ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৬৬ সালের পর নিজেদের টানা চার বড় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে বিদায়

দুঃখের আগুনে পুড়ছে ইংলিশদের হৃদয়

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৩ জুলাই ২০১৮

দুঃখের আগুনে পুড়ছে ইংলিশদের হৃদয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কাগজে-কলমে ইংল্যান্ডকেই বলা হয় আধুনিক ফুটবলের জনক। ১৯৬৬ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের আয়োজন করেই ঘরে তুলে নেয় স্বপ্নের ট্রফিটাকে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৫২ বছর। শিরোপা জয় তো দূরের কথা, এই সময়ের মধ্যে আর ফাইনালেরই টিকেট কাটতে পারেনি থ্রি-লায়ন্সরা। ২০০২ আর ২০০৬ বিশ্বকাপের শেষ আটের টিকেট কাটা ইংল্যান্ড এবার দীর্ঘ ২৮ বছর পর জায়গা করে নেয় রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। যে কারণেই নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলেন ইংলিশ সমর্থকরা। কিন্তু হায়! সেই স্বপ্নও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল তাদের। বুধবার ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকেও যে বিদায় নেয় গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজয় যেন ইংলিশদের ক্ষতটাকে আরও বাড়িয়ে দিল বহুগুণ। কেননা এটা যে তাদের টানা চতুর্থ বড় টুর্নামেন্টের ‘সেমিফাইনাল’ হার। সবমিলিয়ে শেষ পাঁচ সেমির চারটিতেই পরাজয়। বারবার কেন শেষ চারেই আটকে যাচ্ছে ইংল্যান্ড? এমন প্রশ্নও এখন উঠছে সমর্থকদের মনে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমে তো এ নিয়ে তোলপাড়। সেমিফাইনাল জুজু তাড়াতেই পারছেন না ইংলিশ ফুটবলাররা। অতীত পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, বিশ্বকাপ জয়ের মাত্র দুই বছর পর ১৯৬৮ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। সেবার যুগোস্লাভিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় থ্রি-লায়ন্সরা। ১৯৯০ বিশ্বকাপ আর ১৯৯৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেরও ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ চারে জার্মানির কাছে হেরে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নেয় তারা। দু’বারই পেনাল্টি শূটআউটে হেরে যায় ইংলিশরা। বুধবার মস্কোতেও একই চিত্রনাট্য রচনা করলেন হ্যারি কেন-ডেলে আলিরা। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেও এদিন ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হার মানে সাউথগেটের শিষ্যরা। অথচ শেষ ষোলোতে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকার জিতে পেনাল্টি জুজু ঠিকই তাড়িয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। যে কারণেই এবার সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ফেবারিট ছিল কেন-স্টার্লিংরা। কিন্তু সেই পথে খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারল না সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বরং ইংলিশদের বিদায় করে ইতিহাসের প্রথম ফাইনালে জায়গা করে নেন মডরিচ-মানজুকিচরা। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়ে চরম হতাশ ইংলিশ কোচ। যিনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব লাভের পর থেকেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নেন দারুণভাবে। তবে হারের কারণ হিসেবে অতিরিক্ত চাপকেই দায়ী করছেন তিনি। সেমিফাইনাল শেষে ইংল্যান্ডের পরাজয় নিয়ে সাউথগেট বলেন, ‘এই ম্যাচ ঘিরে আমাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ অনেক বেশি ছিল। এই মুহূর্তে আমরা সবাই পরাজয়ের ব্যথা বুঝতে পারছি। আমি সত্যিই চিন্তা করিনি যে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ব। কিন্তু আপনি যা একবার এ পর্যায়ে এসে যাবে তখন সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত। এ মুহূর্তে ড্রেসিং রুমের পরিবেশটা জটিল হয়ে গেছে।’ সাউথগেট এ সময় আরও বলেন, ‘আজকের রাতটা আমাদের জন্য একটা সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু আপনি কোন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। তবে আমরা অন্যদের মতো কোয়ার্টার, সেমি ও ফাইনালে খেলার সামর্থ্য রাখি। কারণ আমরা প্রমাণ করেছি এটা সম্ভব ছিল। কিন্তু অনেক দলই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোয়ার্টার ও সেমি থেকে বাদ পড়েছে।’ ইংলিশদের সামনে সুযোগ এখন তৃতীয় স্থানে থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ করার। তবে এই কাজটাও সহজ হবে না তাদের। কেননা শনিবার যে সেই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম। একযুগ পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের কাছে সেমিফাইনাল হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে বেলজিয়ামেরও। সেন্ট পিটার্সবার্গে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটি। সেই ম্যাচটা জিতে তাই বেলজিয়ামও চাইবে চতুর্থ না হয়ে একধাপ কমে থেকে নিজেদের দেশের বিমান ধরতে।
×