ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাম্পে নোংরা পানি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৪ জুলাই ২০১৮

তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাম্পে  নোংরা পানি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি পানির পাম্প থেকে সুপেয় পানির বদলে সরবরাহ করা হচ্ছে আয়রনযুক্ত নোংরা ও দূষিত পানি। নিরাপদ পানির জন্য ব্যয়বহুল এ ব্যবস্থা এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পানি ব্যবহারে জন্ডিস, কলেরাসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা। প্রতি মাসে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্রাহকরা পাচ্ছে না বিশুদ্ধ পানি। জানা গেছে, সুপেয় ও নিরাপদ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালের আগস্ট মাসে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি টাকা। এ অর্থের ৭০ ভাগ সরবরাহ করে সরকার ও ৩০ ভাগ সরবরাহ করে এসএস কনস্ট্রাকশন এবং এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি এনজিও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ও শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় দুটি পানির পাম্প। চুক্তি অনুসারে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৩০ ভাগ অর্থ যোগানদানকারী প্রতিষ্ঠান এর লভ্যাংশ গ্রহণ করে পাম্প দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট হস্তান্তর করে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় ২ হাজার ৯শ’ টাকা করে। দুটি পাম্পের ১ হাজার ১২০ গ্রাহককে মাসে ১৮০ টাকা করে পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, পাম্প চালুর পর থেকে গ্রাহকদের ৫-৬ ঘণ্টা পানির সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। তাও মাত্রাতিরিক্ত আয়রনযুক্ত, নোংরা ও দূষিত পানি। এরপরও প্রতিমাসে ১৮০ টাকা নির্ধারিত পানির বিলের বিপরীতে নেয়া হয় ২০০ টাকা করে। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কবিরাজপুর ইউনিয়ন ভবনের পিছনে নির্মাণ করা হয়েছে পানির বড় একটি ট্যাঙ্ক। পাশেই রয়েছে পানির পাম্প। পাম্পের পাইপগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আশেপাশে ময়লার স্তূপ। একই চিত্র শিবচর উপজেলার নিখলী ইউনিয়নে। কবিরাজপুর ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণদী গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, এই পানি খাওয়ার অযোগ্য, তবুও প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে বিল দিতে হয়। কিন্তু সরকারী এই পানি এখন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই পানিতে প্রচুর ময়লা আর আয়রন আসে। পানি কোন পাত্রে রাখলে পাত্র একদিনেই লাল হয়ে যায়। মহিউদ্দিন নামে এক গ্রাহক বলেন, পাম্প দিয়ে সব সময় ময়লা পানি আসে। কিছুদিন আগে এই পানি পান করে আমার ঘরের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর থেকে এই পানি রান্নাবান্নাসহ ঘরের কোন কাজে আর ব্যবহার করি না। হাত-পা ধোয়া ছাড়া এই পানি আমাদের কোন কাজে আসে না। রাজৈর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আলী মাতুব্বর বলেন, ৫০ ফিট উঁচু ও ১০০ ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দুটি থেকে নোংরা পানি সরবরাহের কথা নয়। আমি ৬ মাস আগে পানির পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখেছি, তখন খারাপ কিছু পাইনি। তবে এখন কি অবস্থা তা জানি না। আর পাম্পে নিয়োজিত স্টাফ আমাদের কিছু জানায়নি। গ্রাহকরাও কোন অভিযোগ দেয়নি। পাম্প দুটি যেহেতু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে সেহেতু আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করব। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মোঃ ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, কোন পানির পাম্প থেকে যদি নোংরা, আয়রনযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়, তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এই পানি পান করলে জন্ডিস, কলেরা, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত যেকোন রোগ হতে পারে। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এ প্রকল্পে জনসাধারণ উপকৃত হয়নি। আমরা এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি এ বিষয়ে আমরা কোন অনিয়ম-দুর্নীতি পাই, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
×