ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান টার্গেট এখন নারীরা

রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে গেছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১৪ জুলাই ২০১৮

রাজধানীতে ছিনতাই বেড়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে কয়েক মাসে ছিনতাই বেড়ে গেছে। ছিনতাই হওয়ার সময় পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম ঝামেলা তৈরি করতে পারে- এই বিবেচনা করে থাকে ছিনতাইকারীরা। তাই ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট হিসেবেই থাকে নারী। রাজধানীতে চলাচলকারী পথচারী কিংবা রিক্সারোহী নারী যাত্রীদের হাতব্যাগ সুযোগ পেলেই টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। হাতব্যাগ টান মেরে ছিনিয়ে নেয়ার সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের হাতে ৭ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২০০। এ ৭ ব্যক্তির মধ্যে ৬ রিক্সার যাত্রী। গত ২৬ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারীদের গাড়ির চাপায় নিহত হয় হেলেনা বেগম। রাস্তা পার হওয়ার সময় হেলেনার ব্যাগ ধরে ছিনতাইকারীরা হ্যাঁচকা টান দিলে তাদের মাইক্রোবাসের নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে দয়াগঞ্জে ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ধরে টান দেয়ায় মায়ের কোলে থাকা পাঁচ মাসের শিশু আরাফাত রাস্তায় ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মা আকলিমা বেগম চিকিৎসার জন্য সন্তানকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় এনেছিলেন। ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট ভোরে কমলাপুর থেকে রিক্সায় গুলিস্তানে যাচ্ছিলেন ডাঃ মুনতাহীদ আহসান ও ডাঃ জেরিন দম্পতি। পথে জেরিনের হাতব্যাগ ধরে টান দেয় ছিনতাইকারীরা। এতে জেরিন রাস্তায় পড়ে মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসা নিয়েও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। অধিকাংশ সময় তাকে শুয়ে থাকতে হয়। ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর সোবহানবাগ মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় রিক্সা করে লালমাটিয়ার দিকে যাওয়ার সময় পথচারীদের সামনেই ৪-৫ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে গৃহবধূ রিপা মারা যান। প্রাইভেট কারে করে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দিলে তিনি রিক্সা থেকে পড়ে যান এবং তার মুখ-মাথা থেঁতলে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা শুধু পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ কিংবা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। রাজধানীর যেসব এলাকায় রিক্সা চলে সেখানে ছিনতাই বেশি হচ্ছে। ছিনতাই রোধে রাজধানীতে কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা যেতে পারে। পাশাপাশি পথচারী ও সাধারণ মানুষকে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, শুধু দরিদ্র পরিবারের সন্তান নয়, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন পরিবারের সন্তানরা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাইকারীরা এখন প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল চালিয়ে ছিনতাই করে। ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে, পথচারী কিংবা সাধারণ মানুষ সাহস করে তাদের ধরছে না। ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সচেতন হতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা সতর্কাবস্থায় রয়েছি। ছিনতাইয়ের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে, তা নয়। যারা যানবাহনে চড়েন তাদের অনেক সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, যে কোন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
×