ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রফির হাতছানি ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্মের

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৩ জুলাই ২০১৮

ট্রফির হাতছানি ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্মের

জিএম মোস্তফা ॥ দুই দশক আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই বাজিমাত করেছিল তারা। এর পরের সময়টাতে আর পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বলকান অঞ্চলের দেশটি। তবে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার চমকপ্রদ পারফর্মেন্স দেখল গোটা ফুটবল দুনিয়া। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বুধবার সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের জয়রথকেও থামিয়ে দিল মডরিচ-মানজুকিচরা। আর তাতেই প্রথমবারের মতো স্বপ্নের বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে জøাতকো ডালিচের শিষ্যরা। সেমিফাইনালের বাধা অতিক্রম করে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছে গোটা ক্রোয়েশিয়া। দলের কোচ জøাতকো ডালিচও রোমাঞ্চিত। ম্যাচের শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘চমৎকার এক জয় তুলে নিয়েছি আমরা। দুইজন খেলোয়াড় তো অর্ধেক পা নিয়েই খেলেছে কিন্তু এটা দেখার বিষয় নয়। অতিরিক্ত সময়েও দলের সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলেছে। কেউ চায়নি মাঠ ছেড়ে বদলি খেলোয়াড়কে সুযোগ করে দিতে। এতেই নিজেদের বৈশিষ্ট্যটা ফুটে ওঠে। এটা আমাকে সত্যিই গর্বিত করে যে, ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়েনি কেউ।’ শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল ডেনমার্ক। সেই ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ফলাফল না আসায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু ১২০ মিনিট খেলার পরও দুই দলের সমতায় থাকায় ম্যাচ চলে যায় টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শূটআউটে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটে মডরিচ-মানজুকিচরা। শেষ আটেও একই চিত্রনাট্য। রাশিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকার জিতেই সেমিতে ওঠে ক্রোয়েশিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের ম্যাচটি অবশ্য টাইব্রেকারে যায়নি। তবে অতিরিক্ত সময়ে গড়িয়েছে ঠিকই। হিসেব কষে দেখা যায় ফ্রান্সের চেয়ে ৯০ মিনিট বেশি খেলেছে এবারের বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া। যে কারণেই ক্রোয়েট খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রান্তের বিষয়টি ফাইনালের আগে বড় করে দেখছেন অনেক ফুটবলবোদ্ধাই। তবে ডালিচ এসব ক্লান্তিটান্তি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। বরং ফাইনালেও তার দল সেরাটা ঢেলে দিয়েই খেলবে বলে তার বিশ্বাস। এ প্রসঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার কোচ সাফ জানিয়ে দেন যে, ‘আমরা ফাইনালে খেলার প্রস্তুতি নিয়ে এখানে এসেছি, ফাইনাল ম্যাচ ভালভাবেই খেলতে চাই। অতিরিক্ত সময়ে খেলা কিংবা ফ্রান্সের হাতে অতিরিক্ত একটি দিন আছেÑ এসব কোন সমস্যা হতে পারে না। আমাদের এমনভাবে খেলতে হবে যেন আমরা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছি।’ বিশ্বকাপের একুশতম আসর শুরুর আগে থেকেই ফেবারিটের তকমাটা মাখানো ছিল ক্রোয়েশিয়ার। মূলমঞ্চেও তা প্রদর্শন করেছে ডালিচের শিষ্যরা। গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের সবকটি জয় পায় তারা। সেই সঙ্গে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকেট নিশ্চিত করে ক্রোয়েটরা। শেষ ষোলোতে ডেনমার্ক, কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিক রাশিয়া আর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মারিও মানজুকিচ, লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচের মতো খেলোয়াড়রা। তবে অধিনায়ক লুকা মডরিচের কথা আলাদা করেই বলতে হয়। দলকে দারুণভাবে টেনে তুলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের এই ক্রোয়েশিয়ান তারকা। তবে লুকা মডরিচ ক্ষেপেছেন ব্রিটিশ গণমাধ্যমের ওপর। ম্যাচের শেষে তিনি বলেন, ‘কিছু সাংবাদিক ও প-িতরা টেলিভিশনে এই ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের ক্লান্ত বলে সমালোচনা করেছেন; তারা আমাদের চলন্ত অথচ মৃত বলেছেন। তাদের আরও নম্র আর শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত ছিল।’ মডরিচ এ সময় আরও বলেন, ‘সেমিফাইনাল জেতাটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। এটা আমাদের কাছে তথা পুরো ক্রোয়েশিয়ার কাছেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ার মতো বিষয়। এই বিশ্বকাপের আগে কেউ আমাদের সুযোগ দেয়নি। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে আমাদের মান, ইচ্ছা, একতা এবং লড়াই করার মানসিকতা মিলে আজ আমরা ফাইনালে।’ আগামী ১৫ জুলাই রবিবার অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে শক্তিশালী দুই দলই দারুণ আত্মবিশ্বাসী। তবে ক্রোয়েশিয়া পারবে কী তাদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে? নাকি ক্রোয়েটদের থামিয়ে ১৯৯৮ সালের পর আবার শিরোপা জয়ের উল্লাসে ভাসবে ফ্রান্স? গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
×