ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনভর হাঁসের মধ্যেই হাসি খুঁজে পান যে মানুষটি

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৪ জুলাই ২০১৮

 দিনভর হাঁসের মধ্যেই হাসি খুঁজে পান যে মানুষটি

কী নেই- এমন ভাবনা ঠিক নয়। বরং নিজের কী আছে যা নিয়ে বাঁচার লড়াই- এমন ভাবনাই থাকা দরকার। এমন উপদেশমূলক কথা দিয়েই শুরু করলেন রুহুল আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর নেই, তাতে কী। অভিজ্ঞতার বাস্তবতার ভান্ডার রয়েছে। শেখার মতো বাস্তবতা রয়েছে তাঁর মধ্যে। তাই তো, এখন হাঁস পালনেই স্বাবলম্বী রুহুল আমিনের হাসিমুখ। ষাটোর্ধ এই মানুষটির জীবন-জীবিকার চাকা ঘুরছে স্বাচ্ছন্দ্যে। হাঁস পালনের মধ্যেই তাঁর জীবিকার পাশাপাশি জীবনের স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন। চাওয়া-পাওয়ার ফারাক যেন কমিয়ে এনেছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের বরকতিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের পাশেই বাড়ি রুহুল আমিনের। বেড়িবাঁধের পতিত এক চিলতে জমিতেই করেছেন হাঁস পালনের খামার। একই জমিতে মাছের ঘের করেছেন। অন্তত দুই শ’ দেশী জাতের পাতি হাঁস ও ৪০টি রাজহাঁস পালন করেন রুহুল আমিন। স্ত্রী নুরুন্নাহারকে নিয়ে হাঁস পালনে এগিয়ে চলছেন মানুষটি। ছোট্ট ছেলে নজরুলের লেখাপড়াসহ নিজেদের ভরণ-পোষণসহ খামারের খরচের পরেও ফি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছেন এ দম্পতি। অপর দুই ছেলে থাকলেও তাঁরা আলাদা ঘর-সংসার করে থাকছেন। একটি ডিঙি নৌকায় শিববাড়িয়া চ্যানেলে মাছ ধরতেন। পাশাপাশি কৃষিকাজ করে জীবিকার যোগান দিতেন রুহুল আমিন। নিজের কিছু পুঁজি, আর সজনদের ধার-দেনায় এক বছর আগে শুরু করেন হাঁস পালনের যাত্রা। একদিন বয়সী পাতি হাঁসের বাচ্চা ৩৫ টাকা করে কিনে লালন-পালন করেন। তিন মাস বয়স হলেই একেকটি তিন শ’ টাকায় বিক্রি করে দেন। বর্তমানে দুই শ’ পাতিহাঁস ও ৪০টি রাজহাঁস রয়েছে তাঁর খামারে। দৈনিক অন্তত তিন শ’ টাকা ব্যয় হয় খাবারের জন্য। ছয় মাস বয়সের একেকটি রাজহাঁস বিক্রি করেন আট শ’- ১২ শ’ টাকায়। জানালেন রুহুল আমিন, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি যেমনি মায়া তাঁর, তেমনি এই হাঁসগুলোও তাঁর জীবনে ছন্দ এনে দেয়। খাবার দেয়ার সময় হাঁসগুলো যেন চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে রুহুল আমিনকে। অঙ্গভঙ্গিতে খাবারের আকুতি জানায়। তখন তাঁর মনে প্রশান্তি বয়ে যায়। মুখে ফোঁটে হাসির ঝিলিক। কোন ধার-দেনা কিংবা জিও-এনজিওর লোন নেই মানুষটির। তবে খামারটির পরিসর বাড়াতে কোন না কোন সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা রয়েছে বলে জানালেন। বললেন, ‘চিকিৎসা খরচ লাগে। টিকাসহ ভ্যাকসিন দেওয়া লাগে। ওষুধ খাওয়াইতে অয়।’ দিনভর হাঁসের মধ্যেই হাসি খুঁজে পান এই মানুষটি। ভবিষ্যত স্বপ্ন দেখেন স্বাবলম্বী হওয়ার পথকে আরও গতিশীল করতে। যেন এম চিন্তার স্বপ্ন বোনেন আর ষাটোর্ধ রুহুল আমিন তার যা আছে তাই নিয়েই এগিয়ে চলছেন। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×