ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বনির্ভর বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৪ জুলাই ২০১৮

স্বনির্ভর বিদ্যুত ও জ্বালানি খাত

বিদ্যুত ও জ্বালানিতে স্বনির্ভর হওয়ার ফলে আরও এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যৌথ বিনিয়োগ এসেছে এ খাতের জায়ান্ট হিসেবে বিশ্বখ্যাত দুই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক ও জাপানের মিতসুবিসি কর্পোরেশন। সরকারের প্রতিষ্ঠান পিজিটি এবং বেসরকারী সামিট গ্রুপের সঙ্গে সঙ্গে আলাদাভাবে যৌথ ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন বাংলাদেশী টাকাসহ ৬০ হাজার কোটি টাকা যৌথ বিনিয়োগে অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়ে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস অর্থাৎ এলএনজিভিত্তিক ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র দুটো উৎপাদনে গেলে তেলের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব হতে পারে। এর বাইরেও রয়েছে আন্তর্জাতিক আরও কয়েকটি প্রকল্প ও স্থাপনা। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে বিশ্বের দুটি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন আগামীতে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে নিশ্চয়ই। সম্প্রতি দেশের রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে মাত্র সাত দিনের মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বর্তমানে নতুন বিদ্যুত সংযোগ দিতে লাগে ২৮ দিন। উল্লেখ্য, দেশ এখন বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মংলা, পায়রা ও মাতারবাড়িতে তৈরি হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। সেই হিসেবে বর্তমান ২১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নতুন ৪২টি ইপিজেডে স্বল্প সময়ে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া অসম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে এসব ইপিজেডে শতভাগ শিল্পায়ন ঘটবে। ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগসহ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কয়েকটি শিল্প পার্কসহ নতুন এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশকে বর্তমান নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০৪১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি যে অতীতের তুলনায় ভাল সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য সস্তা শ্রমের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রভূত আশাব্যঞ্জক। এর পাশাপাশি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিও বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অনুকূলই বলতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বিনিয়োগের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতাগুলোকে দূর করতে হবে পর্যায়ক্রমে। কয়েকটি সরকারী সংস্থাকে সমন্বয় ও একীভূত করে ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠাসহ ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এর অন্যতম। গ্যাসের সমস্যা আপাতত থাকলেও বিদ্যুত সমস্যা থাকছে না আগামীতে। রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, স্বউদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণসহ চার লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ক এবং আন্তঃদেশীয় কানেকটিভিটি সম্পন্ন হলে ভূমি সমস্যাসহ অবকাঠামোগত সমস্যা দূর হবে অনেকাংশে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আগামীর অমিত সম্ভাবনা হলো সুবিস্তৃত বঙ্গোপসাগরের ‘ব্লু ইকোনমি’ বা সমুদ্র সম্পদ অর্থনীতি। আগামীতে সমুদ্রেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সমূহ সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল। বন্দর অবকাঠামোসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যথাযথ অগ্রগতি সাধিত হলে বিপুল জনসংখ্যাধিক্যের দেশে সহজলভ্য শ্রম এক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সরকার সার্বিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবে বলেই প্রত্যাশা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও প্রত্যাশিত বৈকি।
×