ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইংল্যান্ডের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন হ্যারি কেন

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৩ জুলাই ২০১৮

ইংল্যান্ডের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন হ্যারি কেন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবারই হয়তো বড় রকমের সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের। দলটিকে নিয়ে এবার কেউ কোন ধরনের আলোচনাই করেনি, অথচ ফাইনালে ওঠার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। আর এটা সম্ভব হয়েছিল রাশিয়া বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হ্যারি কেন তাদের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানোর সুবাদে। ৬ গোল করে এবার শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার তিনি। তবে সেমিফাইনালে তার সোনালি পায়ে ঝড় ওঠেনি, প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার জাল খুঁজে পায়নি হ্যারির শট! হেরে ১৯৬৬ সালের পর আবার ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু এই একঝাঁক তারুণ্যে ভরপুর ইংলিশ দলটিকে নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট হ্যারি। তিনি মনে করেন অনেকে ইংল্যান্ডকে বিবেচনায় না রাখলেও যতটুকু সাফল্য এসেছে তাতে করে ভবিষ্যতের জন্য মজবুত ভিত পেয়ে গেছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ২৪ বছর বয়সী এ তরুণ দাবি করেছেন ইংল্যান্ডের নতুন প্রজন্মের সবেমাত্র সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। ২৮ বছর পর আবার সেমিফাইনালে উঠে তাক লাগিয়ে দেয় ইংল্যান্ড। কারণ এবার ফেবারিটদের তালিকায় নামগন্ধও খুঁজে পাওয়া যায়নি দলটির। ওয়েন রুনির পর আর ইংলিশ দলে কোন সুপারস্টার নেই বলে এবার কেউ আলোচনা করেনি তাদের নিয়ে। কিন্তু সাবেক খেলোয়াড় সাউথগেট কোচ হিসেবে একেবারে নবীনদের নিয়ে ম্যাজিক দেখিয়েছেন। শেষ চারে উঠতে পেরেই অনেক সন্তুষ্ট ছিল ইংল্যান্ড। তবে শেষ চারের মঞ্চে ওঠার পর ফাইনাল খেলার রঙ্গিন স্বপ্নটাও ছিল। সেই স্বপ্ন হয়তো বাস্তবতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার কারণে। কিন্তু মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে দিনটা রঙ্গিন হলো না সাদা জার্সিধারীদের। থ্রি লায়ন্সকে বিদায় নিতে হয়েছে। তরুণ ফুটবলাররা মাঠেই দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছেন। এ বিষয়ে হ্যারি কেন বলেন, ‘আমরা নিঃশেষ হয়ে গেছি, এটা খুবই হৃদয় বিদারক, অনেক বড় আঘাত পেয়েছি।’ ইংলিশ এই তরুণ ফুটবলারদের কান্না অনেক মানুষকেই ছুঁয়ে গেছে। হ্যারি কেন ছাড়াও জেসি লিনগার্ড, জন স্টোনস, রাহিম স্টার্লিং, হ্যারি ম্যাগুইর, কাইরান ট্রিপিয়ার, এরিক ডায়ার, মারকাস র‌্যাশফোর্ডরা যেন মাঠ থেকে নড়তেই পারছিলেন না অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে হারের পর। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস, অনুপ্রেরণা সবই পেয়েছে তারা। এ বিষয়ে হ্যারি কেন বলেন, ‘অবশ্যই এটা অনেকক্ষণ ধরে আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল কষ্টের ধাক্কায়। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবেই মাথাটাকে উঁচু রাখতে পারিনি। চমৎকার একটি যাত্রা ছিল। যে কারও কল্পনার বাইরে আমরা এগিয়ে গেছি।’ টানা দুই ম্যাচে হ্যারি কেন নিষ্প্রভ ছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে সর্বশেষ গোলটি করেছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালেও পারেননি, সেমিতেও পারলেন না। শেষ চারের লড়াইয়ে বরং হ্যারি কেন একেবারেই অচেনা ছিলেন। তার সেই আগের ঝড় দেখা যায়নি। এরপরও ৩ ম্যাচেই হ্যাটট্রিকসহ ৬ গোল পাওয়া কেনের এই নিষ্প্রভতাই হয়তো বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিল ইংলিশদের। গোল্ডেন বুট পাওয়ার ক্ষেত্রে তার কাছাকাছি আপাতত কেউ নেই। তবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে একটা সুযোগ আছে ৪ গোল করে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকুর বড় সুযোগ আছে তাকে ছোঁয়ার। তবে এসব কিছু নিয়ে না ভেবে দলের পারফর্মেন্সে দারুণ খুশি হ্যারি কেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে এবার তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ দল নিয়ে খেলেছে ইংলিশরা। তারা ১৯৯০ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে সেমিতে উঠতে পেরেছে। এ বিষয়ে কেন বলেন, ‘আমরা দেখাতে পেরেছি যে আমরা এ ধরনের টুর্নামেন্টে অনেক ভাল করতে পারি। কিন্তু এখন লক্ষ্য অবশ্যই এ ধরনের বড় আসরে আবার সেমিফাইনাল খেলার জন্য ২০ বছরের বেশি অপেক্ষায় না থাকা। আবার আমরা সচেষ্ট থাকব নিজেদের স্বপ্ন পূরণের জন্য। খেলা শেষ হওয়ার পরও ব্রিটিশ ফুটবলভক্ত-সমর্থকরা দীর্ঘক্ষণ গ্যালারিতেই অবস্থান করেছেন। আর এবার দেশেও আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছেন এই তরুণ ফুটবলাররা। কেন বলেন, ‘এটা বিশাল ব্যাপার যে খুব ভাল একটা টুর্নামেন্ট গেছে আমাদের এবং জাতির গর্বটাকে আমরা ফিরিয়ে এনেছি। ভক্তরা আমাদের খেলা দেখার জন্য অনেক বেশি উদগ্র হয়ে থেকেছেন সবসময়। আর সে কারণেই আমরা উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পেরেছি।’ ভবিষ্যতের জন্য এ দলটির কাছ থেকে অনেক সাফল্য পাওয়ার আশা হ্যারি কেনের। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে আমরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছি। এ কারণেই হয়তো আমরা পরাজিত হওয়ার পরও ভক্ত-সমর্থকরা গান গেয়েছেন। এটা অবশ্যই অনেক গর্বিত হওয়ার একটা অনুভূতি। আমার মনে হয় আমরা অনেক বেশিই ভাল করেছি এবং ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত যেতে পারব। কিন্তু আমরা সামান্য পিছিয়ে পড়েছি। বড় ম্যাচে ক্ষুদ্র ব্যবধানে হেরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা যতটা পেরেছি কঠোর পরিশ্রম করেছি। কিন্তু আমার মনে হয়, এখনও কিছু বিষয় আছে যেখানে আমাদের ভাল করার সুযোগ রয়েছে। আমরা সবাই অনেক দুঃখিত যে এখানে ও দেশে যেসব ভক্ত আছেন তাদের ফাইনাল উপহার দিতে পারলাম না। কিন্তু আমরা এখানকার এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যেতে সচেষ্ট থাকব। আমরা আরও ভাল কিছু চাই।’
×