প্রতিবাদ করেননি। তিনি (টুটুল) আরও বলেন, আসলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে দেশের জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করার জন্য আর বিএনপি রাজনীতি করে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। যার প্রমাণ বিএনপির নেত্রী দুর্নীতির দায়ে এখন কারাভোগ করছেন। টুটুল বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল নগরীতে যে উন্নয়ন করেছেন সেই ধারাবাহিকতায় ফিরে আসতে হলে আগামী ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে নৌকা মার্কাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করতে হবে। বরিশালে জনতার মুখোমুখি মেয়র প্রার্থীরা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সৎ ও যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে শুক্রবার বেলা ১১টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলে জনগণের মুখোমুখি হয়েছিলেন ছয়জন মেয়র প্রার্থী। তবে পূর্ব নির্ধারিত অপর একটি নির্বাচনী কর্মসূচীতে যোগদান করায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
×