ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৪ জুলাই ২০১৮

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা

বুধবার জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের একজন সদস্যের নোটিসের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি করলে রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এই হুঁশিয়ারি কতটা কাজে আসবে সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে মানুষ সন্তুষ্ট বোধ করবে এটা ভেবে যে, সরকার গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এই অপরাধ প্রতিরোধ করতে হলে সামাজিক শক্তিকেও এগিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি তার উদাহরণ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মানুষ আগের মতো চুপ থাকছে না, সচেতন হচ্ছে, প্রতিবাদ করতে শিখছে। উত্তরা-রামপুরা-সায়েদাবাদ রুটের তুরাগ পরিবহনের কয়েকজন পরিবহনকর্মী উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রীকে সেক্সুয়ালি হ্যারাজ করার অপচেষ্টা করছিল, তরুণীটি চলন্ত অবস্থায় বাস থেকে লাফ দিয়ে আত্মরক্ষা করে। পরে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ঘটনা জানানোর পর প্রশাসন ও সহপাঠীরা উদ্যোগী হয়। পরদিন তারা তুরাগ পরিবহনের বেশ কিছু সংখ্যক বাস আটকে চাবি নিয়ে রাখে। তাদেরকে পুলিশও সহযোগিতা করেছে, যেটা প্রশংসার দাবিদার। সবচেয়ে প্রশংসিত ব্যাপার হলো, ওরা একটা বাসও ভাংচুর করেনি কিংবা বাসের কোন ধরনের ক্ষতিসাধন করেনি! গণপরিবহন কতটা নারীবান্ধব এটি নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও কোনক্রমেই নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। নারীরা গণপরিবহনে চলাচল করতে গিয়ে অনাকাক্সিক্ষত স্পর্শ, বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গি, কটূক্তিসহ নানা সহিংসতার শিকার হন। এমনকি গণধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। যে কারণে শতকরা ৪৯ ভাগ নারী গণপরিবহনকে অনিরাপদ মনে করেন। নারীরা সহিংসতার শিকার হতে দেখলেও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ কমই দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে গণপরিবহনে একের পর এক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে শুভেচ্ছা পরিবহনের চলন্ত একটি বাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বাসচালক ও সহযোগী গ্রেফতার হন। ২০১৫ সালের ১২ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক পোশাককর্মীকে ধর্ষণ করে ফেলে দেন বাসচালক ও চালকের সহকারী। ঢাকায় এক গারো তরুণীকে চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ২০১৬ সালে বরিশালে সেবা পরিবহনের একটি বাসে দুই বোনকে ধর্ষণ করে পাঁচ পরিবহনকর্মী। ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে একটি বাসে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাসচালকসহ তিন পরিবহনকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরপর টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর রূপাকে হত্যা করা হলে সারাদেশে প্রতিবাদ হয়। এসব ঘটনায় গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক সাম্প্রতিক এক জরিপেও তার কিছুটা আভাস মিলেছে। গণপরিবহনে যাতায়াতকারী নারীদের বড় অংশই বলেছেন, নানাভাবে তারা হয়রানির শিকার হয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু অবস্থা এমন যে, অধিকাংশ নারীই সেটি প্রকাশ করতেও বিব্রত বোধ করেন। শিক্ষা ও চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার নারীকে ঘরের বাইরে বেরুতে হয়। অধিকাংশেরই একমাত্র ভরসা হলো বাস, মিনিবাস কিংবা টেম্পোর মতো গণপরিবহন। গণপরিবহনের মালিক, শ্রমিক এবং তাদের সংগঠনগুলো আন্তরিকভাবে এগিয়ে না এলে শুধু সরকার, আইন কিংবা শাস্তি দিয়ে এই ব্যাধির নিরাময় সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজকেও সোচ্চার হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ।
×