বিশ্বকাপ ফুটবল অবসম্ভাবীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনোদন ও উপভোগ্য খেলা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। একটি জাতির বিশ্ব ফুটবল চাম্পিয়নের বিষয়টি স্বীকৃতি দিতেই ১৯৩০ সাল থেকে শুরু বিশ^কাপ ফুটবলের আসর। সেই আসরে চাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। দূর মাহদেশের রাষ্ট্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এর শ্রেষ্ঠত্বের অর্জনের বিষয়টি। শুরু হয় যায় ফুটবলকে নিজের মতো করে পাওয়ার ও উপভোগ করার জাতীয় লড়াই। এই লড়াইয়ে হিংসা নেই বিদ্বেষ নেই। আছে শুধু মহিমা আর গৌরবের নানা আঙ্গিক। আছে ভালবাসা। বিশ^ ফুটবলে আবির্ভূত হয় জাতীর নামের সঙ্গে বেশ কিছু নায়কের নাম। এই নায়কদের নামের সঙ্গে একটি রাষ্ট্রের গৌরব জড়িয়ে পড়ে। এমন দুই ফুটবল নায়কের এদের একজন ব্রাজিলের পেলে আপরজন আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা। ওই দুই দেশের প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রনায়কদের নাম কেউ জানুক আর না জানুক পেলে আর ম্যারাডোনর নাম সব সময়ে উচ্চারিত হবে বিশে^র সর্বত্র। বর্তমানের নায়কদের মধ্যে অন্যতম ব্রাজিলের নাইমার, আর্জেন্টিনার মেসি ও পর্তুগালের রোনাল্ডো। ২০১৮ বিশ^কাপে বেশ কিছু নতুন ফুটবল নায়কের সন্ধান পাওয়া গেছে তারা হচ্ছেন হচ্ছেন ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার হ্যারি কেইন, বেলজিয়ামের রোমেলি লুকাকু ও ফ্রান্সের এমবাপ্পে।
এবারের রাশিয়ার ১১টি স্টেডিয়ামের গ্যালারি মাত করে রেখেছে দর্শক ও সমর্থকরা। বলতে দ্বিধা নেই এবার পুরুষ সমর্থকদের পাশাপাশি নারী সমর্থকদেরও ব্যাপকভাবে দেখা গেছে। দর্শকরাই হচ্ছে একটি খেলার প্রাণ। এবার নারী দর্শকদের উপস্থিতি বিশ^কাপের সমর্থনের বিষয়কে নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রতিটি খেলায় টিভি ক্যামরার বদৌলতে যে নারী দর্শক চোখে পড়েছে তাতে একটা বিষয় লক্ষণীয় তা হচ্ছে তাদের খেলায় সমর্থিত দেশের জয়ের পর উল্লাস ও পরাজয়ে যে বেদনার অশ্রু তা ফুটবলকে ভালবাসায় নতুন মাত্রা দিয়েছে।
বিশ^কাপের ইতিহাস থেকে আভাস পাওয়া যায় ১৯৩০ সালের প্রথম প্রতিযোগিতায় নারী দর্শক খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। ১৯৫০ সালে যে চতুর্থ বিশ^কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছ তাতে প্রচুর মহিলা দর্শকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এর পরবর্তী আসরগুলোতে তা বেড়ে গেছে। তাই বলা হচ্ছে বিশ^কাপ ফুটবল নারী দর্শকরা নতুন নতুন আঙ্গিকে আবির্ভূত হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে তা মহিমাম্বিত হয়েছে।
এবারে ইরানের বিশ^কাপ ফুটবলের নারী দর্শকদের জন্য নতুন একটা অর্জন হয়েছে। বলা যায় এই ফুটবলের আসরে নারী দর্শকরা যেভাবে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছে তা হয়ে গেছে সেই দেশের নারীদের জন্য শিকল ভাঙ্গার গান হিসেবে। প্রায় চার দশক পর বুধবার ২০ জুন টিভির বড় পর্দায় স্পেনের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখার জন্য ইরানের ফুটবল স্টেডিয়ামে নারীদের ঢুকতে দেয়া হয়েছে। বিশ্বকাপের এই ম্যাচে বুধবার কাজানে স্পেনের বিরুদ্ধে ইরান জিততে পারেনি, কিন্তু বড় ধরনের লাভ হযছে ইরানী নারীদের।
১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর এই প্রথম ফুটবল স্টেডিয়ামে নারীদের ঢুকতে দেযা হয়েছে। তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও হৈ-হুল্লা করে টিভির বড় পর্দায় খেলা দেখেছেন। পর্তুগালের সঙ্গে পরের ম্যাচেও স্টেডিয়ামে ঢোকার অনুমতি পায় ইরানের নারীরা। বুধবার মাঠে উচ্ছ্বসিত নারী ফ্যানদের সেলফি, পতাকা হাতে তাদের উচ্ছ্বাসের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এমনকি ইরানের জাতীয় দলের টুইটার পাতাতেও সেসব ছবি পোস্ট করা হয়েছে। স্পেনের অধিনায়ক সের্জিও রামোসও টুইট করেছেন তারাই (ইরানী নারীরা) আজ জিতেছেন। আশা করি এটা তাদের বিস্ময়কার সূচনা। এর আগে মে মাসে ছেলেদের ছদ্মবেশে পাঁচজন নারী আজাদি স্টেডিয়ামে ঢুকে ম্যাচ দেখেছিলেন।
খেলাধুলার ভেন্যুতে ঢোকার ব্যাপারে ইরানে নারীদের ওপর সরকারী কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, কিন্তু নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পুলিশও নারীদের ঢুকতে বাধা দেয়। মার্চে একটি ফুটবল ম্যাচে যাওয়ার জন্য ৩৫ জন নারীকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালে হঠাৎ ঘোষণা করা হয় আজাদি স্টেডিয়ামে পরিবার নিয়ে যাওয়া যাবে। টিকেট কিনে লাইনে দাঁড়ান অনেক নারী। কিন্তু পুলিশ হঠাৎ করে বলতে থাকে পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ এবং অবস্থান ধর্মঘট। টুইটারসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দলরেজা রাহমানির এক বিশেষ আদেশে এক ঘণ্টা পর মেয়েদের ঢুকতে দেয়া হয়। আর এভাবে ইরানের নারীরা তাদের জতীর অর্জনগুলোতে সরাসরি অংশগ্রহণ করার বিষয়টি যে শিকলে বাঁধা ছিল তা এবারের ২০১৮ এর বিশ^কাপ ফুটবলের আসরে ভেঙ্গে গিয়েছে।
শীর্ষ সংবাদ: